ঈদের বাজারে বাংলায় এসে লাচ্চা আর সিমুই তৈরি করে দিয়ে যান ওঁরা। হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে বিহারের গরিব মানুষ সামান্য আয়ের আশায় এখানে আসেন। দিন রাত এক করে ঈদের খাবার তৈরি করেন। প্রতিদিনের মজুরি ১০০ টাকা করে।
বসিরহাটের মাটিনর্বান পাশে আস্তানা রোডের ধারে অস্থায়ী তাঁবুই ওঁদের ঠিকানা। বিহারের সাহারসা জেলার আরাপট্টি গ্রাম থেকে এসেছেন মহম্মদ কওসর, গঙ্গা শর্মা, শামসাদ গাজি, মোহন শর্মা, দুঃখী শর্মা, কালম গাজি। তাঁবুর ভিতর রাত জেগে তৈরি করছেন লাচ্চা আর সিমুই।
পাইকারি বাজার থেকে ৫১ টাকা কিলো দরে লাচ্চা সিমুই কেনেন বাসিন্দারা। বাজারে তা-ই বিক্রি হয় ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা কিলোদরে। তার সঙ্গে দুধ, চিনি, কাজুবাদাম, কিসমিস আর বিভিন্ন মশলা দিয়ে তৈরি হয় রকমারি খাবার। আগে অবশ্য বসিরহাটের ব্যবসায়ীরা কলকাতার বড়বাজার থেকে লাচ্চা সিমুই কিনে নিয়ে এসে এখানে বিক্রি করতেন। তবে এখন বসিরহাটেই তা তৈরি হচ্ছে। |
ডালডা, ঘি আর রিফাইন তেল দিয়েই মূলত তৈরি হয় এই লাচ্চা-সিমুই। লাল আর হলুদ রংও লাগে। আর দরকার দু’টো বড় কাঠের উনুন, আর দু’টো বড় কড়া। ব্যস্। এই সামান্য উপকরণেই কারিগরের হাতের গুণে তৈরি হয় লাচ্চা-সিমুই। আস্তানা রোডে গিয়ে এ দিন দেখা গেল, রান্না হচ্ছে জোর কদমে। গনগনে উনুনের ধারে বসে সিমুইয়ের লেচি কড়াইতে ফেলছিলেন শেখ আবুল। বললেন, “অনেকেই মনে করেন, বেশি আয়ের জন্য আমরা ভিন রাজ্যে আসি। কিন্তু কতই বা রোজগার হয়! আসতে হয়, অভাব বড় জ্বালা! রোজকার মজুরি পাই। দিনের দু’বেলার খাবার অবশ্য মালিক দেয়।”
বছরে দু’বার ঈদের সময়ে বিহার থেকে আসেন কুড়ি থেকে পঁচিশ জনের এই দলটি। দলের প্রধান মহম্মদ কওসর বলেন, “লাচ্চা আর সিমুইয়ের ব্যাপক চাহিদা এখানে। সে জন্যই অত দূর থেকে আসা। এখানে তো এই খাবারের ব্যাপক চাহিদা। তৈরির সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায়। তবে এখন তো কলকাতাতেও তৈরি হচ্ছে। তাই লাভ একটু কমছে।”
বিহারেও অবশ্য লাচ্চা, সিমুইয়ের বেশ চাহিদা রয়েছে। তবে বাংলাতেই ব্যবসা বেশি বলে জানান ওঁরা। গঙ্গা শর্মা, কালম গাজির কথায়, “অনেকেই এখন ব্যবসা বুঝে বিহার থেকে কলকাতায় আসছেন।”
বিহারে সামান্য জমি জিরেত রয়েছে এই অভাবী মানুষগুলোর। সারা বছর তাতেই চাষ করেন। ঈদের মরসুমে চলে আসেন এখানে। কিন্তু অভাব যতই থাক, মজুরি যতই কম মিলুক, খাবারের গুণমানের সঙ্গে একটুও আপোষ করতে রাজি নন ওঁরা। কড়ায় ফুটন্ত তেলে সিমুই ভাজতে ভাজতে ইমতিয়াজ তাই বলে ওঠেন, “এ সব খাবার তৈরি করতে হয় খুব সাবধানে। বাজারের ময়দা দিয়ে লেচি তৈরির পরে ভাল রিফাইন তেলে ভাজতে হয়। ব্যবহার করতে হয় এক নম্বর রং।” |