কম বয়সে বিয়ের চেষ্টা ভুল, বুঝেছেন দম্পতি
কটা ভুল সিদ্ধান্ত। আর তার জেরেই দু’বছর ধরে দুই পরিবারের উপর দিয়ে হয়ে গেল ঝড়!
১৬ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যে ভুল হয়েছিল, ১৮ বছর পেরিয়ে বিয়ে করার পরেও সেই আফশোস যাচ্ছে না দেবিকা দিগরের। রবিবার বাঁকুড়ার একটি বেসরকারি হোমে দেবিকার সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর সেই প্রেমিক অমলকুমার আড়ির। স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েই দেবিকা বলছেন, “নেহাত আবেগের বশে নেওয়া ওই সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের সবারই বিরাট ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।” আর অমল বলছেন, “বিয়ে করার জন্য নাবালিকা প্রেমিকাকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া যে অপরাধ তা জানতাম না। এখন বুঝতে পারছি সে দিন বড্ড ভুল করেছিলাম।”
কোতুলপুর থানার খয়রাবনি গ্রামে দেবিকার বাড়ি। পাশের কোয়ালপাড়ায় অমলের বাড়ি। বছর কয়েকের প্রেমের সম্পর্ক। জানা জানি হতে দেবিকার বাড়ির লোকেরা এই সম্পর্ক নিয়ে বেঁকে বসেন। ২০১১ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েই অমলের হাত ধরে বাড়ি ছাড়ে ১৬ বছরের দেবিকা। তাঁরা আশ্রয় নেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। অমল জানান, এরপর থেকেই ভুলের খেসারত দেওয়া শুরু হয়। দেবিকার বাপের বাড়ির লোকজন অমল ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে থানায় নাবালিকা মেয়েকে অপহরণ করার অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অমলের বাবা মদনমোহন আড়িকে গ্রেফতার করে। অমলের মা ও দুই দাদা পুলিশের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপন করেন।
বিয়ের পরে অমল ও দেবিকা।—নিজস্ব চিত্র।
মদনমোহনবাবু মাস দুয়েক জেল খেটে বাইরে বের হলে অমলকে গ্রেফতার করা ও দেবিকাকে উদ্ধার করার জন্য পুলিশের চাপ বেড়ে যায়। অমল ধরা পড়ে। আদালতের নির্দেশে দেবিকার ঠাঁই হয় একটি হোমে। বিষ্ণুপুর, বর্ধমান ও বাঁকুড়ার হোমে ঘুরতে ঘুরতে দেবিকা বুঝতে পারেন তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। দেবিকা বলেন, “অমলকে নিয়ে খুব দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। সেই সঙ্গে সব ঘটনা জানা জানি হওয়ায় লজ্জা, দুঃখে, ভয়ে কেমন যেন হয়ে পড়েছিলাম। সন্তান জন্মের আগেই ভ্রণ অবস্থায় নষ্ট হয়ে যায়। আবেগের বশে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সব সময় খুব মনকষ্টে থাকতাম।” নববধূর চোখে ঘনিয়ে আসে বিষাদের ছায়া।
দুই পরিবার অবশ্য ঝড়-ঝাপটার কথা এখন ভুলে যেতে চান। অমলের বাবা মদনমোহনবাবু বলেন, “ছেলে ভুল করেছিল। তার জন্য আমরা অনেক কষ্ট পেয়েছি। বিয়ের পরে বউমা ও ছেলেকে বাড়ি নিয়ে এসেছি। এখন চাই ওরা শান্তিতে সংসার করুক।” আর দেবিকার বাবা স্বদেশ দিগর বলছেন, “যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এখন ওরা ভাল থাকুক, এটাই চাই।” একই সঙ্গে সতর্ক গলায় বলেন, “দেবিকার মতো একই ভুল করে অনেক নাবালিকাই। ওঁদের জন্য এখন ভয় করে।”
বাঁকুড়া শহরের কেঠারডাঙার যে হোমে দেবিকার বিয়ে হল, সেখানকার সম্পাদক সত্যেন্দ্রনাথ সামন্ত-র মতে, “প্রাপ্ত বয়সের আগেই পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার ঘটনা ইদানিং বেড়ে গিয়েছে। গত বছরেই এই ধরনের চার জন নাবালিকাকে আমাদের হোমে পাঠানো হয়েছিল। এ বছর দু’জন এসেছে।” তিনি জানান, দেবিকা তাঁর প্রেমিককে ফিরে পেলেও হোম থেকে ফেরার পরে অনেকে আর প্রেমিকের দেখা পান না। গত দু’বছরে এখানকার ছ’জন কিশোরীর মধ্যে দু’জনের বিয়ে হয়েছে। বাকি চার কিশোরীর কী হয়েছে জানা যায়নি। বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “প্রাপ্তবয়স্ক না হলে বিয়ে করা যে অবৈধ তা আরও প্রচার করা হবে।” ঘরকন্নার মাঝে এই কাজটাই করতে চান অমল-দেবিকা। তাঁদের কথায়, “আমাদের মতো আর কেউ যাতে এ ভুল না করে, তা আমরা সবাইকে জানাব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.