খুশিতে বাঁচুন
ম্যাচিং করে স্ট্রেচিং
স্ট্রেচিং বা পেশির সম্প্রসারণের ব্যায়াম জরুরি অবশ্যই। কিন্তু স্ট্রেচ করলেই কেল্লা ফতে, এমন ভাবার কারণ নেই। তাই কখন, কোন পেশি, কী ভাবে স্ট্রেচ করতে হবে তা আগে জানা দরকার। এটি আবার নির্ভর করে যিনি ব্যায়াম করছেন তাঁর উদ্দেশ্য, ক্ষমতা এবং দক্ষতার উপরে।
স্ট্যাটিক, ব্যালিস্টিক এবং ডাইনামিক, প্যাসিভ, অ্যাক্টিভ এমন নানা ধরনের স্ট্রেচিং হয়। কোন ধরনের স্ট্রেচিং করবেন তা পেশির ইলাস্টিসিটি এবং প্লাস্টিসিটি এই দুই ধর্মের উপরে নির্ভর করে। পেশি প্রসারিত হওয়ার পরে দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতাকে বলা হয় ইলাস্টিসিটি। আগের থেকে পেশিকে বেশি প্রসারিত করলে, সেই প্রসারিত অবস্থায় পেশির থাকার ক্ষমতাকে বলা হয় প্লাস্টিসিটি।
প্যাসিভ স্ট্রেচিং এর সময় দেহকে শিথিল রাখা হয়। প্রশিক্ষক বল প্রয়োগ করে স্ট্রেচ করতে সাহায্য করেন। শরীর অসুস্থ থাকলে এই ধরনের স্ট্রেচিং খুব উপকারী। তবে এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষকের দক্ষতার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। তাঁর কোনও ভুল হলে আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
স্ট্যাটিক স্ট্রেচিং-এ পেশিকে যতটা সম্ভব প্রসারিত করা হয়। এ অবস্থায় ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড থাকতে হয়। যখন পেশিকে খুব দ্রুত বা খুব গভীর ভাবে সম্প্রসারিত করা হয়, তখন সুষুম্নাকাণ্ডে একটি সংকেত যায়। এর নাম স্ট্রেচ রিফ্লেক্স। এর ফলে পেশির সংকোচন হয়। স্ট্রেচ রিফ্লেক্স স্ট্যাটিক স্ট্রেচ করার দু’সেকেন্ডের মধ্যে শেষ হয়। এর পরে পেশি শিথিল হয়। এতে প্লাস্টিসিটি বাড়ে। এই পদ্ধতিটি খুবই নিরাপদ। হঠযোগীরা এ ভাবে স্ট্রেচ করেন। যাঁরা দীর্ঘ ক্ষণ বসে কাজ করেন, তাঁদের হিপ ফ্লেক্সর পেশি সংকুচিত হয়ে শক্ত হয়ে যায়। এঁদের জন্য স্ট্যাটিক স্ট্রেচিং প্রয়োজন। দিনে দু’বার ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে স্ট্যাটিক স্ট্রেচ করলে উপকার পাওয়া যায়। স্ট্যাটিক স্ট্রেচে আরও কিছু উপকার আছে। যেমন,
১। আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা কমে।
২। ব্যায়ামের পরে ব্যথা হলে এই স্ট্রেচিং-এ তা কমে।
৩। হ্যামস্ট্রিং বা হিপ ফ্লেক্সর-এর স্ট্রেচ-এ লো ব্যাক সিনড্রোম-এর আশঙ্কা কমে।
৪। সংযোগ কলা এবং অস্থিসন্ধিতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
৫। পেশির দৈর্ঘ্যের আংশিক পরিবর্তন ঘটে।
তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে স্ট্যাটিক স্ট্রেচ থেকে তেমন কিছু উপকার মেলে না।
ব্যালিস্টিক এবং ডাইনামিক স্ট্রেচিং: ববিং, বাউন্সিং, রিবাউন্ডিং এর মতো পেশির ছন্দোময় চলনের সময়ে ব্যালিস্টিক স্ট্রেচিং হয়। এতে পেশি এবং সংলগ্ন কলাতন্ত্রে যে ভরবেগ তৈরি হয় তাতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বাড়ে। তবে এতে আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা বেশি। পেশি ক্লান্ত হয়ে যায়। সংযোগকারী কলাগুলি অভ্যস্ত হতে যথেষ্ট সময় পায় না। দ্রুত স্ট্রেচ রিফ্লেক্স শুরু হয়ে যায়। ফলে স্ট্রেচ করা কঠিন হয়ে ওঠে।
এ ক্ষেত্রে নিজের চেষ্টায় স্ট্রেচ করতে হয়। বাইরে থেকে কোনও বল প্রয়োগ করা হয় না। কিন্তু কোনও আঘাত বা অসুস্থতা থাকলে এই স্ট্রেচিং করা যায় না।
সতর্কতা: কয়েকটি ক্ষেত্রে স্ট্রেচিং এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। যেমন,
১। কোনও হাড় ভাঙা থাকলে।
২। অস্থিসন্ধির আশেপাশে ব্যথা থাকলে।
৩। অস্টিওপোরোসিস থাকলে।
৪। পেশিতে সদ্য টান লেগে থাকলে।
৫। চর্মরোগ বা শ্বাসকষ্ট থাকলে।
৬। স্ট্রেচের সময়ে খুব ব্যথা হলে।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.