নো চুদুরবুদুর

সরি, আসতে একটু দেরি হল।
না, না, বলুন। আমি বসে বসে প্রিমিয়ারের গেস্টদের ফোন করে জানছিলাম তাঁরা আসছেন কি না? (হেসে) কোনও চুদুরবুদুর করিনি।

শব্দটাকে তো আপনার ছবি বিখ্যাত বানিয়ে দিল। চুদুরবুদুর!
হ্যাঁ, তা একটু করল বইকী। আসলে কী বলুন তো, আমরা এ রকম ভাষা রোজ ব্যবহার করি। কিন্তু নিজেদের পরিচিত গণ্ডির মধ্যে। সভ্য সমাজের সামনে ব্যবহার করতে লজ্জা পাই।

যেটা ফ্যাতাড়ুরা পায় না?
একদম। আর চুদুরবুদুর আসলে কী?

কী?
চুদুরবুদুর হচ্ছে কাতুকুতু দেওয়া। চুদুরবুদুর হচ্ছে পাড়ায় কেউ চাঁদা দিল না, তো তার বাড়ির সামনে পায়খানা করে দিলাম। সোফায় একটা গর্ত আছে, সেটা খুঁচিয়ে বড় করলাম। কেউ হেঁটে যাচ্ছে, তার পিছনে কালি ছিটিয়ে দিলাম। এটাই চুদুরবুদুর।
আরও একটা ব্যাপার আছে। সেটা খুব ইন্টারেস্টিং...


কী ব্যাপার?
চুদুরবুদুরের খবরটা যখন আনন্দবাজারে বেরোল, তার পরেই বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে উঠল। এই শব্দটা পার্লামেন্টে ব্যবহার করা যায় কি না, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হল। আমার একটাই বক্তব্য, আমরা একটা কালচারাল ক্লিনিক্যালিটির মধ্যে বাস করি সবাই। আমরা ‘পেদে ফেলেছি’ বলতে লজ্জা পাই। এই লোকগুলো পায় না। আমাদের জীবনে ফ্রেঞ্চ পারফিউম আছে, ওদের জীবনের অঙ্গ পায়খানার গন্ধ। এই বৈপরীত্যটাই আমি তুলে ধরেছি ছবিটায়।

সম্প্রতি কোনও ছবির রিলিজের আগে এত ঝামেলা হয়নি যা আপনার ছবি নিয়ে হল।
হ্যাঁ সত্যি। আই অ্যাম টায়ার্ড। একটু পরে ছবি মুক্তি পাবে, আমার মনে হয় এটা এমন একটা ছবি যেটা দর্শকদের পোলারাইজড করে দেবে। কিছু মানুষ বারবার দেখবে। কিছু মানুষ গালাগালি দেবে। এটা আমি ধরেই এগিয়েছি। তবে ছবিটা মোটেই অ্যান্টি-তৃণমূল কী অ্যান্টি-সিপিএম কী অ্যান্টি-বিজেপি নয়। এটা অ্যান্টি-এস্টাব্লিশমেন্টের ছবি। ছবিটায় আমাদের রাজনীতির কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। পুলিশকেও আক্রমণ করা হয়েছে...

পুলিশকেও?
হ্যাঁ, পুলিশকেও। ‘টিনের তলোয়ার’ নাটকে একটা ডায়ালগ ছিল না, “যাই, কলকাতার বাবুদের গায়ে একটু ময়লা দিয়ে দিই।” এই ছবিটার এসেন্স সেটা। এমন কিছু লোকের কাহিনি যারা ময়লা দিয়ে দেয়, কাউকে কেয়ার করে না। নাক খুঁটে সোফায় মুছে দেয়। আমাদের সমাজের একেবারে নিম্নবর্গ মানুষের গল্প।

ছবি: কৌশিক সরকার
আমি তো বিপ্লব করছি না। শিল্পীরা তো বিপ্লব করে না
কালীঘাটে আমাদের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী থাকেন। কিন্তু সেটার সঙ্গে ‘কাঙাল মালসাট’য়ে
কালীঘাট দেখানোর কোনও সম্পর্ক নেই
আমি একটা জিনিস বুঝেছি, ব্রাত্যর কিছু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা আছে

আচ্ছা, গোটা বাংলায় এত খাল থাকতে আপনি কালীঘাটের খালের পাশে শ্যুটিং করলেন কেন?
হা হা হা হা। গল্পে ছিল বলে।

