ধর্ষণের পরে ওরা অনেক দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও লোকলজ্জায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বাড়ির বাইরে কেউ বার হচ্ছিল না। পুলিশ ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করলেও ধর্ষিতারা কেমন আছে? তারা কী অবস্থায় আছেন? তা কেউ খোঁজ করেননি বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় ওই তিন ধর্ষিতা একঘরে হয়ে জীবন কাটাচ্ছিল বলে অভিযোগ। তাঁদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে নিরাপদ ও সুস্থ জীবনের ব্যবস্থা করতে এগিয়ে এসেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের ধর্ষণ, নারী পাচার ও নারী নিযার্তন রুখতে বিশেষ টাস্ক ফোর্সের চেয়ার পার্সন শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী।
শনিবার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও রাজ্যের পযর্টন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে পুরাতন মালদহ, হবিবপুর, বামনগোলায় তিন ধর্ষিতা নাবালিকার বাড়িতে তিনি যান। শ্রীরূপাদেবী বলেন, “তিন জনের বাড়ি গিয়ে যা দেখলাম তা ভয়াবহ। তিন নাবালিকাই মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছে। ওদের চিকিৎসক দেখানো দরকার। স্কুলেও যাচ্ছে না কেউ। জেলা পুলিশ সুপার এবং জেলা শাসককে তাদের অন্য স্কুলে ভর্তির কথা বলা হয়েছে।” তিনি জানান, তিন জন কেমন থাকছে দেখে প্রশাসনকে নিয়মিত রিপোর্ট দিতে বলেছি।
পুরাতন মালদহ স্টেশনের কাছে ১০ বছরের তৃতীয় শ্রেণির নাবালিকার মুখ থেকে তার উপর নিরাপত্তারক্ষীর অত্যাচারের কথা শুনে চোখে জল এসেছিল চেয়ারপার্সন শ্রীরূপাদেবী। ঘটনাটি দুই মাস আগের। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করালেও তাঁর সঙ্গীদের ভয়ে তিন মাস ধরে সে স্কুলে যেতে পারছে না। বাইরে কোথাও রেখে মেয়েকে পড়ানোর সামর্থ্য নেই ওই ধর্ষিতার দরিদ্র পরিবারটির। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে শ্রীরূপাদেবী বলেন, “হোমে রেখে নয়, মালদহ শহরে একটি স্কুলের হস্টেলে রেখে নাবালিকা ও তার দুই ভাইকে পড়াশুনা করানোর ব্যবস্থা করুন।”
২ জুলাই স্কুল থেকে বাড়ি থেকে ফেরার পথে কেন্দপুকুর হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে এক যুবক ধর্ষণ করেছিল। কিছুদিন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বাড়ি ফিরে এখন সে ঘরবন্দি। লজ্জায় স্কুল যেতে পারছে না। শ্রীরূপাদেবীকে পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটি বলে, আমি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে চাই। জেলাশাসককে বলে ওই নাবালিকার অন্য একটি স্কুলে ভর্তি ব্যবস্থা করেন শ্রীরূপাদেবী। ৩ মাস আগে বামনগোলা এলাকায় ১১ বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে ২৪ দিনের মধ্যে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে আদালত। এ দিন ওই নাবালিকার হাতে একটি সাইকেল তুলে দেন টাস্ক ফোর্সের চেয়ারপার্সন।
জেলায কত ধর্ষিতা কী অবস্থায় আছেন, জেলা পুলিশ ও প্রশাসনকে ৯০ দিনের মধ্যে সেই রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শ্রীরূপাদেবী। তিনি বলেন, “ওই তিনটি পরিবারেই শৌচাগার নেই। শৌচাগার তো বটেই তাদের ইন্দিরা আবাস যোজনায় ঘর করে দিতে বলা হয়েছে।” রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী এ দিন বলেন, “অত্যাচারিতদের পাশে যাতে প্রশাসন বা সরকার থাকে তা দেখা হবে।” জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার জানান, তিনজনের পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি খেয়াল রাখা হবে। |