ঈদের মরসুমে ক্রমেই জাঁকিয়ে বসেছে জঙ্গি হানার আতঙ্ক। আর তারই মধ্যে সামনে এল নয়া তথ্য। গত দু’সপ্তাহে ইরাক, লিবিয়া, পাকিস্তান-সহ ন’টি দেশের একাধিক জেল থেকে পালিয়েছে প্রায় দেড় হাজার জঙ্গি তথা অপরাধী। এবং ইন্টারপোলের ধারণা, এদের জেল থেকে পালাতে সাহায্য করেছে খোদ আল কায়দা। হামলার জন্য যাতে যথেষ্ট সংখ্যক জঙ্গি হাতে থাকে, তা নিশ্চিত করতেই এই পথ নিয়েছে ওই জঙ্গি সংগঠন, আশঙ্কা ইন্টারপোলের।
সে আশঙ্কা উস্কে দিয়েছে জালালাবাদে ভারতীয় কনসুলেটের সামনে হামলা। শনিবারে আত্মঘাতী জঙ্গিদের সেই হামলায় নিহত হয়েছেন বারো জন। অন্য দিকে, একটি ওয়েবসাইটে মিলেছে আল কায়দা প্রধান আল- জাওয়াহিরির অডিও রেকর্ডিং। সেখানে মিশরে মহম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার দায়ে মূলত আমেরিকাকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন জাওয়াহিরি। সব মিলিয়ে তাই জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আরও বাড়ছে।
অবশ্য গত সপ্তাহ থেকেই এই হানার আশঙ্কা করছে ইন্টারপোল। শুক্রবার পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কর্মরত নিজের নাগরিকদের জন্য ‘ট্র্যাভেল অ্যালার্ট’ জারি করে আমেরিকা। ইয়েমেন, ওমান, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত-সহ আরব দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে আপাতত যাতে কোনও মার্কিন না যান, তা সুনিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ করে ওবামা সরকার। তা ছাড়া, রবিবার ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও আরও কয়েকটি দেশে সব মিলিয়ে নিজেদের ২২টি দূতাবাস ও কনসুলেট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে আমেরিকার বিদেশ দফতর। গত সপ্তাহ থেকে দফায় দফায় বৈঠক করেছে সে দেশের গোয়েন্দা দফতর। হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, নাগরিক সুরক্ষার ব্যাপারে কড়া নজর রেখেছেন স্বয়ং ওবামা। বছর পনেরো আগে নাইরোবি এবং দার এস সালামে মার্কিন দূতাবাসের উপরই বোমাবর্ষণ করেছিল আল কায়দা। সে ঘটনার যাতে কোনও ভাবেই পুনরাবৃত্তি না হয়, তা মাথায় রেখেই নিরাপত্তা বাড়াচ্ছে ওবামা সরকার।
তবে হামলার মূল লক্ষ্য শুধু আমেরিকা নয়, তামাম পশ্চিম দুনিয়া। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানির মতো দেশগুলিও তাই নিজেদের সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও আঁটোসাটো করছে। ব্রিটেন ও জার্মানি জানিয়েছে, রবিবার ও সোমবার ইয়েমেনে নিজেদের দূতাবাস বন্ধ রাখবে তারা। সানায় কর্মরত ব্রিটেনের নাগরিকদের ইতিমধ্যেই ইয়েমেন ছাড়তে বলা হয়েছে। বেশ কিছু দিনের জন্য বন্ধ রাখা হবে ফ্রান্সের দূতাবাসও। আবার ঢাকায় নিজেদের দূতাবাস বন্ধ করতে চলেছে কানাডা।
এ দিকে ইয়েমেন নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে। বিভিন্ন দূতাবাসের সামনে বসে গিয়েছে সশস্ত্র সেনা প্রহরা। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলিতে বসেছে সেনা চেকপয়েন্ট। দেশ জুড়ে টানটান সতর্কতা। আসলে আমেরিকার গোয়েন্দা দফতর সূত্রের খবর, আগের বেশ ক’বারের তুলনায় এ বারের হামলার আশঙ্কা অনেকটাই বেশি। তা ছাড়া, গোপন সূত্রের মতে, সে হামলার খুঁটিনাটি তথ্য আমেরিকার হাতে পৌঁছেছে ইতিমধ্যেই।
সব মিলিয়ে তাই বাড়তি সতর্কতার পথই বেছে নিচ্ছে আমেরিকা তথা পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। |