চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
ফুটে উঠেছে প্রচ্ছন্ন হিংসার সাংকেতিক উপস্থাপনাও
খন সিমা গ্যালারিতে চলছে বিশ্বভারতী কলাভবনের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক ও ছাত্রদের এচিং পদ্ধতির ছাপচিত্রের প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘বিনিথ দ্য সারফেস’। এই শিরোনাম উঠে এসেছে এচিং-এর প্রকরণগত বৈশিষ্ট্য থেকে। এচিং-এ অ্যাসিডের মাধ্যমে ধাতবপাত তক্ষণ করা হয়। তার পর ছাপ তোলা হয় ক্ষয়ে যাওয়া ধাতব পাতের নিম্নবর্তী তল থেকে। ৩৯ জন শিল্পী অংশ নিয়েছেন। প্রদর্শিত হয়েছে ৪০টি কাজ। গত সেপ্টেম্বর মাসে কলাভবনে একটি কর্মশিবির অনুষ্ঠিত হয় ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে। সেই কর্মশিবিরের ফসল এই চিত্রমালা।
কলাভবনে ছাপচিত্র চর্চার ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ১৯২১-এ বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ওখানে ছাপচিত্র চর্চারও শুরু হয়। এই সূচনারও একটু পূর্ব-ইতিহাস আছে। ১৯১৫ সালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বিচিত্রা ক্লাব ও স্টুডিয়ো’। নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যে ওখানে ছাপচিত্র চর্চারও বিশেষ গুরুত্ব ছিল। গগনেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথও ‘বিচিত্রা’য় ছাপচিত্র চর্চা করেন। কলাভবন প্রতিষ্ঠার পর ওখানে ছাপচিত্র চর্চা বিশেষ গুরুত্ব পায়। প্রথম পথিকৃৎদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মণীন্দ্রভূষণ গুপ্ত বিশ্বরূপ বসু প্রমুখ। ১৯৩০-৩১-এ নন্দলাল বসু ‘সহজ পাঠ’-এর ছবি করেন লিনোকাট মাধ্যমে। সেই পরম্পরা আজও কলাভবনের ছাপচিত্র চর্চায় নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটাচ্ছে। তারই কিছু নিদর্শন আমরা দেখি এই প্রদর্শনীতে।
সিমায় আয়োজিত প্রদর্শনীর একটি ছবি
প্রদর্শনীর অধিকাংশ কাজই সাদা-কালোতে করা। প্রকাশভঙ্গি সাবলীল এবং জটিলতামুক্ত। বেশির ভাগ রচনা অবয়বী। কোথাও কোথাও রয়েছে প্রচ্ছন্ন আখ্যানের আভাস। কিছু কাজ জ্যামিতিক-বিমূর্ত, গাঠনিকতা সমৃদ্ধ। অল্প কয়েকটি কাজ রয়েছে যেখানে দৃশ্যপ্রতিমার বদলে এসেছে অক্ষর ও শব্দের বিন্যাস।
প্রদর্শনীর প্রবীণতম শিল্পী কেজি সুব্রামনিয়ন। তাঁর রচনাটি অবয়বী, রৈখিক, স্নিগ্ধ সৌন্দর্যে অন্বিত। একটি মেয়ে বসে আছে, পিছনে একটি ছেলে। দু’জনের পারস্পরিক সম্পর্ক ছবিটির বিষয়। সনৎ করের নিজস্ব রীতির কল্পরূপাত্মক মুখের ছন্দিত উপস্থাপনা গভীরতর নান্দনিক সৌন্দর্যে উজ্জ্বল। একমাত্র যোগেন চৌধুরীর রয়েছে দু’টি ছবি। একটিতে প্রশান্ত, লাবণ্যময় একটি মেয়ের মুখ। দ্বিতীয়টিতে বসে থাকা এক জন মানুষের নগ্ন পিঠ মাত্র উপস্থাপিত। তার ভিতরই প্রচ্ছন্ন থেকেছে অনুচ্চারিত সন্ত্রাস। এই সন্ত্রাসের প্রবল প্রকাশে উজ্জ্বল নির্মলেন্দু দাসের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ শীর্ষক রচনাটি। একটি সাদা তরবারি ও তার পিছনে কিছু ফুল। প্রচ্ছন্ন হিংসার আরও সাংকেতিক উপস্থাপনা অশোক ভৌমিকের প্রায় বিমূর্ত মুখোশ ও শিরস্ত্রাণের সমন্বিত রচনাটিতে। দু’টি বিমান নিয়ে করা পঙ্কজ পাঁওয়ারের ছবিটিতেও সন্ত্রাসের এক পরোক্ষ প্রেক্ষাপট আভাসিত হয়। সুতনু চট্টোপাধ্যায়ের মুখের উপস্থাপনাটি কিউবিস্ট গাঠনিক জ্যামিতিকতায় সংহত। শান্তনু ভট্টাচার্যের রচনাটিতেও আদিমতার আভাস আছে। সেটা উঠে এসেছে দেশীয় পুরাণকল্প থেকে। কদমগাছের তলায় কৃষ্ণের প্রতিমাকল্প আভাসিত হয়। শেখ সাজাহানের ছবিতে মানব মানবীর উপস্থাপনায় ঘনকবাদী বা কিউবিস্ট গাঠনিকতার সংশ্লেষ বলিষ্ঠতা এনেছে। সুশোভন অধিকারীর ছবিটিতেও প্রচ্ছন্ন কল্পরূপ রয়েছে। অনুভূমিক ভাবে সংস্থাপিত একটি মুখ একটি কাঠের চতুষ্কোণ ফ্রেম ধরতে যাচ্ছে। সফলতার সীমায় যেন বাঁধা পড়ে যেতে চায় মানুষ।
বিমূর্ত রূপায়ণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত সুষেণ ঘোষের রচনাটি। পিনাকী বরুয়ার রচনাটিতে রেখার টানাপোড়েনের সঙ্গে ছায়াতপের বুনোট সংশ্লেষিত হয়েছে। প্রসূন কান্তি ভট্টাচার্যের রচনায় রয়েছে বিভিন্ন আয়তনের আয়তক্ষেত্রের পারস্পরিক সম্পর্কের বুনন। কৃষ্ণেন্দু বাগ দেখিয়েছেন উপবৃত্তের সঙ্গে আয়তক্ষেত্রের সম্পর্কের টানাপোড়েন। গৌতম দাসের ছবিতে যে তিনটি স্তম্ভের উপস্থাপনা সেটাও বিমূর্তেরই প্রকাশ।
সলিল সাহানি ছাপচিত্রের একজন দক্ষ শিল্পী। কিন্তু তাঁর ছবিতে কোনও দৃশ্যপ্রতিমা নেই। ইংরেজি অক্ষরে শুধু লেখা আছে: ‘হাউ লং দ্য ফ্রেম উইল প্রটেক্ট দ্য পিকচার’। সুমিতাভ পালের ছবিতে লেখা আছে ‘বুম’ ও ‘বাম’ এই দু’টি শব্দ। মাঝখানে শুধু একটি মুষ্টিবদ্ধ হাত। পরম্পরা ও আধুনিকতার নানা অনুধ্যানে প্রদর্শনীটি সীমিত হলেও, সাম্প্রতিক চিত্রচর্চার নানা দিককে তুলে ধরেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.