দীর্ঘদিন ধরে গঙ্গা নিয়ে পরিকল্পনার কথা হচ্ছে। কিন্তু ওই নদীর ব্যাপারে এখনও তেমন কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না-থাকায় পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশপ্রেমীদের আক্ষেপ। “বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা দীর্ঘদিন আগেই দেশে রিভার ম্যানেজমেন্ট বা নদী ব্যবস্থাপনা চালু করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তা শোনা হয়নি,” রবিবার কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে বললেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়।
পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে, গঙ্গার মতো দেশের উত্তরসীমা থেকে দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত বহমান নদীর দূষণ নিয়ন্ত্রণ আর জলজীবনের বৈচিত্র রক্ষা করাটা পরিবেশ বাঁচানোর অন্যতম মূল উপায়। অথচ গঙ্গায় ড্রেজিংয়ের আগে পরিবেশের উপরে তার কী প্রভাব পড়বে, সেটা খতিয়ে দেখা হয়নি বলে সুভাষ দত্তের মতো পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ। তাঁরা বলছেন, পরিবেশের কথা না-ভেবে ড্রেজিংয়ের ফলে মাছ-সহ গঙ্গার প্রাণীরা বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
পরিবেশবিদেরা জানান, ড্রেজিংয়ের আগে এলাকার জলজ প্রাণীদের দৈহিক গঠন, জল ও পলির মান, শব্দমাত্রা, নদীতটে রাসায়নিক ও ধাতুর উপস্থিতি এবং নদীর উপরে নির্ভরশীল পাখিদের তথ্য যাচাই করতে হয়। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড বা বিশ্ব বন্যপ্রাণ তহবিলের প্রাক্তন পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান শক্তিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গঙ্গার দূষণে শুশুকের মতো প্রাণী আগেই বিপন্ন হয়েছে। শঙ্খচিলের মতো পাখিও গঙ্গায় কম দেখা যাচ্ছে।”
সম্প্রতি গঙ্গা-সহ বিভিন্ন নদী নিয়ে দেশের সাতটি আইআইটি-কে দিয়ে সমীক্ষা করানো হয়েছে। কিন্তু সেই সমীক্ষার রিপোর্টেও ড্রেজিং ও পরিবেশ নিয়ে তেমন কিছু বলা হয়নি বলে পরিবেশবিদদের অভিযোগ। গঙ্গায় ড্রেজিংয়ের ফলে কলকাতা বন্দর এবং নদী-সমুদ্রের জীববৈচিত্র বিপন্ন হয়ে পড়ছে বলে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা দায়ের করেছেন সুভাষবাবু। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ সেই মামলায় কলকাতা বন্দর, কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও জাহাজ মন্ত্রককে হলফনামা জমা দিতে বলেছে।
সুভাষবাবু জানান, গঙ্গায় ড্রেজিং করার পরে সেই পলি ফেলা হচ্ছে মোহনার কাছে। ঢেউয়ের ধাক্কায় তা ফিরে আসছে নদীতে। সমস্যা হচ্ছে দেশের একমাত্র নদী-বন্দর কলকাতার। অনেক সময় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নদীপথও। একটি বেসরকারি জল পরিবহণ সংস্থার কর্তা জানান, কাকদ্বীপের কাছে অনেক সময়েই নৌ-চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। উন্নত দেশগুলিতে কী ভাবে ড্রেজিং হয়, তা শিখতে ১৫ অগস্ট বিদেশ যাচ্ছেন সুভাষবাবু। বাবাকে সাহায্য করতে সঙ্গে যাচ্ছেন অভিনেত্রী মেয়ে সায়নীও। ২০০৬ সালেও গঙ্গার দূষণ প্রতিরোধের উপায় শিখতে ব্রিটেন পাড়ি দিয়েছিলেন সুভাষবাবু। |