মন্ত্রীর পছন্দের নেতাই হেরে গেলেন কলেজে
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে কলেজের সভাপতি ছিলেন এক সাংসদ। এ বার সেই বাঘমুণ্ডির সুইসা নেতাজি সুভাষ মহাবিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সদস্যেরা রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতির মনোনীত প্রার্থীকে সভাপতি হিসেবে পছন্দ করলেন না। তাঁর বদলে গোপন ব্যালট পেপারে ভোট দিয়ে তাঁরা সভাপতি হিসেবে বেছে নিলেন পুরুলিয়া জগন্নাথ কিশোর কলেজের এক শিক্ষিকাকে। সুস্মিতা চৌধুরী নামের ওই শিক্ষিকা তৃণমূলেরই অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার (ওয়েস্টবেঙ্গল কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি প্রফেসর্স অ্যাসোসিয়েশন) পুরুলিয়া জেলার আহ্বায়ক হলেও সমিতির একাংশের দাবি, তাঁকে শিক্ষাক্ষেত্রে যুক্ত একজন মানুষ হিসেবেই তাঁরা নির্বাচিত করেছেন।
এই কলেজে পরিচালন সমিতির আট সদস্যের মধ্যে অধ্যক্ষের ভোটদানের অধিকার নেই। বাকি সদস্যেরা হলেন দু’জন শিক্ষাকর্মী প্রতিনিধি, একজন শিক্ষক প্রতিনিধি (এই কলেজে পূর্ণ সময়ের শিক্ষক কম থাকার কারণে শিক্ষক প্রতিনিধি কম), সরকার মনোনীত প্রতিনিধি একজন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনোনীত প্রতিনিধি তিন জন। বুধবার কলেজের পরিচালন সমিতি সভাপতি নির্বাচনের বৈঠকে বসে। সভাপতি হিসেবে স্থানীয় তৃণমূল নেতা মিহির কুইরীর নাম প্রস্তাব করেন সমিতির এক সদস্য। কিন্তু উপাচার্য মনোনীত এক সদস্য ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সুস্মিতাদেবীর নাম তোলেন। দীর্ঘ আলোচনায় কোনও ভাবেই ঐক্যমত্যে পৌঁছনো যায়নি। কলেজের অধ্যক্ষ কিঙ্কর দাস বলেন, “সভাপতি পদের জন্য দু’টি নাম সদস্যদের মধ্যে থেকে প্রস্তাব হিসেবে এসেছিল। সদস্যদের অধিকাংশের সম্মতিতে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন হয়। সুস্মিতা চৌধুরী ৬-১ ভোটে জয়ী হয়েছেন।”
ওই সমিতির সদস্যদের অধিকাংশের দাবি, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন পদে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়, থাকবেন শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনই। সুস্মিতাদেবী তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠনের পদে থাকলেও তিনি জগন্নাথ কিশোর কলেজের অধ্যাপিকা। যে দু’জনের নাম প্রস্তাব হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে সুস্মিতাদেবীর গ্রহণযোগ্যতা আমাদের কাছে বেশি।” তা ছাড়া আরও একটি যুক্তি তাঁরা দেখাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই কলেজের সভাপতি ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের সাংসদ বীর সিং মাহাতো। প্রভাবশালী ব্যক্তি কলেজের সভাপতি হলে কলেজের উন্নয়নমূলক কাজে তাঁর মাধ্যমে সুযোগসুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু বীর সিং মাহাতোর পরে যে দু’জনের নাম উঠে এসেছিল, তাঁদের মধ্যে সুস্মিতাদেবী শাসকদলের কলেজগুলির শিক্ষক সংগঠনের জেলা সম্পাদিকা। কিন্তু তুলনায় মিহিরবাবু তৃণমূলের স্থানীয়স্তরের একজন নেতা। সে ক্ষেত্রে ভারে এগিয়ে গিয়েছেন সুস্মিতাদেবীই। তবে ভোটদানে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয়ও স্পষ্ট নয়।
তৃণমূল সূত্রের খবর, মিহিরবাবু বাঘমুণ্ডি থেকে জেলা পরিষদে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে তিনি হেরে যান। দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো মিহিরবাবুকে ওই কলেজের সভাপতি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমিতির অধিকাংশ সদস্য তাঁকে কেন মেনে নিলেন না, তা নিয়ে বিস্মিত তৃণমূল নেতৃত্বও। এ ক্ষেত্রে শান্তিরামবাবুর একপ্রকার হার হয়েছে বলেই তাঁর বিরোধী গোষ্ঠী দাবি করছেন। শান্তিরামবাবু বলছেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। তবে এটা ঠিক মিহিরবাবু স্থানীয় মানুষ হিসেবে আমাদের প্রতিনিধি ছিলেন। কেন তাঁকে মনোনীত করা হল না, তা খোঁজ নিয়ে দেখব।” অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন পুরুলিয়া শহর থেকে সুইসার এই কলেজের দূরত্ব কমবেশি ৮০ কিলোমিটার। সভাপতি হিসেবে নানা কাজে পুরুলিয়া থেকে কলেজে আসতে পারবেন তো সুস্মিতাদেবী? নতুন সভাপতি সুস্মিতাদেবী বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষাজগতের মানুষকেই শিক্ষার অঙ্গনে দেখতে চান। ওঁরা আমাকে কলেজের সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। উন্নয়নের কাজ আমি করব।” কিন্তু মিহিরবাবু দাবি করছেন, “আমি সুইসার মানুষ। দলের জেলা সভাপতি আমাকে কলেজের সভাপতি করতে চেয়েছিলেন। আমিও কলেজের সার্বিক উন্নয়ন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দলের একাংশ আমাকে চাইলেন না। আমি বিষয়টি জেলা সভাপতিকে জানিয়েছি।”
পঞ্চায়েত ভোটে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে বাঘমুণ্ডি এখনও কংগ্রেসের ঘাঁটি রয়ে গিয়েছে। পুরো ঘটনায় বাঘমুণ্ডির বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর টিপ্পনী, “শিক্ষার অঙ্গনে রাজনীতির লোক ঢুকবে না, এটা তো তৃণমূলের মুখের কথা। স্থানীয় মানুষকে সরিয়ে ওরা সুদূর পুরুলিয়া শহরের কত নেতাকে দূরের কলেজে সরকার মনোনীত প্রতিনিধি করেছে, তার প্রচুর উদাহরণ রয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.