সম্পাদকীয় ১...
গত্যন্তর নাই
ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া, উভয়ই যদি অত্যন্ত প্রত্যাশিত হয়, এবং অত্যন্ত প্রত্যাশিত আবর্তে একের পর এক ঘুরিতে থাকে, তাহা হইলে সেই ঘূর্ণি হইতে অন্তত কিছু শিক্ষা লওয়া জরুরি। ভারত ও পাকিস্তান দুই পক্ষ যখনই আলোচনার কাছাকাছি আসিয়া পৌঁছায়, পাকিস্তানের দিক হইতে কোনও না কোনও পথে সন্ত্রাসের চরম আঘাত নামিয়া আসে, এবং ভারতের প্রবল প্রতিক্রিয়ায় আলোচনা বানচাল হইয়া যায়। তাহার পর আবার দীর্ঘ প্রতীক্ষা, দীর্ঘ প্রতিকূলতা অতিক্রম, আবার আলোচনার প্রস্তুতি, আবার জঙ্গি আক্রমণ। কার্গিল-পরবর্তী এক দশকে ইহার ব্যত্যয় ঘটে নাই। সম্ভবত সেই ধারাই সমানে বহিবে। এই সপ্তাহে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাক হামলায় পাঁচ ভারতীয় সেনার প্রাণহানির পর দিল্লিতে সরকার পক্ষ ও বিরোধী পক্ষের সওয়াল-জবাব আঠারো দিন অবধি গড়াইবার যে সম্ভাবনা দেখা দিয়াছিল, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ‘সংশোধিত’ বয়ানের পরে তাহা কিঞ্চিৎ প্রশমিত হইয়াছে বটে, কিন্তু এই আত্মসংশোধনে সুষমা স্বরাজের ‘সন্তুষ্টি’ ঘোষণার পরেও তাঁহার সতীর্থ যশবন্ত সিনহা জানাইয়া দিয়াছেন, পাকিস্তানের সহিত আলোচনা বন্ধ রাখিবার দাবিতে তাঁহারা অবিচল। এই দাবি অস্বীকার করা সরকারের পক্ষে কঠিন, বিশেষত যখন নির্বাচন অদূরে।
ঘটনার পরেই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিক্রিয়া বিচক্ষণতা এবং দক্ষতার পরিচয় দেয় নাই, তাহা অনস্বীকার্য। হামলাকারীরা পাক সেনা না সেনা-বেশী জঙ্গি— তাহার প্রমাণ কতটা সরকারের নাগালে ছিল বা আছে, তাহা স্পষ্ট নহে। প্রয়োজনীয় তথ্যপঞ্জি সরকারের কাছে আছে কি না জানা নাই। কিন্তু থাকিলেও এই ধরনের অসঙ্গতি এবং হঠকারিতা অবাঞ্ছিত ছিল। আর একটু ধৈর্য ও দায়িত্বজ্ঞান কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট আশা করা যায়। আবার বিরোধী পক্ষ হইতেও যে প্রত্যাশিত পথে রাজনীতির প্যাঁচ দেখা গিয়াছে, তাহাও দুর্ভাগ্যজনক। জঙ্গি আক্রমণ সর্বদাই কঠোরতম ভাষায় নিন্দাযোগ্য, কিন্তু সেই সমালোচনার অর্থ সমস্ত দ্বিপাক্ষিক কূটনীতি স্থগিত করিয়া দেওয়া নহে। সন্ত্রাসবাদীরা ঠিক ইহাই চাহে। সরকারকে এক হাত লইবার অদম্য বাসনায় বিরোধীরা যদি সেই ‘প্রত্যাশা’র ফাঁদে পা দেয়, শান্তিপ্রতিষ্ঠার সুদূর সম্ভাবনা সুদূরতর হইবে: বিজেপি নেতাদের এইটুকু সম্বিৎ থাকা উচিত।
২০০৮ সালের মুম্বই-এর তাজ হোটেলে ভয়াবহ জঙ্গি আক্রমণের পর বিভ্রান্তি কাটাইয়া ভারত আলোচনার দিকে অগ্রসর হওয়ার পর গত জানুয়ারি মাসে দুই ভারতীয় সেনার নির্মম মস্তকচ্ছেদনের ঘটনা শান্তি-প্রক্রিয়ায় জল ঢালিয়া দিয়াছিল। পাকিস্তানে ইতিমধ্যে নওয়াজ শরিফ নূতন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হইয়া আসিলে দ্বিপাক্ষিক কূটনীতি আবার ঝাঁকুনি খাইয়া সম্মুখবর্তী হইবার চেষ্টা শুরু করে। গত সপ্তাহে শরিফ নিজমুখে ভারত ও পাকিস্তান উভয় পক্ষের অস্ত্র সংবরণের জরুরি কাজটির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। দুই পক্ষের মুখোমুখি বসিবার প্রস্তাবও ওঠে। এ বারের হামলার পরেও প্রধানমন্ত্রী শরিফের মুখে শান্তিপ্রস্তাব চালাইয়া যাইবার কথা শোনা গেল। তাহার অনেকাংশই হয়তো রাজনৈতিক বোলচাল, কিন্তু রাজনৈতিক ‘রেটরিক’ও গুরুত্বপূর্ণ। এত দীর্ঘ শত্রুত্বের প্রেক্ষিতে দুই দেশের সম্পর্কের তারটি কোথায় বাঁধিবার প্রয়াস হইতেছে, তাহাও গুরুত্বপূর্ণ। যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি গত দুই বৎসর যাবৎ প্রত্যহ সংকটদীর্ণ, গত কালও যেখানে বোমা বিস্ফোরণে এক ঝাঁক তরুণ খেলোয়াড়ের প্রাণ গিয়াছে, সেখানকার রাষ্ট্রশক্তি নিশ্চয়ই সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অমিতশক্তিমান নহে। এই জরুরি কথাটি স্মরণ রাখিয়াই দিল্লিকে অগ্রসর হইতে হইবে। আলোচনার উপরেই বিশ্বাস রাখিতে হইবে। গত্যন্তর নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.