দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জনসাধারণের অসুবিধা করে এনবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ বালুরঘাট বাস স্ট্যান্ড থেকে বালুরঘাট ভবনের পাশে পরিত্যক্ত এফসিআই গুদাম প্রাঙ্গণে সরে গেলন এবং সরে যাওয়ার সময় জনসাধারণকে আশ্বাস দিলেন নতুন বাস স্ট্যান্ডটির যথাযথ উন্নয়ন করবেন ও উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলবেন। বামফ্রন্টের ৩৪ বছর শাসনকালে এই বাস স্ট্যান্ডটির তেমন কোনও উন্নয়ন হয়নি। যাত্রীদের বসার ভাল জায়গা নেই। ভাল শৌচাগার নেই। যথেষ্ট আলোর ব্যবস্থা নেই। বাস স্ট্যান্ডটি গ্রীষ্মে ধূলি ধুসরিত ও বর্ষায় কর্দমাক্ত। শীতের সময় খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে শীতার্ত হওয়া ছাড়া অন্য কোনও ব্যবস্থা নেই। অথচ বালুরঘাট ডিপো এক সময় লাভজনক ছিল। এই ডিপোর বাসগুলি জরাজীর্ণ ও ঠিকমতো গন্তব্যস্থলে পৌঁছয় না। রকেট বাসগুলি পরিষ্কার করা হয় না। সংস্থা পয়সা উপার্জন করে কিন্তু যাত্রী পরিষেবার দিকে তাকায় না। বালুরঘাট ডিপোর অবস্থা শোচনীয়। বালুরঘাট ডিপোর কর্তাই বা কে? তার ভূমিকা বা কী কেউ তা জানে না। শোনা যায়, নিগমের মূল অফিস কোচবিহারে কাজ হয় না। কর্তারা যে যার ধান্দায় ব্যস্ত। কারও প্রমোশন, কারও পুরস্কার এই নিয়েই দিন কাটে কর্মীদের। অযত্নে বাসগুলি খারাপ হয়ে যায় ও সংখ্যায় কমে। ট্রিপ ছাটাই হয়। সংস্থার কাছে বালুরঘাটের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে আমার তিনটি দাবি:
১) বালুরঘাট ও শিলিগুড়ির মধ্যে আরও সুপার বাস চালু করা হোক।
২) কলকাতাগামী বাসগুলির দিকে দৃষ্টি দেওয়া হোক।
৩) কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ও উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের সঙ্গে একটি বাস চালু করা হোক।
জয়দীপ গুহ। বালুরঘাট।
|
বিশ্ব জুড়ে বর্তমানে প্রকৃতিকে বাঁচানোর জন্য দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করার লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। আমরাও মাঝে মাঝেই জুন মাসের প্রথম দিকে দু’একটা গাছ লাগাই, শোভাযাত্রায় সেজেগুজে হাঁটি, আর সভা-সেমিনারে গিয়ে পরিবেশ বিষয়ক বক্তৃতা শুনে বিজ্ঞের মতো ঘাড় নেড়ে কত শপথ নিই যে, প্রকৃতি আমার মা। পরিবেশকে আমরা দূষণের হাত থেকে বাঁচাবই ইত্যাদি ইত্যাদি। তার পর নিয়ম করে সব ভুলে যাই। কারণ, ভুলে যাওয়া যে আমাদের জন্মগত অধিকার। না-হলে ডুয়ার্সের জঙ্গল চিরে চলে যাওয়া রেল লাইনে ট্রেনের ইঞ্জিনের ধাক্কায় যখন হাতি বেঘোরে মারা যায়, তার পর দু’এক দিন আমরা প্রতিরোধ-প্রতিবাদের ঝড় বইয়ে দিয়ে কেমন করে যেন সাইলেন্ট মোডে চলে যাই। নদীতে বিষ ছড়িয়ে দিয়ে ধরা মাছ বাড়িতে প্রতি দিন রসিয়ে রসিয়ে খাই। কিন্তু নদীতে ভেসে ওঠা মরা মাছের ছবি পরের দিন সংবাদপত্রের পাতায় যখন দেখি তখন একটা ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের আফটার শকের চেয়েও বেশি বিপর্যস্ত হই।
আমরা এটাই ভাবতে অভ্যস্ত যে, এই পৃথিবী শুধুমাত্র আমাদের। সৃষ্টির শুরুতে সবার জন্য এই সবুজ শ্যামল পৃথিবী অবাধ বিচরণভূমি ছিল। তার পর শুধু জ্ঞানের জোরে আমরা বাকি সব অবলা জীবদের তাদের বাস্তুচ্যুত করব এ কী ধরনের জ্ঞান বা শিক্ষা!
