জয়ন্ত সেনগুপ্তের প্রবন্ধ, (‘আশুবাবুর অবদান’, ১-৮) পড়লাম। গত ২৯ জুন ২০১৩ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শতবার্ষিকী সভাগৃহে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় রাজ্যপাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় আচার্যের সভাপতিত্বে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের দেড়শোতম জন্মদিন পালন এবং বর্ষব্যাপী স্মরণ-অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সে দিনের সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের তদানীন্তন মাননীয় প্রধান বিচারপতি। উপস্থিত ছিলেন কলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়ের মাননীয় প্রধান বিচারপতি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী প্রমুখ। সে দিনই আশুতোষ মেমোরিয়াল মিউজিয়াম এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে স্যার আশুতোষের সমাবর্তন-বক্তৃতাসমূহের একটি অত্যন্ত মনোগ্রাহী রুচিশীল প্রবন্ধ-গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, প্রত্যেক বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে স্যার আশুতোষ নামাঙ্কিত মেডেল প্রদান করা হবে স্যার আশুতোষের দেড়শোতম জন্মদিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য। এ ছাড়া প্রতি বছর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় মেমোরিয়াল বক্তৃতা আয়োজিত হবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ভিজিটিং প্রফেসর-পদ সৃষ্টি করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ইতিবাচক আশ্বাস পাওয়া গেছে। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভারতে উচ্চশিক্ষার গতিপ্রকৃতি বিষয়ে জাতীয় স্তরে একটি সম্মেলন আয়োজিত হবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যেরা এই সম্মেলনে ভাষণ দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কর্ণধার অধ্যাপক বেদ প্রকাশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই সম্মেলন উদ্বোধন করতে। সেখানে স্যার আশুতোষের প্রশাসনিক দক্ষতা ও পাণ্ডিত্যের বিষয়টি দেশের সামনে আরেক বার তুলে ধরবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রছাত্রীরাই দেশের ভবিষ্যৎ; আশুতোষের দেড়শোতম জন্মদিনে তাদের জন্য একটি বক্তৃতা-প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে বিশ্ববিদ্যালয়, এ নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। এ দেশের উচ্চশিক্ষায় স্যার আশুতোষের অবদান হিমালয়-সমান এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সব সময় স্যার আশুতোষের সেই অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে।
সুরঞ্জন দাস। উপাচার্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
|
পশ্চিমবঙ্গের মহাবিদ্যালয়গুলির অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য চার বছর পরে কলেজ সার্ভিস কমিশন আবার ইন্টারভিউ নেওয়া শুরু করেছে, এটা স্বস্তিকর। অতীতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রতিনিধি রূপে এই প্রক্রিয়ায় একাধিক বার যুক্ত থেকেছি। আচার্যের মনোনীত প্রতিনিধি রূপেও থেকেছি। তখন দেখেছি, এবং তেমনই স্বীকৃত প্রথা বলে জানতাম, যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একাধিক মহাবিদ্যালয় আছে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কোনও অধ্যাপক নিজেদের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ইন্টারভিউয়ে উপস্থিত থাকেন। প্রফেসর পদাধিকারী অধ্যাপক বিভাগে না-থাকলে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর (তখন রিডার বলা হত) পদাধিকারীকেও থাকতে দেখেছি।
২০১৩-র ইন্টারভিউয়ে তার প্রবল ব্যতিক্রম দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ ভাবে বলছি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের কথা। এখানে ‘সিধু কানু বিরসা’ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি হয়েছেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক এবং গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক। অথচ কলকাতা, কল্যাণী, উত্তরবঙ্গ এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা-র অধ্যাপকেরা নিজ বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করছেন। সর্ব ক্ষেত্রেই পরিবর্তন ঘটলে বৈষম্যের কথাটি মনে হত না। আর শুনেছি, ইন্টারভিউয়ে তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত প্রার্থীদের জন্য এক জন বিশেষ প্রতিনিধি (সেই সম্প্রদায়ভুক্ত) থাকার কথা। তেমন কেউ আছেন কি? |
যদি এমন হয় যে, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যরা যে নাম পাঠাবেন, সেটিই বিনা প্রশ্নে গ্রহণ করবে কমিশন, তা হলে আমার প্রশ্নটি উপাচার্যদের সামনেও বিনীত ভাবে রাখছি। যদি প্রফেসর পদাধিকারী না-হলে বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি করা যাবে না এমন নিয়ম থাকে, তা হলে বলব, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার প্রফেসর আছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন ছয় জন প্রফেসর পদাধিকারী অধ্যাপক। তাঁদের এক জনও যোগ্য বলে বিবেচিত হলেন না কেন?
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক রূপে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে একটি কথা মনে হচ্ছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ সারা ভারতের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ সমূহের মধ্যে একমাত্র বিভাগ যেটি ইউ জি সি কর্তৃক ‘উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্র’ রূপে স্বীকৃত। কী কঠিন শ্রমের মধ্য দিয়ে বাংলা বিভাগের সকলে সমবেত ভাবে বিভাগকে এই জায়গায় নিয়ে আসতে পেরেছিলাম আমরা। বর্তমান কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ড. রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় ছিলেন আমাদের সহকর্মী এবং এই প্রয়াসের অন্যতম রূপকার।
আজ কোন কারণে এই উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্রের ছয় জন অধ্যাপকের মধ্যে এক জনও কলেজ সার্ভিস কমিশনের ইন্টারভিউয়ে নিজের বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্য বলে বিবেচিত হলেন না? জানতে পারলে আন্তরিক কৃতজ্ঞ থাকব।
সুমিতা চক্রবর্তী। কলকাতা-৩২ |