সম্পাদকীয় ১...
মিন্ট রোডে যে যায়
রাজধানীর নর্থ ব্লকে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের দফতর হইতে মিন্ট রোডে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অফিসের দূরত্ব সামান্য। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের উপদেষ্টার আসন হইতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের আসনে স্থানান্তর যে সামান্য পরিবর্তন নহে, রঘুরাম রাজন তাহা বিলক্ষণ জানেন। তিনি সাফ সাফ বলিয়াছেন, নূতন পদ তাঁহার পক্ষে একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সামর্থ্য তাঁহার নাই, এমন কথা কেহ বলিবেন না। রঘুরাম রাজন এক দিকে অর্থনীতির তত্ত্ব-দুনিয়ার দুই মহাতীর্থে কাজ করিয়াছেন তিনি এম আই টি’র পিএইচ ডি এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব শিক্ষক; আবার দেশের ভিতরে অর্থ মন্ত্রকে এবং বাহিরে আই এম এফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় ফলিত অর্থশাস্ত্রের অনুশীলনে নেতৃত্ব দিয়াছেন। মনমোহন সিংহ বা বিমল জালানের মতো প্রশিক্ষিত অর্থনীতিবিদরা অতীতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাল ধরিয়াছেন, রঘুরাম রাজন তাঁহাদের যোগ্য উত্তরসূরি। তবু, সবার উপরে চ্যালেঞ্জ সত্য। চ্যালেঞ্জটি ঠিক কী, সে কথা বিদায়ী গভর্নর দুবুরি সুব্বারাওই চমৎকার জানাইয়া দিয়াছেন। কয়েক দিন আগে তিনি মন্তব্য করেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এক ‘ট্রায়লেমা’য় পড়িয়াছে। ‘ডায়লেমা’র অর্থ উভয়সংকট, অর্থাৎ দুই পরস্পরবিরোধী সমস্যার ফাঁদ। ট্রায়লেমায় সংকট দুইটি নহে, তিনটি। অর্থাৎ, ত্র্যহস্পর্শ। সংক্ষেপে বলা চলে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একই সঙ্গে তিনটি কাজ করিবার চেষ্টা চালাইতেছে: টাকার অবমূল্যায়নে লাগাম টানা, বিদেশি মুদ্রার চলাচল অবাধ রাখা এবং টাকার জোগান তথা সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করা। সত্য ইহাই যে, এই তিনটি কাজ একসঙ্গে করা দুঃসাধ্য। কেন দুঃসাধ্য? এক দিকে রফতানির তুলনায় আমদানি অনেক বেশি, অন্য দিকে ভারতে বিদেশি লগ্নিতে ভাটার টান, ফলে ডলারের চাহিদা বেশি, জোগান কম। মুক্ত অর্থনীতিতে ডলারের বাজারে স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণের অধিক বাধা আরোপ করা চলে না। সুতরাং ডলার ক্রমাগত চড়িতেছে, টাকা নামিতেছে। টাকা ও ডলারের বিনিময়-হার কিছুটা স্থিত রাখিবার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অতিসরলীকরণের আশ্রয় লইয়া বলা চলে আপন ভাণ্ডার হইতে ডলার ‘বিক্রয়’ করিয়া বাজার হইতে টাকা ‘ক্রয়’ করিতেছে। কিন্তু বাজারে টাকার জোগান কমিলে ঋণের জোগান কমে, সুতরাং সুদের হার বাড়ে। এখানেই ত্র্যহস্পর্শ।
প্রশ্ন উঠিতে পারে, সুদের হার বাড়িলে ক্ষতি কী? ক্ষতি ইহাই যে, সুদের হার চড়িলে বিনিয়োগে এবং লেনদেনে মন্দা আসে। ভারতের অর্থনীতি মন্দগতিতে আক্রান্ত, ব্যাঙ্কঋণের উপর সুদের হার চড়া। অর্থ মন্ত্রক চাহিতেছে, সুদের হার কমানো হোক, যাহাতে বিনিয়োগ বাড়ে, চাহিদায় তেজ আসে, আয়বৃদ্ধি উৎসাহিত হয়। নির্বাচন অদূরে বলিয়া আয়বৃদ্ধির তাগিদ আরও বেশি। আবারও প্রশ্ন উঠিবে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক টাকার জোগান বাড়াইয়া সুদের হার কম রাখিলে দোষ কী? সমস্যা হইল, টাকার জোগান অতিরিক্ত বাড়িলে মূল্যবৃদ্ধিতে নূতন ইন্ধন পড়ে। বাজারদর আগুন, বিরোধীরা সেই আগুনে ভোটের প্রচার সেঁকিয়া লইতে তৎপর, নরেন্দ্র মোদী বীরবিক্রমে ঢাক বাজাইতেছেন, এমতাবস্থায় সরকার মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি লয় কী করিয়া? অর্থাৎ, ত্র্যহস্পর্শ নহে, অর্থ মন্ত্রক তথা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে এখন পুরাণকথিত সেই বহুমুখী দানব। কী ভাবে সংকটের মোকাবিলা করা উচিত, সেই বিষয়ে গত কয়েক মাসে নর্থ ব্লকের সহিত মিন্ট রোডের টানাপড়েন চলিয়াছে। চিদম্বরম চাহিয়াছেন সুদের হার কম রাখিবার উপর জোর দেওয়া হোক, সুব্বারাও বলিয়াছেন মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি লইয়া সুদের হার কমানো অবিবেচনার কাজ হইবে। রঘুরাম রাজন অর্থমন্ত্রীর উপদেষ্টা ছিলেন, কিন্তু নূতন ভূমিকায় তিনিও হয়তো মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে অতিসতর্ক হইয়া উঠিবেন। তখন চিদম্বরম দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া বলিবেন: মিন্ট রোডে যে যায়, সে-ই হয় সুব্বারাও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.