বিনোদন সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়তে
সিনেমা হল দান বৃদ্ধের
দেশের অন্যতম প্রাচীন বাণিজ্য শহর জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের বঙ্গ-সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র গড়ে উঠতে চলেছে জৈন সম্প্রদায়ের অশীতিপর এক বৃদ্ধের হাত ধরে। মৌখিক প্রতিশ্রুতি নয়। নাটক, সংগীত, অঙ্কন ও সিনেমা-সহ বঙ্গ-সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখাপ্রশাখার চর্চাকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের প্রাচীন সিনেমা হলটিই তিনি দান করে দিলেন জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভাকে। বিরাশি বছরের বৃদ্ধ ওই দাতার নাম জয়কুমার জৈন। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের চুড়িপট্টি এলাকায় ১৯৫৫ সালে ২১ শতক জমির উপর লক্ষ্মী টকিজ নামে ওই সিনেমা হলটি বানিয়েছিলেন জয়কুমার জৈন। জিয়াগঞ্জের ভূমিপুত্র জয়কুমারবাবুর বর্তমান বাস কলকাতায়। গত বৃহস্পতিবার ৮০০ আসনের ওই প্রেক্ষাগৃহটি তিনি পুরসভার নামে দানপত্রে স্বাক্ষর করেন।
এখানেই হবে প্রস্তাবিত প্রকল্প। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের পুরপ্রধান শঙ্কর মণ্ডল বলেন, “ঐতিহ্যশালী ওই ভবনের দাম বর্তমান বাজার দর অনুসারে এক কোটি টাকারও বেশি। বড় কথা আর্থিক মূল্যের থেকে ওই ভবনের ঐতিহাসিক মূল্য আরও বেশি। ওই দানের জন্য এলাকার মানুষ জয়কুমারবাবুর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।” কলেজ সার্ভিস কমিশনের সদস্য তথা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কিশোর রায় চৌধুরীর বাড়ি জিয়াগঞ্জে। কিশোরবাবু বলেন, “সাড়ে চারশো বছর আগেই ভাগীরথী নদীর দু’ পাড়ের যমজ শহর জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ বাণিজ্যবন্দর হিসাবে আর্ন্তজতিক খ্যাতি ছিল। ১৬৬০ সালেই রেশম, নীল ও লবন ব্যবসার জন্য এই শহরটির খ্যতি ছিল জগৎ জোড়া। কিন্তু শহরে এত দিন ছিল না সংস্কৃতি চর্চার কোনও মঞ্চ। সেই লজ্জা দূর হতে চলেছে এই দানে।”
জিয়াগঞ্জের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সমীর ঘোষ বর্তমানে কাব্যচর্চা ও সাহিত্য সম্পাদনার সর্বক্ষণের কর্মী। তিনি বলেন, “নট নাট্যকার ও সিনেমা অভিনেতা প্রয়াত বিধায়ক ভট্টাচার্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চিত্রকর প্রয়াত ইন্দ দুগর, প্রয়াত কীর্তন সম্রাজ্ঞী রাধারানি দেবী জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের সন্তান। অথচ সেই শহরেই কবি সম্মেলন, সংগীতানুষ্ঠান, বা চিত্রপ্রদশর্নীর জন্য কোনও মঞ্চ নেই। বঙ্গ-সংস্কৃতি চর্চার সেই অভাব এতদিন পর জৈন সম্প্রদায়ের অশীতিপর বৃদ্ধের হাত ধরে পূরণ হতে চলেছে। এলাকার মানুষের কাছে এর চেয়ে বড় সুখবর আর কী হতে পারে!”
সেই প্রত্যাশাতেই কোটি টাকার সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের ভোগ দখলের জন্য না রেখে বিনা পয়সায় পুরসভার হাতে অর্পণ করলেন অশীতিপর বৃদ্ধ। খ্যাতিমান নির্মাণ সংস্থার মালিক জয়কুমার জৈন বলেন, “২০ বছর ধরে সিনেমা হলটি বন্ধ। অনেকেই সম্পত্তি কেনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র হিসাবে সিনেমা হলটি গড়ে তুলতে চেয়ে পুরসভার থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। ভাবলাম সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র হিসাবেই সেটি গড়ে উঠুক! যে শহরে জন্মেছি, বেড়ে উঠেছি সেই শহরের যুগ যুগান্তের একটি অভাব তো ঘুচবে!”
মুর্শিদাবাদ জেলায় অনেক সিনেমা হল থাকলেও এক মাত্র লক্ষ্মী টকিজেই রয়েছে ‘বক্স’। সেখানেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, নির্মলা মিশ্র, সনৎ সিংহ-সহ অনেক শিল্পী অনুষ্ঠান করেছেন। রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়ার আগে সেখানেই সভা করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায় পুরপ্রধান শঙ্করবাবু বলেন, “এমন একটি ঐতিহ্যময় ভবনের স্থাপত্য রীতির কোনও পরিবর্তন করা হবে না। অবিকৃত রেখেই সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ভবন সংস্কারের কাজ শুরু করে দেওয়া হবে। নাটক, সংগীত, চিত্রকলা-সহ বঙ্গ সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখাপ্রশাখার বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিবেশনের উপযোগী করে মঞ্চ ও প্রেক্ষাগৃহ গড়া হবে। সেই সঙ্গে আধুনিক কালের চাহিদা মেটাতে সিনেমা দেখার দন্য ‘মাল্টিপ্লেক্স’-এর‘ ব্যবস্থা থাকবে।” প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে আবহমানের অভাব পূরণের সঙ্গে জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের প্রাপ্তির ভাঁড়ার ভরে উঠবে ষোল আনার উপর বিশ আনা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.