সীমান্ত পেরিয়ে গেল বাস, জট খুলল ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে
র্ষার দুপুর। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার পাশে বন্দুক হাতে পাহারায় বিএসএফ জওয়ানেরা। নিঝুম সীমাম্তে হঠাৎ রব ‘ভোলে বাবা পার করেগা’! জওয়ানেরা সচকিত। চোখে পড়ল, সীমান্তের দিকে ধাঁ ধাঁ করে ছুটে আসছে একটা বাস। বাসের সামনে গেরুয়া কাপড়ে লেখা ‘জল্পেশ চলুন’। লাল পতাকা দেখিয়ে, হাত নেড়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেন জওয়ানেরা। কিন্তু, কোথায় কী! না থেমে সীমান্ত পার করে বাস ঢুকে পড়ল সোজা বাংলাদেশের ভিতরে! প্রথমে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জওয়ানেরা। লাল, গেরুয়া, হলুদ রঙের বারমুডা আর গেঞ্জি পরা যাত্রী ঠাসা বাস থেকে ভোলে বাবার নামে ঘনঘন ধ্বনি। রকমসকম দেখে মনেই হচ্ছিল, বাস থামবে না। অগত্যা বন্দুক ওঁচালেন বিজিবি জওয়ানেরা। ব্রেক কষে থেমে গেল বাসটিও।
এই বাসটিই ভুল করে ঢুকে যায় বাংলাদেশে। চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তের জিরো পয়েন্টে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
‘বিদেশি’ বাসের এ হেন অনুপ্রবেশে কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত সোমবার দুপুরে রইল সরগরম। বাস চালক, কোচবিহারেরই তুফানগঞ্জের বাসিন্দা সামিনুর হক বিজিবি জওয়ানদের কাছে স্বীকার করেন, তিনি ভুল করে সীমান্ত পার করে ফেলেছেন। সে কথায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি বিজিবি। যাত্রী, চালক-সহ বাসটিকে আটক করে খবর পাঠানো হয় কাঁটাতারের ও-পারে বিএসএফ দফতরে। শুরু হয় দু’দেশের ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’। ঘণ্টাখানেকের বৈঠকের পরে যাত্রী সমতে বাসটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ও-পার রেহাই দিলেও এ-পারে ঢুকতেই বাস চালককে আটক করে কোচবিহার পুলিশ। পুলিশের সন্দেহ, চালক প্রকৃতিস্থ ছিলেন না। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “ভুল করে বাসটি বাংলাদেশে ঢুকেছিল। বিএসএফের উদ্যোগে সবাইকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।”
শিবের মাথায় জল ঢালতে তুফানগঞ্জ থেকে ২৭ জন রবিবার রাতে ময়নাগুড়ির জল্পেশ মন্দিরে গিয়েছিলেন। সোমবার সকালে পুজো সেরে খিচুড়ি খেয়ে তাঁরা তুফানগঞ্জের দিকে রওনা দেন। চ্যাংরাবান্ধায় আসার পরে মাথাভাঙার দিকে না গিয়ে হঠাৎই চালক সীমান্তের দিকে বাস ঘোরান। বিএসএফের বারণ না শুনে চ্যাংরাবান্ধার সড়ক বন্দরের গেটের ভেতর দিয়ে প্রায় তিনশো মিটার গিয়ে বাংলাদেশের বুড়িমারি গ্রামে ঢুকে পড়ে বাসটি।
বিএসএফের চ্যাংরাবান্ধা ক্যাম্প কমান্ডার বীরপল সিংহ বলেন, “সবে বাইরে থেকে ক্যাম্পে পৌঁছে জুতো খুলেছি। বাণিজ্য গেটে হইচই শুনে চপ্পল পায়েই ছুটে যাই! দেখি, একটা বাস কোনও কিছুরই তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আইজি-কে খবর দিই। বিজিবি-র সঙ্গে সম্পর্ক ভাল থাকায় দ্রুত কথাবার্তা শুরু হয়ে যায়।”
তুফানগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সম্পাদক সন্তোষ সাহা বলেন, “বাসটি আমাদের সংগঠনের নথিভুক্ত। তবে, এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে আমাদের কিছু বলার নেই।” বাসযাত্রী সঞ্জয় সাহা, মনোরঞ্জন বর্মনদের কথায়, “বাস বাংলাদেশে ঢুকেছে বুঝে ভয় পেয়ে যাই।” বাসের খালাসি সন্তোষ পালের দাবি, “চালককে বাস থামাতে বললেও শোনেনি। উল্টে গতি বাড়িয়ে দেয়।” আর এ-পারে এসে বাস চালক সামিনুর বললেন, “সীমান্তে গেট না থাকায় বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম, পুলিশ ধাওয়া করেছে! দ্রুত পালাতে গিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে যাই।” কেন তিনি পুলিশের ভয় পেয়েছিলেন, তা অবশ্য খোলসা করেননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.