প্রায় প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললেই দেখা যায়, জঙ্গল সংলগ্ন লোকালয়ে ঢুকে পড়ে স্থানীয় মানুষের হাতে মার খেয়ে মারা যাচ্ছে বনের পশু। তার সঙ্গে গ্রামবাসীদের বিবৃতি, ওরা মাঝে মাঝে গ্রামে ঢুকে ফসল খেয়ে নেয় বা গবাদি পশু ধরে নিয়ে যায়। তাই এ বার বাগে পেয়ে সেই জন্তুকে বধ করা হল। সত্যিই উপযুক্ত শাস্তি। একবার উল্টো করে ভাবুন তো। ওদের বাস ভূমিতে আমাদের অবাধ বিস্তার। ওদের খাবার চলে যাচ্ছে আমাদের পাতে। তা হলে ওরা বেচারা যাবে কোথায়, খাবে কী? আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পশুপাখির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দাম এত বেশি যে, চোরাশিকারিদের হাতে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে বনের পশু।
এত কথা বলা এই কারণেই যে, মানুষের যে গুণটা থাকা আবশ্যিক, সেই মানবিকতা সত্যিই কি আমাদের আছে? নাকি যত আধুনিক হব আমরা ততই পরিবেশ, জীবজন্তুর প্রতি প্রেম হারিয়ে যাবে, পাল্টে যাবে দৃষ্টিভঙ্গি।
পরিবেশ বাঁচানোর কথা উঠলেই এসে যায় জলাভূমি বা জলাশয়ের কথা। কারণ জলাভূমি হল পরিবেশের ফুসফুস। উত্তরবঙ্গের দিঘির শহর বললে কোচবিহারের কথা মনে পড়ে। কিন্তু জলপাইগুড়ি শহরেও দিঘির সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। তবে হ্যাঁ, বলতে পারেন এগুলো সবই ডোবার চেহারা নিয়েছে। পুরসভার তরফে বছর কয়েক আগে এক বার এগুলোর সংস্কার করা হলেও এখনকার অবস্থা আর না-ই বা বললাম।
যাই হোক এবার অন্য কথায় আসা যাক। জলাভূমি বাঁচাতে হয়েছে আইন, তবু জলপাইগুড়ি শহরের ফণীন্দ্রনাথের বিদ্যালয়ের মাঠের কাছে জলাশয়টি ভরাট হয়ে যেতে বসছে। শিশুনিকেতন প্রাথমিক বিদ্যালয় কিংবা জলপাইগুড়ি ওয়েলফেয়ার ও ফণীন্দ্রদেব বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের সীমানা প্রাচীরের পূর্ব দিকে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে রয়েছে একটি জলাশয়। কচুরিপানায় ভরে যাওয়া এই জলাশয়ে সারা বছরই জল থাকে। এই জলাশয়ে দেখা মেলে নানা রকম মাছ, বিভিন্ন কীটপতঙ্গ, সাপ ইত্যাদির। আর আছে এই সব জলজ প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে বেঁচে থাকে এমন অনেক পাখি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই জলাশয়টির এক প্রান্তে কয়েক ট্রাক ভাঙা ইট, সুরকি, মাটি ফেলা হয়েছে। জলাশয়টিকে ভরাট করে তা গ্রাস করে নেওয়াটা যদি এর উদ্দেশ্য হয়, তা হলে কিন্তু অচিরেই হারিয়ে যাবে এই জলাশয়কে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা বিভিন্ন রকম প্রাণীদের ভবিষ্যত্। এরই পাশাপাশি, ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই এলাকার পরিবেশ, প্রকৃতি। তাই পরিবেশ দফতর, পুরসভা কর্তৃপক্ষ-সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমি আবেদন রাখছি যে, জলাশয় আর পরিবেশকে বাঁচাতে আপনারা অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
সন্দীপন রাহা, জলপাইগুড়ি। |