বাপি দাদাগিরি যা
তেরো বছর আগে জুন মাসের এক বিকেলে সেঞ্চুরি করে কামব্যাক করেছিলেন লর্ডসের মাঠে।
আবার ২০০৫-এ গ্রেগ চ্যাপেলের সঙ্গে সাঙ্ঘাতিক ঝামেলার পরে জোহানেসবার্গে ৫১ নট আউট থেকে করলেন স্বপ্নের কামব্যাক।
এ বার কামব্যাকের দিন ২৬ অগস্ট ২০১৩। ঠিক দু’সপ্তাহ পরে ‘দাদাগিরি ৪’ নিয়ে ফিরছেন তিনি।
তাঁর কাছের মানুষেরা বলছেন, খেলার সময় যেমন প্রত্যেকটা কামব্যাকের আগে অন্য মানুষ হয়ে যেতেন তিনি এ বারেও নাকি তা-ই হচ্ছে।
“বিশ্বাস করতে পারবেন না ওঁর কমিটমেন্ট লেভেলটা। আমার তো মনে হচ্ছে চুপি চুপি প্রচুর হোমওয়ার্কও করে নিচ্ছেন দাদা। এক্সারসাইজও শুরু করে দিয়েছেন। সে দিন আমাকে বলছিলেন: ‘আগে ক্রিকেটের জন্য এক্সারসাইজ করতাম। এখন শো-য়ের জন্য করতে হচ্ছে,”’ শনিবার দুপুরে বলছিলেন সৌরভের ‘দাদাগিরি’ অনুষ্ঠানের পরিচালক শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়।
খেলার সময় কামব্যাকের মোটিভেশনটা তো স্বাভাবিক ভাবেই অনেক স্ট্রং। কিন্তু টিভিতে কামব্যাক করার আগে এত মোটিভেশন কোথা থেকে পান ‘দাদা’? প্রশ্ন করি পরিচালককে।
“আরে কেন পাবে না। আজকে দাদা কিন্তু আন্তর্জাতিক টেলিভিশন সেলিব্রিটি। শেন ওয়ার্ন, নাসের হুসেনদের পাশে ধারাভাষ্য দেন। প্রথম দু’টো সিজনে দাদা স্টেপ আউট করেননি। কিন্তু এই সিজনে দাদা একেবারে বাপি বাড়ি যা মুডে আছেন। টেলিভিশন অ্যাঙ্করিংটা কোন পর্যায়ে যেতে পারে তার স্বাদ দাদা পেয়ে গিয়েছেন। যেহেতু ‘দাদাগিরি’ টিভিতে ওঁর প্রথম কাজ, সেই শো-টাকে কী ভাবে আরও ভাল করা যায়, সেটাই এখন ওঁর প্রধান লক্ষ্য।”
এক্সক্লুসিভ

দাদাগিরি ৪-এর স্পেশাল
ফোটোশ্যুটের ছবি
অ্যাঙ্কর হিসেবে সৌরভের এই অসম্ভব জনপ্রিয়তার ‘মন্ত্র’টা কী, সেই বিষয়েই কথা হচ্ছিল সিদ্ধার্থ বসুর সঙ্গে। জাতীয় টেলিভিশনের প্রায় সব বড় বড় রিয়েলিটি শো-য়ের মাথা তিনি। এই মুহূর্তে রয়েছেন কলম্বোয়। শোনা যায়, অমিতাভ বচ্চন থেকে শাহরুখ খান তাঁকে ‘গড’ বলেন। তাঁর কোম্পানি যে ক’টি শো প্রযোজনা করে, তার প্রত্যেকটির আগে তিনি নাকি পাঁচ মিনিটের একটি ব্রিফিং দেন স্টার হোস্টদের। বোমান ইরানির কথায়, “ওই ব্রিফিংটা শুনলে পাঁচ বছরের শিশুও টেলিভিশন অ্যাঙ্কর হতে পারবে।”
সেই সিদ্ধার্থ বসুও একমত, হোস্ট হিসেবে সৌরভ যে জনপ্রিয় হবেনই সেটাই স্বাভাবিক।
