অনাবৃষ্টির জেরে দক্ষিণ দিনাজপুরে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বিশেষ করে চলতি খরিফ মরশুমে বালুরঘাট মহকুমা এলাকায় চাষিরা জলের অভাবে আমন ধান বুনতে পারছেন না। তেমনিই পাট পচানো নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে। জেলা কৃষি উপঅধিকর্তা লক্ষীকান্ত মান্ডি বলেন, “এখনও পর্যন্ত জেলায় মোট গড় বৃষ্টিপাতের মাত্র ৪০ শতাংশ বৃষ্টি হয়েছে। এতে পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হয়ে উঠছে। আগামী ১৫ অগস্টের মধ্যে বৃষ্টি না হলে আমন ধানের চাষ মার খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” তিনি জানান, জেলায় এবারে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। কিন্তু জলের অভাবে এখনও অবধি অর্ধেক জমির পাট পচাতে না পেরে সমস্যায় চাষিরা।
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, বৃষ্টি নির্ভর করে জেলায় মূলত আমন ধানের চাষ হয়। বরাবর ধান চাষে রেকর্ড ফলনের সাফল্যও ধরে রাখে দক্ষিণ দিনাজপুর। কিন্তু এবারে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরে চাষিরা জুলাই থেকে জমি তৈরি করেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকলেও বৃষ্টির দেখা নেই। বছরে এ জেলার গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ১৫০০ মিলিমিটার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জেলাজুড়ে মাত্র প্রায় ৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এখনও প্রায় ৯০০ মিলিমিটার বৃষ্টি বাকি। আর এরমধ্যে বালুরঘাটে এখনও অবধি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ৩০০ মিলিমিটার। ঘাটতি বৃষ্টি নিয়ে চাষের কাজে নেমে বিপর্যস্ত ধান চাষিরা। বালুরঘাটের চকরাম, মাঝিগ্রাম, ঝিঁনাইপোতা এলাকার চাষি রমেশ পাহান, পরাণ মন্ডল, জ্যোতিষ রায় বলেন, “জলের অভাবে জমিতে পাট পড়ে রয়েছে। পচানো যাচ্ছে না। তার উপর তীব্র দাবদাহের ফলে আমনের বীজতলা শুকোতে বসেছে। পাম্পসেট ভাড়া করে জমিতে জল দিয়ে কোনও রকমে ধান বুনেছি। কিন্তু বৃষ্টি না হলে চরম বিপদে পড়ে যাব।”
গতমাসে পাহাড় ও ডুয়ার্সে বৃষ্টিতে ও নদীর জলে জেলার গঙ্গারামপুর, তপন, বংশীহারি ও কুশমন্ডি ব্লকের একাংশে বন্যা হয়। দু’পার ছাপিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকার চাষের জমি প্লাবিত হয়ে খাঁড়ি ও নয়ানজুলি জলে ভর্তি হওয়ায় ওই চারটি ব্লকের একাংশ চাষি আমন রোয়া ও পাট পচানোর জন্য কিছুটা জল পেয়েছেন। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে বালুরঘাট মহকুমার বালুরঘাট, হিলি, কুমারগঞ্জ ব্লকের সম্পূর্ণ এবং তপন ব্লকের একাংশ এলাকায়।
এ পর্যন্ত চাষিরা লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ জমিতে আমন বুনেছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে ওই আমন চারা তাপে জ্বলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। |