কল খুললেই লাল জল। কখনও সঙ্গে পোকা, শ্যাওলা। পরিস্রুত পানীয় জল পেতে রীতিমতো জেরবার দাঁইহাটের একাংশ বাসিন্দা। তাঁদের অভিযোগ, বারবার কংগ্রেস পরিচালিত পুরকর্তাদের কাছে সমস্যা মেটানোর দাবি জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ময়লা জলই খাচ্ছেন তাঁরা। এছাড়া বিদ্যুৎ না থাকলে পানীয় জল সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে যায় বলেও তাঁদের দাবি। পানীয় জলের সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন পুরকর্তারাও।
শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছিলেন দাঁইহাট শহরের পুরপ্রধান সন্তোষ দাস। ওই এলাকার শ্রীকৃষ্ণ পল্লির বাসিন্দাদের অভিযোগ, পানীয় জলের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই পোকা, শ্যাওলা বের হয়। পুরপ্রধানকে সমস্যার কথা জানালেও কোনও সুরাহা হয়নি। এলাকার সুনীল মণ্ডল, মমতা মণ্ডলরা কলের মুখ থেকে লাল রঙের কাপড় খুলে নিয়ে বলেন, “কী রকম ময়লা দেখছেন। ছেঁকে নেওয়ার পরেও জলে ময়লা থাকে। কি করব! ওই জলই বাধ্য হয়ে খেতে হচ্ছে।” বাসিন্দাদের একাংশের আবার অভিযোগ, দাঁইহাট শহরের একটা অংশে খুবই সরু হয়ে জল পড়ে। এক বালতি জল ভরতে গিয়েই চলে যায় অনেকটা সময়। ফলে জল ভরা নিয়ে অশান্তি লেগেই থাকে। তাঁদের আরও দাবি, পুরসভার সরবরাহ করা পানীয় জল যে কোনও পাত্রে রাখলেই ঘোলাটে হয়ে যায়। ফলে কলের মুখে কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখেন তাঁরা। কাপড় ছাঁকনির কাজ করে।
শ্রীকৃষ্ণ কলোনির শেষ প্রান্তের বাসিন্দারা আবার টাকা দিয়ে পানীয় জল কেনেন। রাস্তায় পুরসভার কল থাকলেও তা পান করতে সাহস দেখান না কেউই। স্থানীয় বাসিন্দা চন্দনা মণ্ডল, সোনামনি বৈরাগ্য, আদুরি সরকারদের অভিযোগ, “রাস্তার কলের জল খেলে পেটের রোগ অনিবার্য। আমরা তাই প্রতিদিন বাধ্য হয়ে ২০ লিটার করে পানীয় জল কিনি। এর জন্য প্রতিদিন আমাদের ৩০ টাকা করে খরচ হয়।” রীতিমতো হতাশ হয়ে এলাকাবাসীরা বলেন, “আমাদের কথা কেউ শোনে না। পুরবাসী যাতে পরিস্রুত পানীয় জল পেতে পারে সে ব্যবস্থাও পুরসভা করতে পারছে না।” এছাড়া বিদ্যুৎ না থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। পানীয় জল সরবরাহ কার্যত বন্ধই থাকে বলে জানান এলাকাবাসীরা।
দাঁইহাটের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা শিক্ষক কালিদাস রায়ের ক্ষোভ, “পুরসভার কল থেকে পরিস্রুত জল বের হওয়ার বদলে ঘোলা জল বের হয়। পুরসভাকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। চিকিৎসেরা জানিয়েছেন ওই জল পেটে গেলে চর্মরোগ অবধারিত।” পুরসভার উপর ক্ষুব্ধ দাঁইহাট পুরসভার উপ-পুরপ্রধান তৃণমূলের স্বাধীনা নন্দীও। তাঁর কথায়, “পরিস্রুত পানীয় জল দেওয়ার জন্য পুরসভার বৈঠকে কত যে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু তার বাস্তব রূপ মেলেনি।” কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলর সুদীপ্ত রায় বলেন, “শহরের একটা বড় অংশে পুরসভার পানীয় জলের পাইপলাইন যায়নি। বাসিন্দাদের জল দিতে গিয়েই পুরসভা হিমশিম খাচ্ছে।” কাউন্সিলরদের অভিযোগ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পরামর্শ ছাড়াই শহরে পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ জল সরবরাহ করা হচ্ছে।
পুরপ্রধান সন্তোষবাবু বলেন, “আমরা রাজ্য সরকারকে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছিলাম। রাজ্য সরকার চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, ভাগীরথী জল শোধন করে বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহ করার প্রজেক্ট নিতে। আমরা তার সার্ভে করেছি। প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।” জলের সমস্যার কথা স্বীকার করে দাঁইহাট পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বে থাকা নির্দল কাউন্সিলর সমর চক্রবর্তী বলেন, “দাঁইহাট পুরনো শহর। এখানকার জল সরবরাহ ব্যবস্থাও পুরনো। পাইপগুলোতে ময়লা জমেছে। জলের গতিবেগ বাড়লেই ময়লা বের হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে পাইপগুলি পাল্টাতে হবে।” |