ইন্ধন দিচ্ছে গুরুঙ্গদের বিক্ষোভ
আবার চাঙ্গা কামতাপুর-কোচবিহারের দাবি
দাবিটা পুরনো। কিন্তু গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পথে নামতেই আরও পৃথক রাজ্যের দাবিতে নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়ল উত্তরবঙ্গে। উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার সমতল এলাকায় আলাদা আলাদা রাজ্য গঠনের দাবি নিয়ে পৃথক আন্দোলনের ডাক দিল কামতাপুর পিপলস পার্টি, কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি এবং গ্রেটার কোচবিহার পিপলস পার্টি। প্রথম দু’টি দলের দাবি, পৃথক কামতাপুর রাজ্য। তৃতীয়টির দাবি আলাদা কোচবিহার রাজ্যের। যে দাবিকে ঘিরে আগামী দিনে উত্তরবঙ্গের সমতলেও নতুন করে অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কায় প্রশাসন।
রবিবার দিনভর ধূপগুড়ির ডাউকিমারি গ্রামে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক করে পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে কামতাপুর পিপলস পার্টি। ২১ অগস্ট মহামিছিল করে জলপাইগুড়ি বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এর পরে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে যৌথ মঞ্চ গড়তেও উদ্যোগী হয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিখিল রায় বলেন, “পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। এই দাবিতে ১৯৬৯ থেকে আন্দোলন চলছে। এ বার আমরাও উত্তরবঙ্গ জুড়ে আন্দোলন করব।” বৈঠকে বিমল গুরুঙ্গদের প্রসঙ্গ উঠলেও সংঘাত এড়াতে মোর্চার আন্দোলনের সরাসরি বিরোধিতা বা সমর্থন, কোনও কিছুই না করার সিদ্ধান্ত হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ রায় বলেন, “আমরা ২০০৮ সালেই প্রশাসনকে বলেছি, তরাই ও ডুয়ার্সের কোনও এলাকা নিয়ে গোর্খাল্যান্ড করার চেষ্টা হলে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
কামতাপুর পিপলস পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
কারণ এলাকাগুলিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন।” একই ভাবে গভীর রাত অবধি শিলিগুড়ির শিবমন্দিরে বৈঠক চলে কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টির। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অতুল রায় বলেন, “পৃথক কামতাপুর রাজ্যের এবং ভাষার দাবি আদায়ের জন্য আমরা সর্বশক্তি দিয়ে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। রেল ও রাস্তা অবরোধ, ঘেরাও সবই হবে।” সমমনোভাবাপন্ন দল ও সংগঠনগুলির সঙ্গে জোট গড়া নিয়েও আলোচনা হচ্ছে জানিয়ে তাঁর হুঁশিয়ারি, “পৃথক কামতাপুর রাজ্যের জন্য অনেক রক্ত ঝরেছে। এ বার আমরাও শেষ দেখব!”
