এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটা পাকা সেতুর। বিভিন্ন জায়গায় বহুদিন ধরেই এই দাবি নিয়ে দরবার নিয়ে করেছেন তাঁরা। শেষ অবধি আর্জি পৌঁছেছিল সরকারের কানে। হয়েছিল এলাকা পরিদর্শন, বিধায়ক তহবিল থেকে মঞ্জুর হয়েছিল অর্থ, মহা সমারোহে করা হয়েছিল শিলান্যাস। কিন্তু ওই পর্যন্তই। গ্রামে ঢোকার রাস্তায় শিলান্যাসের সলেই ফলককে ডাইনে রেখে আজও পুরনো বাঁশের সাঁকো দিয়েই বাওড় পারাপার করছেন উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থানার রাঘবপুর গ্রামের মানুষ।
বাগদা থানার সিন্দ্রানী গ্রাম পঞ্চায়েতের রাঘবপুর গ্রামে ঢুকতে গেলে পার হতে হয় রাঘবপুর বাওড়। বাওড়ের উপর পারাপারের উপায় বলতে একমাত্র বাঁশের সাঁকো বহু ব্যবহারে জীর্ণ। ৩০ মিটার লম্বা, ২.২৫ মিটার চওড়া এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন ভ্যানরিকশা, মোটরসাইকেল-সহ অসংখ্য গ্রামবাসী। রাঘবপুর গ্রামের বাসিন্দা রাকেশ দাস সিন্দ্রানী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। রোজ স্কুলে যাওয়ার জন্য সাঁকো পার হয়ে এসে সিন্দ্রানী কালিতলা থেকে বাস ধরে। তার কথায়, “আমার মতো সবাইকেই সাঁকো পার হয়ে আসতে হয়। সাঁকোর অবস্থা ভাল নয়। খুব ভয় করে।” |
রাঘবপুর গ্রামের বাপি বারুই কুরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে। তার কথায়, “আমাদের গ্রামে প্রায় ২৫০টি পরিবারের বাস। তিনটি প্রাথমিক স্কুল ছাড়া গ্রামে আর কিছুই নেই। যে কোনও কাজেই এই সাঁকো পার হয়ে সিন্দ্রাণী আসতে হয়।” আর এক বাসিন্দা ভোলানাথ বিশ্বাস বলেন, “আমরা ছোটবেলায় নৌকা করে পারাপার করতাম। পরে পঞ্চায়েত থেকে সাঁকো করে দেওয়া হয়েছিল। তবে গাড়ি চলাচল করে না। কোনও রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার দরকার হলে আরও ৪ কিলোমিটার ঘুরে দত্তপুলিয়া কুঠিবাড়ি হয়ে আসতে হয়।”
গ্রামবাসীদের দাবি, সাঁকোটির দ্রুত মেরামত প্রয়োজন। বাঁশের সাঁকো দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় চাষের সবজি, ফসল নিয়ে ঘুরপথে বাজারে যেতে হয়। এর ফলে খরচ বেড়ে যায়।” তাঁদের অভিযোগ, ঘটা করে শিলান্যাস হলেও কাজ শেষ করতে প্রশাসনের উদ্যোগ নেই।
রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের বিধায়ক তহবিলের টাকায় উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পে বরাদ্দ হয়েছিল ৩৯ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯৯৭ টাকা। কিন্তু প্রকল্প রূপায়ণ এখনও শম্বুকগতিতে চলছে। যদিও উপেনবাবুর দাবি, “কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। বর্ষায় বাওড়ে জল বেড়ে যাওয়ায় কাজে সমস্যা হচ্ছে।” |