গল্পে বালিগঞ্জের বাড়ির কথা থাকলে পরিচালক বালিগঞ্জে শ্যুট করেন নাকি...
না, তা করে না। কিন্তু এই গল্পে কালীঘাটের একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। কালী বলতে আমরা বুঝি একটা ‘ব্ল্যাক ফোর্স’। ভূত-প্রেত, রাত, অন্তর্ঘাত, ষড়যন্ত্র কালীঘাটকে সেই অনুষঙ্গেই ব্যবহার করা হয়েছে।

কিন্তু আজকে আমাদের রাজনীতিতে কালীঘাটের অন্য তাৎপর্যও তো আছে?
হ্যাঁ, আছে তো বটেই। কালীঘাটে আমাদের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী থাকেন। কিন্তু সেটার সঙ্গে ‘কাঙাল মালসাট’য়ে কালীঘাট দেখানোর কোনও সম্পর্ক নেই।

ছবিতে একটি চরিত্রের নাম মদন। এটা নিয়ে সেন্সর কোনও ঝামেলা করেনি?
(হেসে) না, মদন নিয়ে কোনও আপত্তি করেনি সেন্সর বোর্ড।

এই গল্পটা যখন লেখা হয়েছিল তখন সিপিএম-এর রাজত্ব। তখন বলা হয়েছিল ফ্যাতাড়ুরা অ্যান্টি-সিপিএম। তাহলে সমীকরণটা কী? তৃণমূল কি ফ্যাতাড়ু?
না, তা নয়। সিপিএম-এর মধ্যেও ফ্যাতাড়ু থাকতে পারে। তৃণমূলের মধ্যেও তা-ই। ফ্যাতাড়ুরা শুধু অনুশাসনকে অস্বীকার করে। ওদের হাতে কোনও বন্দুক নেই। কোনও একে ৪৭ নেই। আছে কোদাল, আছে বাটখারা। ওরা যে কোনও শোষণের বিরোধী। তাই কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ফ্যাতাড়ুদের মিলিয়ে দেখা ঠিক হবে না। ফ্যাতাড়ুদের কোনও পতাকা নেই, কিন্তু সব রাজনৈতিক দলই তাদের ছাতার তলায় আনতে চেষ্টা করে।

আপনার রাজনৈতিক অবস্থান কী? আগে বামপন্থী ছিলেন, পরে পরিবর্তনের মিছিলে হাঁটলেন। এখন তৃণমূলের সমালোচনা করছেন।
আমি নিশ্চয়ই বামপন্থী। আমি বামপন্থী রাজনীতি নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করেছি। কিন্তু গত শতাব্দীর শেষে কমিউনিজমের যে পতন ঘটল, সেটা ভয়ঙ্কর। কমিউনিজমের প্রতি একটা বৃহৎ সংখ্যক মানুষের মোহভঙ্গ হল। তার মানে এই নয় যে আমি বামপন্থী আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়েছি। কিন্তু মোহচ্যুতি আমারও হয়েছিল। আর দেখুন ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’র সময়ে সিপিএম আমাকে যথেষ্ট আক্রমণ করেছিল। মঞ্চে ‘কাঙাল মালসাট’য়ের সময়ও আক্রমণ করা হয়েছে। ২০১৩তে শুধু সময়টা বদলে গেল।

আচ্ছা, এক দিকে ‘শেষের কবিতা’র অমিত-লাবণ্যর প্রেম নিয়ে ছবি করেছেন, অন্য দিকে ‘কাঙাল মালসাট’য়ের মতো ছবি। এই ভারসাম্যের চাবিকাঠিটা কী?
কোনও চাবিকাঠি নেই। আই অ্যাম ভেরি টায়ার্ড। আর কোনও দিন এ রকম দুটো ভিন্ন ধরনের ছবি করব না। আই হ্যাভ রিয়েলি স্ট্রাগল্ড। আমার শরীর একটু হলেও ভেঙে যাচ্ছে এই টেনশন নিতে নিতে। অন্য কাউকে রেকমেন্ডও করব না।

কেন চাপ বেড়ে গেছে আপনার?
প্রেশার তো বেড়েই গেছে। আমার এমনি হাইপার-টেনশন আছে। তার পর এত ঝামেলা। উফ্।