“যখন এ রকম কোনও ব্যক্তিত্বকে আমরা হোস্ট হিসেবে দেখি, সেই মানুষটার ব্যাকগ্রাউন্ডটা জানলে সুবিধে হয়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনটাই দেখুন। প্রচুর স্ট্রাগল ওর জীবনে। এই স্ট্রাগলটাই দর্শকের কাছে সৌরভকে এত জনপ্রিয় করে তুলেছে। মানুষের এই ভাললাগাটা যে কোনও হোস্টের প্রথম দরকার। সেটা হলে অর্ধেক ম্যাচ তো আপনি আগেই জিতে গেলেন। আর মানুষের ভালবাসাটা যে সৌরভের সঙ্গে রয়েছে, সেটা বললে নিশ্চয়ই কোনও প্রাইজ আপনি পাবেন না,” প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যে বলেন সিদ্ধার্থ।
কোনও দিন সৌরভের ‘দাদাগিরি’ দেখেননি। এমনকী ইউটিউবেও নয়। তবে মুম্বইতে বসে বোমান ইরানি শুনেছেন অ্যাঙ্কর হিসেবে সৌরভের সুনাম।
“সৌরভ ইজ আ লেজেন্ড। অনেক দিন ধরে ওর বিরাট ফ্যান আমি। আগে ক্রিকেটার সৌরভের ভক্ত ছিলাম, এখন কমেন্টেটর সৌরভের। কিন্তু রিয়েলিটি শো-য়ের হোস্ট হিসেবে যে ও দারুণ জনপ্রিয় সেটার আমি নিজে ফার্স্ট-হ্যান্ড অভিজ্ঞতা নিতে চাই। কেন যে আমাকে এখনও ডাকল না শো-তে!’’ নিজস্ব ইয়ার্কির ভঙ্গিতে শুরু করেন বোমান।
তার পর নিজেই বলেন তিনি কেন দেখতে চান ‘দাদাগিরি’।
“সৌরভ আমার কাছে প্রথমে একজন ক্রিকেটার। আমি যদি ‘দাদাগিরি’-তে যেতাম, ক্রিকেট মাঠের সব গল্প শোনাতে বলতাম ওকে। এমন গল্প যা আমি খবরের কাগজে পড়িনি, টিভিতে দেখিনি। এই ধরুন সবাই জানে সৌরভ ২০০১-এ স্টিভ ওয়-কে টসে দাঁড় করিয়ে রাখত। ‘দাদাগিরি’-তে আমি গেলে ওকে প্রশ্ন করতাম দেরি করে পৌঁছনোর পর স্টিভ কি কোনও দিন ওকে গুড মর্নিং বলেছে? এই জিনিসগুলো যে মানুষটার কাছে ইচ্ছে করলেই জানা যায়, যার জীবন এত লোকের কাছে অনুপ্রেরণা, সে হোস্ট হিসেবে সফল হবে না তো কে হবে বলুন!” বলেন ‘ভিরু সহস্রবুদ্ধে’।
‘দাদাগিরি’র চতুর্থ সিজনের ফরম্যাটে অবশ্য কোনও বদলই হচ্ছে না। “ফরম্যাটে কোনও বদল আনছি না আমরা কারণ প্রত্যেকটা রাউন্ড দর্শকদের এত প্রিয় যে, আমরা সেগুলো বদলাতে চাইনি। শো শুরু হবে ২৬ অগস্ট থেকে, সোম থেকে বুধ, সন্ধে সাড়ে ন’টা থেকে। রাজারহাটের স্টুডিয়োতে সৌরভ শ্যুটিং শুরু করছেন ১৮ অগস্ট থেকে,” বলছিলেন এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট অব জি বাংলার বিজনেস হেড সুজয় কুট্টি।
তাঁর কাছ থেকেই জানা গেল এই প্রথম বার শো-য়ের জন্য অন-গ্রাউন্ড প্রোমোশনের ব্যাপারে রাজি হয়েছেন দাদা। “শো শুরু হওয়ার একদিন আগে, ২৫ অগস্ট সাউথ সিটি মল-এ বিকেল চারটে থেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ‘মক দাদাগিরি’ খেলবেন সৌরভ,” জানাচ্ছেন সুজয়।
