৫০০ বছরের শিবলিঙ্গ চুরি নলহাটিতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নলহাটি |
শেষে শিবলিঙ্গও!
দুর্মূল্য বিগ্রহ, প্রতিমার অলঙ্কার কিংবা প্রণামীর বাক্স ভেঙে টাকা চুরি ঘটনা তো হরদম ঘটে। চোরেরা এ বার শিবলিঙ্গ চুরি করতেও ছাড়ল না। মন্দির থেকে আস্ত শিবলিঙ্গটাইও উপড়ে নিল দুষ্কৃতীরা!
রবিবার গভীর রাতে এমনটাই ঘটেছে নলহাটি থানার মেহেগ্রামে। গ্রামের প্রাচীন রায়জি বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো শিবমন্দিরের শিবলিঙ্গ চুরি হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও চুরির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। শিবলিঙ্গটিও উদ্ধার হয়নি। যার জেরে এলাকাবাসীর মধ্যে পুলিশের প্রতি ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |
নলহাটি থানার মেহেগ্রামে প্রাচীন এই মন্দির থেকেই উপড়ে নেওয়া হয়েছে শিবলিঙ্গ। |
এমনিতে গত বছরই বীরভূম জেলায় বহু মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটেছিল। কোথাও কয়েকশো বছরের দুর্মূল্য বিগ্রহ নিয়ে চম্পট দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা, কোথাও তাদের নজর ছিল প্রতিমার সোনা-রুপোর অলঙ্কারে। কোথাও খোয়া যায় প্রণামীর বাক্সও। শুধু নলহাটি শহরে অন্তত চারটি মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটে। এমনকী স্থানীয় তেজহাটি গ্রামে প্রাচীন রাধামাধব মন্দির থেকে দুর্মূল্য বিগ্রহ ও গয়না চুরি যায়। প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই পুলিশ চুরি যাওয়া সামগ্রী উদ্ধার করতে পারেনি। তখন পুলিশের তরফে ওই চুরির ঘটনায় একটি চক্র সক্রিয় বলে অনুমানও করা হয়েছিল। যদিও কেউই ধরা পড়েনি।
নলহাটির মেহেগ্রামের রায়জি বাড়ি গ্রামের প্রাচীন পরিবার হিসেবে পরিচিত। তাঁদের বাড়িতে পারিবারিক দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি বাড়ির সীমানার মধ্যে একটি শিবমন্দিরও আছে। ওই শিবমন্দিরেই চুরির ঘটনাটি ঘটেছে। মন্দির ও শিবলিঙ্গ দু’টিই প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো। ৮০ কেজি ওজনের প্রায় আড়াই ফুট উঁচু ওই শিবলিঙ্গ কষ্টিপাথর দিয়ে তৈরি। পরিবারের সদস্য কার্তিক মিশ্ররায়, চরণ মিশ্ররায় জানিয়েছেন, আড়াই বছর আগে মন্দির সংস্কার করে নতুন করে পুরনো শিবলিঙ্গটিই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। শিবমন্দিরে পুজোর দেখভাল করার জন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি কমিটিও আছে।
ওই কমিটির সদস্য গয়ানাথ মিশ্ররায় বর্তমানে মন্দিরটির দেখভাল করেন। সোমবার তিনি বলেন, “পরিবারের প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় মন্দিরে পুজো হয়। রবিবার সন্ধ্যায় আরতি শেষ হওয়ার পরে রীতি অনুযায়ীই মন্দিরের চাবি মন্দিরেই রেখে এসেছিলাম। সোমবার ভোর ৫টা নাগাদ মন্দিরে প্রণাম করতে এসে লক্ষ করি মন্দিরের লোহার গেটের তালা ভাঙা। নীচে পড়ে আছে। মন্দিরের ভেতরে চোখ পড়তেই দেখি শিবলিঙ্গ আর নেই।” সঙ্গে সঙ্গে তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের খবর দেন। খবর যায় নলহাটি থানার পুলিশের কাছেও। এ দিনই ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ তদন্তও শুরু করেছে। |
এখানেই বসানো ছিল শিবলিঙ্গ। |
পুলিশ অবশ্য ওই চুরি নিয়ে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নানা অসঙ্গতি দেখতে পেয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর মিলছে না বলেই পুলিশের দাবি। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “শিবলিঙ্গটি অনেক ভারি ছিল। ফলে কোনও একা মানুষের পক্ষে তা চুরি করা সম্ভব নয়। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে ওই চুরিতে অনেকেই জড়িত আছেন।” পুলিশের সন্দেহ, অনেকে মিলে রীতি মতো গাড়ি নিয়ে এসে শিবলিঙ্গটি চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওই পরিবার বা প্রতিবেশীরা কেউ কেন কোনও আওয়াজ পেলেন না, তা বোধগম্য হচ্ছে না পুলিশের।
এ দিকে এই ধরনের ঘটনায় ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মনে। গত বছরের মতো পরপর না হলেও এ বছরও দু’ একটি মন্দিরে চুরি ঘটেছে। তারপরেই এই ঘটনা। ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলছেনই। আগের বছর মন্দিরে চুরির পরে পুলিশের তরফে থানায় থানায় একটি আলাদা করে বৈঠক করা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তারপরে আর কিছুই হয়নি। ফলে চুরি যাওয়া সামগ্রী উদ্ধার তো দূরঅস্ত, এ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে এখানকার পুলিশ কতটা কার্যকরী তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন জেলার মানুষ।
মেহেগ্রামেরই বাসিন্দা তথা নলহাটি এলাকার পুরোহিত সমাজের সদস্য রাখহরি চক্রবর্তীর ক্ষোভ, “এটা খুবই লজ্জার ব্যাপার। একের পরে এক মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। অথচ পুলিশ খালি আসছে, তদন্ত করে চলে যাচ্ছে। কোনও কিনারাই করতে পারছি না। চোরেরা মন্দিরকেও ছাড়ছে না। যা ঘটছে তাতে মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে!” |