১৯৬৯ থেকে পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। ’৯৬ সালে কামতাপুর পিপলস পার্টি তৈরি হয়। ২০০৪ সালে তা ভেঙে তৈরি হয় প্রোগ্রেসিভ পার্টি। এই দু’টি দল মালদহ থেকে অসম সীমানা অবধি কামতাপুর রাজ্যের জন্য আন্দোলন করছে। তবে অসমের অল কোচ রাজবংশী স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন নমনি অসম থেকে মালদহ পর্যন্ত এলাকা প্রস্তাবিত কামতাপুর রাজ্যের মধ্যে রাখার দাবি তুলেছে।
এ দিনই বিকেলে পৃথক কোচবিহার রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে দিনহাটার প্রান্তিক বাজারে বৈঠক করে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস পার্টির (জিসিপিপি) কেন্দ্রীয় কমিটি। সমমনোভাবাপন্ন সংগঠনগুলির জোটের সিদ্ধান্ত নেয় তারাও। তাতে কামতাপুর পিপলস পার্টি এমনকী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতৃত্বের সহযোগিতাও চাওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জিসিপিপি-র সভাপতি বংশীবদন বর্মন বলেন, “ভারত-ভুক্তির চুক্তি অনুযায়ী কোচবিহার ‘গ’ শ্রেণির রাজ্য। অসাংবিধানিক ভাবে সেই রাজ্যকে জেলা করা হয়েছে। ওই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সকলকে একমঞ্চে সামিল করা প্রয়োজন।”
পৃথক রাজ্যের দাবি ঘিরে ২০০৮ সালে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কোচবিহার। অবিভক্ত গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে আন্দোলনের জেরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, দুই পুলিশ কর্মী এবং দুই আন্দোলনকারী নিহত হন। পুলিশ খুন-সহ একাধিক অভিযোগে বংশীবদন-সহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। বংশীবদনবাবু আত্মসমর্পণ করেন। ২০১১ সালে নয়া সরকার আসার পর জামিনে তিনি ছাড়া পান। পৃথক রাজ্যের দাবিতে অশান্তি জারি উত্তর-পূর্বেও। রবিবার অসমের কোকরাঝাড়ে পৃথক বড়োল্যান্ডের দাবিতে এক সমাবেশে যোগ দেন লক্ষাধিক মানুষ। আজ, সোমবার থেকে বড়োদের যৌথ মঞ্চ ৬০ ঘণ্টার অসম বন্ধ ডেকেছে। ডিমা হাসাওতেও ১০০ ঘণ্টা বন্ধ ডাকা হয়েছে। পৃথক কার্বিল্যান্ডের দাবিতে জ্বলছে কার্বি আংলংও। রবিবার বেশ কয়েকটি সরকারি অফিসে ভাঙচুর ও আগুন লাগানো হয়েছে। অসমে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ বিজয়া চক্রবর্তী।
এই মুহূর্তে কুড়িটিরও বেশি নতুন রাজ্য গঠনের আবেদন জমা রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। এক কর্তা জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সংগঠনের তরফে ওই আবেদনগুলি জমা পড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পশ্চিম ভারতে মহারাষ্ট্র ভেঙে বিদর্ভ, গুজরাত ভেঙে সৌরাষ্ট্রের মতো রাজ্য গড়ার দাবি। পূর্ব ভারতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে নতুন তিনটি রাজ্য গঠনের দাবির সঙ্গে রয়েছে বিহার-ঝাড়খণ্ডের এলাকা নিয়ে মিথিলাঞ্চল, বিহার-উত্তরপ্রদেশ-ছত্তীসগঢ়ের এলাকা নিয়ে ভোজপুর, ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড-ছত্তীসগঢ়ের এলাকা নিয়ে কোশল রাজ্য গড়ার দাবি। উত্তর-পূর্বে বড়োল্যান্ড, কার্বিল্যান্ড, পূর্ব নাগাল্যান্ড, কুকিল্যান্ডের মতো বেশ কিছু রাজ্যের দাবি রয়েছে। অজস্র ছোট ছোট রাজ্যের দাবি দক্ষিণ ভারতেও। তামিলনাড়ু-কেরল-কর্নাটকের এলাকা নিয়ে কঙ্গুনাড়ু, কর্নাটক-কেরলের এলাকা নিয়ে তুলুনাড়ু, কর্নাটক ভেঙে আলাদা কুর্গ রাজ্যের দাবি তার অন্যতম। উত্তরপ্রদেশ-মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থানের এলাকা নিয়ে ব্রজপ্রদেশ গঠনের দাবি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, মায়াবতীর জমানায় একমাত্র উত্তরপ্রদেশ সরকারই নিজে থেকে রাজ্য ভাগ করার (চার ভাগে) প্রস্তাব দিয়েছিল। তেলেঙ্গানা বাদ দিয়ে এখন রয়েছে ২৮টি রাজ্য। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, সব ক’টি নতুন রাজ্যের দাবি বা প্রস্তাব মানা হলে রাজ্যের সংখ্যা দাঁড়াবে অন্তত ৫০।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.