সপ্তম বারের জন্য জিম্বাবোয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হইয়াছেন রবার্ট মুগাবে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানমন্ত্রী মর্গান সাঙ্গিরাইকে কার্যত বিপর্যস্ত করিয়া একাই ৬১ শতাংশ ভোট দখল করিয়া লইয়াছেন। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ ভূরি ভূরি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যে জন্য পুনর্নির্বাচনের দাবিও তুলিয়াছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, এমনকী অস্ট্রেলিয়াও নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ ছিল না বলিয়া রায় দিয়াছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া ও আফ্রিকান ইউনিয়ন এই নির্বাচনকে ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’ বলিয়াছে। তাই মুগাবে আপাতত নিষ্কণ্টক। তিনি এ বার তাঁহার ‘জানু-পিএফ’ দলকে পার্লামেন্টেও নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতায় জয়ী করিতে আত্মনিয়োগ করিবেন। ঔপনিবেশিক অধীনতা ও পীড়ন হইতে সাবেক রোডেশিয়াকে মুক্ত করার সংগ্রামের স্মৃতি এখনও দেশবাসীর মনে অমলিন। সেই সংগ্রামের অবিসংবাদী নেতা হিসাবে রবার্ট মুগাবের ভূমিকা আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে। স্বৈরাচার, স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অগণিত অভিযোগও যে মুগাবের সেই পরিত্রাতার ভাবমূর্তি এখনও কলঙ্কিত করিতে পারে নাই, নির্বাচনী ফলাফলেই তাহা স্পষ্ট।
একচ্ছত্র এই নায়কের দুর্নীতি ও স্বৈরাচারের বিষয়টি দেশবাসীর গোচরে আনার কৃতিত্ব অবশ্যই ‘মুভমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাটিক চেঞ্জ’ বা এমডিসি-র। এই সংগঠনের নেতা হিসাবেই মর্গান সাঙ্গিরাই গত নির্বাচনেও মুগাবের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানান। ব্যাপক হিংসার মধ্য দিয়া সমাপ্ত সেই নির্বাচনের পর মুগাবে বাধ্য হন বিরোধী দলের সহিত জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করিতে। সাঙ্গিরাইকে প্রধানমন্ত্রীও করা হয়। এই জাতীয় ঐক্য দেশের পক্ষে ইতিবাচকই প্রতিপন্ন হয়। কিন্তু ইহা মুগাবে ও তাঁহার দলকে দম ফেলার ফুরসত দেয়, প্রতিপক্ষের বিরোধিতার ঝাঁঝ মোলায়েম করিতেও সাহায্য করে। সি পি আই এম, অন্তত অতীতের সি পি আই এমের মতো জানু-পিএফও একটি নির্বাচন সাঙ্গ হওয়া মাত্র পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করিয়া দেয়। তাহা আখেরে মুগাবের দলকে প্রভূত সুবিধা দিয়াছে। ইহার সহিত যুক্ত হইয়াছে দলনেতাদের দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, সাঙ্গিরাইদের যাহা নাই। ক্ষমতায় থাকার ফলে প্রশাসনকেও বহুলাংশে নিজের অনুকূলে ব্যবহার করিতে পারিয়াছেন মুগাবে। তৃতীয় বিশ্বে দীর্ঘ কাল ক্ষমতাসীন রাজনীতিকরা এই সুবিধাগুলি পাইয়াই থাকেন।
জিম্বাবোয়ের ক্ষেত্রে অবশ্য তাহার সাবেক ঔপনিবেশিক প্রভু ব্রিটেন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষাও ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বীকৃতি অধিকতর জরুরি। ই ইউ ওই দুই রাষ্ট্রের মতো সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন বাতিল করার দাবি জানায় নাই। ইউনিয়নের সহিত জিম্বাবোয়ের আর্থ-রাজনৈতিক সম্পর্ক অতিশয় ঘনিষ্ঠ। তাহার উন্নয়নে ইউনিয়ন এক বৃহৎ অংশীদার। জিম্বাবোয়ের বিভিন্ন নাগরিক অধিকার আন্দোলনেও ইউনিয়নের অভিভাবকত্ব শিরোধার্য হয়। ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হারারে’র বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ জারি করিয়া মুগাবেকে চাপে রাখার পক্ষপাতী হইলেও ইউরোপ সে পথে না-হাঁটিতেই মনস্থ করিয়াছে। এই মতপার্থক্য মার্কিন-ইউরোপ সম্পর্কের উপরেও আংশিক ছায়া ফেলিতে পারে, স্নোডেন-বিতর্ক যাহাকে ইতিমধ্যেই কিঞ্চিৎ ছায়াচ্ছন্ন করিয়াছে। কিন্তু জিম্বাবোয়েকে একটা সুযোগ দেওয়াও দরকার। আবার, সরকারেরও উচিত দেশবাসীকে গণতন্ত্রের পথে আরও কিছুটা অগ্রসর হওয়ার সুযোগ দেওয়া। |