কর্মবিরতিতে সাফাই বন্ধ চিকিৎসা-বর্জ্যের
শ্রমিকদের একটি বড় অংশ বেতন বাড়ানোর দাবিতে কাজ বন্ধ রেখেছেন। তাই চিকিৎসা-বর্জ্য সংগ্রহ ও নিষ্কাশনের কাজ করতে পারছে না দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা। ফলে কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল, নার্সিংহোম ও ল্যাবরেটরিতে চিকিৎসা-বর্জ্য পরিষ্কারের ক্ষেত্রে বড়সড় সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কোথাও হাসপাতালের ভিতরেই দিনের পর দিন ডাঁই করে বর্জ্য রাখা হচ্ছে, কোথাও রাস্তার ভ্যাটে সাধারণ জঞ্জালের সঙ্গে একত্রে ফেলা হচ্ছে রক্তমাখা তুলো, গজ, সিরিঞ্জ। এ থেকে ভয়াবহ সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা নন, সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে অন্যদেরও। কিছু নার্সিংহোম রাস্তার ভ্যাটে ওই সব বর্জ্য ফেলছে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরে। সে ক্ষেত্রে ভ্যাট থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করেন যাঁরা, তাঁরা যে কোনও সময়ে ওই সংক্রমণের শিকার হতে পারেন।
কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান ও বীরভূমের সরকারি হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রে ‘সেমব্র্যামকি’ নামে ওই সংস্থার উপরে চিকিৎসা-বর্জ্য সংগ্রহ ও নিষ্কাশনের দায়িত্ব রয়েছে। জেলা তো বটেই, কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজেও খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, প্রায় কোথাওই নিয়মিত বর্জ্য সংগ্রহ হচ্ছে না। কোথাও হাসপাতাল চত্বরেরই এক কোণে, কোথাও আবার হাসপাতালের ফাঁকা কোনও ঘরে বর্জ্য জমিয়ে রাখা হচ্ছে।
স্তূপীকৃত চিকিৎসা-বর্জ্য। (বাঁ দিকে) আর জি কর ও (ডান দিকে) হাওড়া জেলা হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র
‘সেমব্র্যামকি’, স্বাস্থ্য দফতর বা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ— কেউই জানাতে পারেনি কবে এই সমস্যা মিটবে। তবে রাজ্য শ্রম দফতরের কর্তারা জানান, সোমবার এ ব্যাপারে একটি জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। তার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির হবে।
চিকিৎসা-বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য হাওড়া, দুর্গাপুর, হলদিয়া ও শিলিগুড়িতে ওই সংস্থার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট রয়েছে। সেখানেই বর্জ্য নিষ্কাশন হয়। এর মধ্যে শ্রমিক আন্দোলনের জেরে হাওড়ার প্লান্টে কার্যত কোনও কাজই হচ্ছে না। কলকাতা ও তার সংলগ্ন অঞ্চলের মেডিক্যাল-বর্জ্য নিষ্কাশন হত হাওড়ায়। এখন কলকাতা থেকে চিকিৎসা-বর্জ্য বয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দুর্গাপুরে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মীরাই স্বীকার করেছেন যে, এ ভাবে বেশি দিন চালানো সম্ভব নয়। যে কোনও সময়ে দুর্গাপুর বা অন্য জায়গার প্লান্টগুলি অচল হয়ে পড়লে গোটা ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়বে।
গত দেড় মাস ধরে চলছে শ্রমিক সমস্যা। মেটানোর জন্য কী করছেন কর্তৃপক্ষ? এমন একটি জরুরি পরিষেবায় কর্মীরা হাত গুটিয়ে বসে থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? ‘সেমব্র্যামকি’র চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু দত্তকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমার পক্ষে এখনই কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়। এটুকু বলতে পারি, সব তরফেই জট কাটানোর চেষ্টা চলছে।”
দায় নিতে চায়নি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা স্বাস্থ্য দফতরও। চিকিৎসা-বর্জ্য যথাযথ ভাবে পরিষ্কার না হওয়া পরিবেশের পক্ষেও বড়সড় ঝুঁকি বলে বিশেষজ্ঞেরা জানালেও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্তের দাবি, এই সমস্যার সঙ্গে তাঁদের সরাসরি কোনও যোগ নেই। তিনি বলেন, “এটি মূলত শ্রমিক-সমস্যা। শ্রমিকেরা কাজ না করায় আইন-শৃঙ্খলার সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। আমরা ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি ঠিকই। কিন্তু গোটা বিষয়টিতে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই।” রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, প্রতি দিন শয্যা-পিছু চিকিৎসা-বর্জ্য সংগ্রহ ও নিষ্কাশনের জন্য ওই সংস্থার সঙ্গে তাঁদের চুক্তি রয়েছে। তিনি বলেন, “বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকেরা আন্দোলন করলে সেটি সেই সংস্থার অভ্যন্তরীণ সমস্যা। তার সঙ্গে আমাদের কোনও যোগ নেই। কিন্তু আমাদের কাজটা ঠিকমতো না হলে সেটা আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ। বহু হাসপাতালেই নিয়মিত বর্জ্য পরিষ্কার হচ্ছে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.