দাদা যে অ্যাঙ্কর হিসেবে এত সফল হবেন, তার একটা অন্য কারণও দেখছেন ‘দিদি নম্বর ওয়ান’য়ের জনপ্রিয় অ্যাঙ্কর রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর ব্যাখ্যায়, “আরে, অ্যাঙ্করিং তো আমরা করি। সারা দিন পেট ব্যথা হয়ে যায় আমাদের কথা বলতে বলতে। সৌরভ এখানেই আলাদা। ও অ্যাঙ্করিংটাই করে না। ও যা, তাই থাকে শো-তে। আর দেখুন আমরা অভিনেতা। আমরা জানি কোনখানে কী বললে লোকে ঠিক প্রতিক্রিয়া জানাবে। কিন্তু সৌরভ অভিনেতা না হয়েও এটা করতে পারে কারণ ওকে দেখলেই তো মানুষ গলে যায়। আর দাদার ফ্যান হিসেবে বলছি, সেটা দাদা সব চেয়ে ভাল জানে। বাট হি ইজ ভেরি ভেরি গুড,” বলছিলেন রচনা।
যেহেতু সৌরভ, তাই ক্রিকেটের প্রসঙ্গ আসবে না, তা কী করে হয়! সৌরভের অ্যাঙ্করিং-এর সঙ্গে ক্রিকেটের যে একটা যোগসূত্র আছে এবং সেটাই যে তাঁর সাফল্যের প্রধান কারণ, এমনটাই ভাবেন সিদ্ধার্থ বসু।
“অধিনায়ক হিসেবে আমরা সৌরভকে দুর্দান্ত মনে করি কেন? তার কারণ সৌরভ ওয়াজ কুইক ইন থিঙ্কিং অন হিজ ফিট। হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোনও পরিস্থিতিতে ওর মাথাটা পরিষ্কার থাকত। এটাই অ্যাঙ্করিং-য়ের প্রধান মন্ত্র। লাইভ টেলিভিশনে যে কোনও সময় যা ইচ্ছে হতে পারে। দর্শক আপনাকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে পারে, আপনাকে নিয়ে কোনও জোক বলতে পারে। সফল অ্যাঙ্কর সে-ই হয়, যে এই পরিস্থিতিগুলো সামলাতে পারে। সৌরভ ক্যাপ্টেন্সিতেও এটা করতো। অ্যাঙ্করিংয়ে তো করবেই। লর্ডসেও কভার ড্রাইভ। টিভির পরদাতেও,” বলছেন সিদ্ধার্থ।
কামব্যাকের মঞ্চ তৈরি। অ্যাঙ্করিংয়ের ‘নেট’ প্র্যাকটিসেও দেখা গিয়েছে সেই সৌরভোচিত দৃঢ়তা। প্রথম দু’টো সিজনের থেকে এ বার দাদা অনেক বেশি তৈরি। আর শোনা যাচ্ছে, এ বার প্রথম বল থেকেই নাকি স্টেপ আউটের মেজাজে তিনি।
সাধে কি আর লোকে বলছে, ‘বাপি দাদাগিরি যা’!


অধিনায়ক হিসেবে আমরা
সৌরভকে দুর্দান্ত মনে করি কেন?
তার কারণ, সৌরভ ওয়াজ কুইক
ইন থিঙ্কিং অন হিজ ফিট। এটাই
ওর অ্যাঙ্করিং-য়ের প্রধান মন্ত্র


অ্যাঙ্করিং তো আমরা করি।
সারা দিন পেট ব্যথা হয়ে যায়
আমাদের কথা বলতে বলতে।
সৌরভ এখানেই আলাদা।
ও অ্যাঙ্করিংটাই করে না


‘দাদাগিরি’-তে আমি গেলে
ওকে প্রশ্ন করতাম, দেরি করে
পৌঁছনোর পর স্টিভ ওয়
কি কোনও দিন ওকে
গুড মর্নিং বলেছিল?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.