পোড়ো পিয়ার্সফিল্ডে ধুঁকছে ওয়ার্ডসওয়ার্থের স্মৃতি
পাহাড়ে ঘেরা ওয়াই নদীর সবুজ উপত্যকা। বলা হতো ‘গেট অফ ওয়েলস’। প্রকৃতির হাতে গড়া এই জলছবির টানে বারবারই সেখানে ছুটে যেতেন উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ থেকে স্যামুয়েল টেলর কোলরিজের মতো কবিরা। আর জন্ম নিত একের পর এক ‘মাস্টারপিস’!
এই ওয়াই ভ্যালিরই ‘পিয়ার্সফিল্ড হাউস’। ব্রিটিশ স্থপতি জন সোয়ানের নকশায় ১৭৮৫ সালে সুবিশাল অট্টালিকা তৈরি করেন জর্জ স্মিথ। অনেকেরই মতে পিয়ার্সফিল্ড হাউস ছিল নব্যধ্রুপদী (নিওক্লাসিক্যাল) সৃষ্টি। ইতিহাস বলে, এই পিয়ার্সফিল্ডেই হয়তো জড়িয়ে রয়েছে ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও কোলরিজের রোম্যান্টিক মুভমেন্ট।
আর এখন...সে নিতান্তই হতশ্রী ধ্বংসস্তূপ, পোড়োবাড়ি। তিন তলা অট্টালিকার বাইরের খোলসটুকুই শুধু আছে। ভিতরটা ফাঁপা। দেওয়ালগুলোয় ইটের হাড়পাঁজরা বেরিয়ে এসেছে। তার উপরে জংলি লতাপাতার ঘন বুনোট। পিয়ার্সফিল্ডে মানুষের আনাগোনা যে নেই, তা চেহারাতেই স্পষ্ট। দিনের বেলাতেই ঘন অন্ধকার, গা ছমছমে পরিবেশ। থামগুলো জড়িয়ে উঠেছে গাছের শিকড়। পিয়ার্সফিল্ডের ভিতর থেকে দেখলে, ১২৯ একর জায়গা জুড়ে যত দূর চোখ যেত সবুজ আর সবুজ। অ্যান্টিগুয়ার এক চিনিকলের মালিকের ছেলে ভ্যালেন্টাইন মরিসের চোখে পড়ে। সৌন্দর্যায়নের দায়িত্ব নিয়ে নেন তিনি। পরে অবশ্য কালের ফেরে মরিসের হাতেই চলে যায় গোটা সম্পত্তি। দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন জর্জ স্মিথ। বহু সাধের বাড়িটি বিক্রি করে দেন মরিসকে। তিনিও লুফে নেন সেই মহামূল্য সুযোগ।
কিন্তু পিয়ার্সফিল্ডের ভাগ্যও তার মালিকের মতোই। জর্জের মতো তার জৌলুসও দীর্ঘায়ু হয়নি। সাক্ষী তো বর্তমানই। মরিসও ধরে রাখতে পারেননি পিয়ার্সফিল্ডকে। শুধু তা-ই নয়, এর পর একের পর এক মালিকানা বদল। বাড়িটি ঘুরতে থাকে এক হাত থেকে অন্য হাতে। এ ভাবেই কেটে যায় দেড়শো বছর। আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
১৯৪৪ সাল। ওয়ার্ডসওয়ার্থের সাধের পিয়ার্সফিল্ড এ বার হয়ে ওঠে মার্কিন সেনার বিমানঘাঁটি। দিনরাত যুদ্ধবিমানের হুঙ্কার। তখনই হতশ্রী হতে শুরু করেছে অট্টালিকার অবস্থা। যুদ্ধশেষে আরওই ভগ্নদশা। বিশ্বযুদ্ধের পরে পিয়ার্সফিল্ডের ভাগ্যে জোটে নতুন মালিক। কোটিপতি ব্যবসায়ী ডেভিড ও সিমন রুবেন।
এই সেই পিয়ার্সফিল্ড হাউস।
দুই ভাই কখনও পিয়ার্সফিল্ডের পুরনো জৌলুস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেননি। সামান্য সারাই পর্যন্ত করেননি তাঁরা। পিয়ার্সফিল্ডের প্রতি কেন তাঁদের এত উপেক্ষা, অবহেলা জানা যায়নি। ইট-কাঠ-পাথরের পাঁজরে চাপা পড়ে রয়েছে রহস্য হয়ে। দু’বছর আগে লন্ডনের এক ব্যবসায়ী এডওয়ার্ড স্ট্র্যাচান কিনতে চেয়েছিলেন পিয়ার্সফিল্ড। ১০ লক্ষ পাউন্ডে রফা করতে চান এডওয়ার্ড। প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। পরে তিন গুণ বাড়িয়ে দেন অর্থের অঙ্কটা। লাভ হয়নি তাতেও। ৩০ লক্ষ পাউন্ডেও পিয়ার্সফিল্ড বিক্রি করতে রাজি হননি রুবেন ভাইরা।
সম্প্রতি পিয়ার্সফিল্ডকে বাঁচাতে পুনর্নিমাণের দাবি তুলেছেন লন্ডনের সংরক্ষণ-বিশেষজ্ঞরা। এক বিশেষজ্ঞ মার্কাস বিনি বলেন, “এডওয়ার্ডের প্রস্তাবটা দারুণ ছিল। পিয়ার্সফিল্ড সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ। জন সোয়ানের একেবারে শুরুর দিকের কাজ। তার উপর আবার টিউডর যুগ বা তারও আগের ছাপ রয়েছে এর স্থাপত্য নকশায়।” পিয়ার্সফিল্ডকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন মার্কাসের মতো অনেকে। তবে ওয়ার্ডসওয়ার্থের সাধের অট্টালিকার ভাগ্য ফিরবে কি না, তা অনিশ্চিত। সময়ই বলে দেবে সে কথা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.