ব্রাজিলে কনফেডারেশনস কাপের সময় নেইমার নামটা নিয়ে প্রথম নানা আলোচনা কানে এসেছিল। এ বার তো বার্সেলোনার হয়ে মেসির পাশে ইউরোপে খেলবে ও। যা নিয়ে দারুণ হইচই চলছে। এই অবস্থায় ওর অ্যানিমিয়া ধরা পড়েছে শুনে খারাপ লাগছে। শুনলাম, বার্সেলোনার তরফে বলা হয়েছে, কিছুদিন আগে ওর টনসিলে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। সেই কারণেই নাকি রক্তাল্পতা।
এক জন চিকিৎসক হিসাবে নেইমারের অ্যানিমিয়ার পিছনে কারণটা ঠিক কী, সেটা জানা না থাকায় ওর অসুস্থতা কতটা গুরুতর, সেটা আমার পক্ষে জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। এটা বলব, টনসিলে অস্ত্রোপচারের জন্য কারও অ্যানিমিয়া হয় না। বরং অস্ত্রোপচার কোনও হেমাটোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারের জন্য করতে হয়েছিল কি না, সেটা জানা গেলে ছবিটা আর একটু পরিষ্কার হতে পারে। অস্ত্রোপচারের আগে নিশ্চয়ই ওর রক্তের রিপোর্ট করানো হয়েছিল। সেই রিপোর্টে কী আছে, সেটা এ ক্ষেত্রে তাৎপযর্পূর্ণ।
অ্যানিমিয়া নিয়ে নেইমার ফুটবল মাঠে নামতে পারবে কি না, সেই জল্পনা শুরু হয়েছে। আমি কিন্তু বলব, সবটাই নির্ভর করছে ওর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রার উপর। খুব সাদামাটা ভাবে বললে, আমাদের শরীরে অক্সিজেন বহন করে রক্তের লোহিত কণিকায় থাকা হিমোগ্লোবিন। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে শরীরে অক্সিজেনের অভাব তৈরি হয়। যা সরাসরি আমাদের কার্ডিও-ভাসকুলার ফিটনেসে প্রভাব ফেলে। শরীর খুব সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। একজন খেলোয়াড়ের যা বড় সমস্যা হতে পারে। কোনও খেলোয়াড়ের শরীরে যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১১ বা ১০ হয়, তা হলেও সে অ্যানিমিক। তবে খেলাধুলো চালিয়ে যাওয়ায় এটা বড় অন্তরায় নয়। কিন্তু হিমোগ্লেবিনের মাত্রা যদি ৮ বা ৭-এ নেমে যায়, তখন সেই খেলোয়াড় খুব সহজে হাঁফিয়ে যাবে, মাথা ঝিমঝিম করবে, বুকে ব্যথাও হতে পারে। এমনকী আরও জটিল পরিস্থিতিতে শরীরের কোষগুলো যদি ঠিকঠাক অক্সিজেন না পায়, অতিরিক্ত ক্লান্তি আর অক্সিজেনের অভাবে খেলতে নেমে সে মাঠে অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে।
নেইমার নাকি ছোটবেলা থেকেই বেশ রোগাসোগা। কিন্তু রোগা মানেই অ্যানিমিক, এটা জরুরি নয়। তবে ছোটবেলায় অপুষ্টিতে ভুগে থাকলে, শরীরে তার প্রভাব পড়বে। শুনলাম ওর ক্লাব নেইমারকে একটা বিশেষ ডায়েটে রেখেছে। সঙ্গে সাপ্লিমেন্টারি ভিটামিন দেওয়া হচ্ছে। এটা শুনে মনে হচ্ছে, ওর রক্তে আয়রন বা লোহার মাত্রা কমে গিয়ে থাকতে পারে। আর সেটাই পূরণ করতে আয়রন-সম্বলিত ডায়েট দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত এ সব ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে রোগীর ২-৩ মাস লেগে যায়।
একটাই আশঙ্কা, নেইমারের অ্যানিমিয়া যদি ক্রনিক হয়, তা হলে ওর পক্ষে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ফুটবল চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। |