তেলঙ্গানার আঁচে দাম তলানিতে
উৎসবের আগে মাথায় হাত, ক্ষতির মুখে উত্তরবঙ্গের পাটচাষিরা
সিনথেটিকের বস্তা ও নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ধাক্কা তো ছিলই। এ বার তেলঙ্গানার আন্দোলনের আঁচে কপাল পুড়ছে উত্তরের পাট চাষিদের। আন্দোলনে দক্ষিণ ভারতের মিলগুলিতে পাট সরবরাহ বন্ধের মুখে। চাহিদার ভাটার টানে দাম তলানিতে পৌঁছতে শুরু করেছে। চাষিরা লাভের আশা ছেড়ে উৎপাদন খরচ তোলার চেষ্টা শুরু করেছেন।
উত্তরবঙ্গের ছয় জেলায় এ বছর প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে কোচবিহার জেলায়, প্রায় ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে। এর পরে রয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলা। সেখানে ৩৮১৪২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। জলপাইগুড়িতে পাট চাষের এলাকা ৩১৭৮৬ হেক্টর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে ৩৪ হাজার হেক্টর। লক্ষাধিক চাষি ওই রুপোলি ফসল চাষের সঙ্গে জড়িত তাঁদের পুজোর কেনাকাটা থেকে শীতকালীন চাষের কাজের অনেকটাই নির্ভর করে পাট বিক্রির রোজগারের উপরে। মন্দা দশায় তাই অনেকে দিশেহারা হয়েছেন। নর্থবেঙ্গল জুট চেম্বার অব কমার্সের কর্তারা জানান, প্রতি বছর উত্তরবঙ্গ থেকে ৫০ লক্ষ মন পাট বিভিন্ন মিলে সরবরাহ হয়। প্রায় ৩০ শতাংশ যায় দক্ষিণ ভারতে মিলগুলিতে। তেলঙ্গানা আন্দোলনের জেরে অশান্তির কারণে সেখানে পাট সরবরাহ বন্ধ। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বজরংলাল হিরাউত বলেন, “দক্ষিণ ভারতের ৮টি মিলে উত্তরবঙ্গ থেকে পাট যায়। সেখানে অশান্তির কারণে পাট যাচ্ছে না। এখন শুধু কলকাতা মিলগুলি ভরসা।”
এ দিকে কলকাতার যে মিলগুলি ভরসা সেখানেও পাটের চাহিদা কমছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। কোচবিহার জুট বেলারস অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক কিসান সারদা বলেন, “উত্তরবঙ্গের পাট দিয়ে ভাল চট তৈরি হয়। কয়েক বছরে সিনথেটিক ও প্লাস্টিক ক্যারি ব্যাগের ব্যবহার উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় চটের থলে তৈরির কাজ বন্ধের মুখে। ওই কারণে মিলগুলিতে পাটের চাহিদা ক্রমশ কমেছে।”
বাজারে মন্দা দশা কৃষি দফতরের কর্তাদের কপালেও দুশ্চিন্তার ভাজ ফেলেছে। বিপদ এড়াতে তাঁরা পাটের বিকল্প ব্যবহার শুরুর উপরে গুরুত্ব দিয়েছেন। দফতরের উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক অধিকর্তা রজত পাল বলেন, “শুধুমাত্র আলুর মরসুমে কয়েক লক্ষ বস্তা দরকার হয়। সেগুলি পাটের হলে কোনও কথাই ছিল না শুধু ব্যাগ কেন? রাস্তা তৈরির কাজেও পাট ব্যবহার করা সম্ভব। বিকল্প ব্যবহার শুরু না হলে পাট চাষিদের দুর্দশা কাটবে না।”
চাষিরা জানান, বাজারে পাট নিয়ে ভিড় করছেন তাঁরা। খদ্দেরের দেখা মিলছে না। যে ব্যবসায়ীদের অগস্টে শুরু থেকে নানা হাট ঘুরে পাট কিনতে দেখেছেন তাঁরাও কম। কিছু ব্যবসায়ী সামান্য পাট কিনছেন। এক মন পাট বিক্রি করে মিলছে ৯২০ থেকে হাজার টাকা। উৎপাদন খরচই উঠছে না।”
ময়নাগুড়ির ধর্মপুরের চাষি মহেন রায় জানান, পাঁচ মন পাট নিয়ে ঘুরছি। কেউ ৯২০ টাকা বেশি বলছেন না। এক বিঘা জমিতে ৫ মন পাট পেয়েছি। খরচ হয়েছে প্রায় ৬ হাজার টাকা। মন প্রতি ৯২০ টাকা দামে পাট বিক্রি করলে পাব ৪৬০০ টাকা। লাভ বলতে পাটকাঠিগুলি। মৌলানির দিলওয়ার হোসেন ও সুভাষ বর্মনের অভিযোগ, “সরকারি সংস্থা পাট কেনা শুরু করলে বাজারের ওই পরিস্থিতি হত না।” জুট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার কোচবিহার আঞ্চলিক ম্যানেজার পুষ্পজিৎ রায় জানান, দিনহাটা, মাথাভাঙায় সরকারি সহায়ক মূল্যে পাট কেনা শুরু হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.