বাবার দোকানের এক পাশে বসে কম্পিউটারে গান ‘ডাউনলোড’ করছিলেন এক যুবক। হঠাৎই সেখানে হাজির জনা চারেক ব্যক্তি। ওই যুবককে তাঁরা বললেন, কম্পিউটার থেকে মোবাইলে গান ভরে দিতে। যুবকটি তড়িঘড়ি গান ভরতেই তাঁকে পাকড়াও করে ফেললেন আগন্তুকেরা। চলে এল পুলিশও। ওয়েবসাইট থেকে বেআইনি ভাবে গান ডাউনলোড করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল ওই যুবককে। বাজেয়াপ্ত করা হল তাঁর কম্পিউটার, ডেটা কেব্ল, মেমরি চিপও।
সাইবার জগতে গান চুরি (মিউজিক পাইরেসি) ঠেকাতে এ ভাবেই গত কয়েক মাস ধরে কলকাতা এবং জেলাগুলিতে তল্লাশি-হানা চালাচ্ছে সঙ্গীত ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি’ (আইএমআই)। সংগঠনের মহাসচিব স্যাভিও ডি’সুজা জানান, গত বছর মার্চ মাসে নদিয়ার শান্তিপুরে হানা দিয়ে তরুণ বিশ্বাস নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু পরবর্তী কালে তরুণ আইএমআই-এর কাছে আবেদন করে গান ডাউনলোডের লাইসেন্স নেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও তুলে নেয় ওই সংগঠন। তাদের দাবি, তরুণই ধরা পড়া প্রথম ব্যক্তি, যিনি আবেদন করে লাইসেন্স নিয়েছেন।
কিন্তু কেন এত ধরপাকড়? সংগঠনের কর্তারা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তারের ফলে সাইবার জগতে গান চুরি বেড়ে গিয়েছে। শহর ও জেলার অলি-গলিতে ছোট-ছোট দোকান খুলে যুবকেরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে গান ডাউনলোড করে নিচ্ছেন। সেখান থেকে সাধারণ মানুষ নিজের মোবাইল বা মিউজিক প্লেয়ারে গান ভরছেন। বাজারে আসল সিডি-র দাম ১০০-১৫০ টাকা। তাতে আট থেকে দশটি গান পাওয়া যায়। কিন্তু এই সব চোরাই গানের বাজারে ৩০-৪০ টাকায় ২ গিগাবাইট (কয়েকশো গান) মিলছে। শুধু তা-ই নয়, ওই গান একটি সিডিতে ভরে বিক্রিও করছেন অনেকে।
আইএমআই কর্তাদের দাবি, চোরাই গানের ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতেই বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। জেলা ও মহানগরে কয়েক জন প্রাক্তন পুলিশকর্তার নেতৃত্বে বিশেষ তল্লাশি দল তৈরি হয়েছে। সংগঠনের কর্তাদের দাবি, এই পদ্ধতিতে গান চুরি ঠেকাতে অনেকটাই সফল হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু গান-চুরির অভিযোগে একদা ধৃত তরুণ বিশ্বাসের দাবি, প্রকাশ্যে এখনও অনেকেই এই ব্যবসা করছেন। কিন্তু তাঁদের কেউ কিছু বলছে না। আদতে কতটা নজরদারি চালানো হচ্ছে, তা নিয়েও সন্দিহান ওই যুবক। জবাবে আইএমআই-এর বক্তব্য, বিভিন্ন জেলায় নিয়মিত নজরদারি রয়েছে। আইএমআই সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে প্রতি মাসে গড়ে গান চুরির ৩০-৪০টি অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়। গড়ে ১০-১৫ জনকে গ্রেফতারও করা হয়। বাকিদের সঙ্গে সমঝোতা হয়ে যায়।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় এখন ঘরে ঘরে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। ফলে যে কেউ ওয়েবসাইটে ঢুকে গান ডাউনলোড করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কত জনকে হানা দিয়ে গ্রেফতার করা সম্ভব? আইএমআই-এর কর্তাদের বক্তব্য, গান চুরির ক্ষেত্রে কোনও মোবাইল দোকানের মালিক কিংবা ওয়েবসাইট মিড্লম্যানের কাজ করে। ধরপাকড়ের ক্ষেত্রে এই ‘মিডলম্যান’কেই ধরা হয়। চোরাই গানের ক্রেতাদের ক্ষেত্রে অবশ্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এর পাশাপাশি, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ নিয়ে ৪০০-রও বেশি চোরাই গান বিক্রয়কারী ওয়েবসাইটকে বন্ধ করা হয়েছে বলেও সংগঠনের এক মুখপাত্র জানান। |