আচ্ছা, আমরা এই যে কনক্লেভ ডেলি-তে বসে লেবানিজ রোল খাচ্ছি। আপনি আইফোন ব্যবহার করেন। এই জীবনযাত্রা নিয়ে বিপ্লব করা যায়?
আমি তো বিপ্লব করছি না। শিল্পীরা তো বিপ্লব করে না। বব ডিলান বিপ্লবের গান করেন মানুষকে জাগিয়ে তোলার জন্য। তাই বলে কি কনসার্ট করেন না! চ্যাপলিন তো সারাজীবন গরিব মানুষের জীবন দেখালেন। কিন্তু তাঁর লস এঞ্জেলেসের বাড়িতে চব্বিশটা ঘর ছিল! এটা কোনও যুক্তি নয় যে আমার জীবন স্বচ্ছন্দ বলে আমি বিপ্লব দেখাতে পারব না।

অনেকে তো বলেন আপনি ‘ঘরে বাইরে’র সন্দীপ। স্বচ্ছন্দে থাকেন আর বিপ্লবের কথা বলেন।
না, আমি ‘ঘরে বাইরে’র সন্দীপ নই। আমি সন্দীপের মতন কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাগিরি করি না। কবীর সুমনের একটা গান আছে না, “আমি বন্ধ অনেকের মতো, টাকা দিয়ে ঢাকি জীবনের ক্ষত”। আমি অনেকটা সেই রকম। এবং আমি সেটা অনেস্টলি স্বীকার করি। আমি ফ্যাতাড়ু নিয়ে ছবি করেছি, কিন্তু আমি ফ্যাতাড়ু নই।

কবীর সুমনকে আপনি দাঁড়কাকের চরিত্রে কাস্ট করেছেন। কবীর সুমনের কথাবার্তা সেই অর্থে ‘কর্কশ’ বলেই কি উনি দাঁড়কাক?
না, কবীর সুমন ‘কর্কশ’ বলে উনি দাঁড়কাক নন। উনি দাঁড়কাক কারণ ওঁর কথার মধ্যে একটা অদ্ভুত কনফিডেন্স আছে। দাঁড়কাক ইজ প্রোফেটিক। দাঁড়কাক যখন কথা বলে সেটার মধ্যে একটা ভবিষ্যদ্বাণী থাকে।

মানে সিনেমার বাইরেও কবীর সুমন যা বলেন তার মধ্যে একটা ভবিষ্যদ্বাণী আছে?
আমার তো মনে হয় আছে। উনি যা বলেন, সেটা আমার কাছে অর্থ বহন করে। আরে ক’জন আর নিকারাগুয়ার বিপ্লব দেখেছে? এই মানুষটা দেখেছে। তাঁর কথার তো একটা দাম আছেই।

ব্রাত্য বসুকে আমন্ত্রণ করবেন আপনার ছবি দেখতে?
কেন করব না? অবশ্যই করব। ও আমাকে ওর নাটক দেখতে আমন্ত্রণ জানায়, আমিও তা-ই। আমাদের কিন্তু অনেক দিনের সম্পর্ক। ১৯৯৪-য়ে একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম আমি। সেই অফিসের নীচে ব্রাত্য দাঁড়িয়ে ছিল। নীচে নেমে বলেছিলাম আমার চাকরি হয়ে গেছে। দুই বন্ধু মিলে জিমিস কিচেন-এ সে দিন বিয়ার আর চিলি চিকেন খেয়েছিলাম।

তা হলে ‘কিং লিয়র’ নিয়ে যে এত ঝামেলা হল?
আমি একটা জিনিস বুঝেছি, ব্রাত্যর কিছু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা আছে। আমার একটা জিনিস খারাপ লেগেছিল। আমার সঙ্গে তো ওর বন্ধুত্ব আছে, প্রেসে কিছু বলার আগে ও একবার আমার সঙ্গে কথা বলে তো নিতে পারত। কিন্তু কী করা যাবে! কত ক্রিয়েটিভ মানুষের মধ্যেই তো ঝামেলা হয়।

মুখ্যমন্ত্রীকে ডাকবেন ‘কাঙাল মালসাট’ দেখতে?
এটার একটাই উত্তর হয়। আমি তো কোনও দিন বুদ্ধবাবুকে ডাকিনি আমার ফিল্ম দেখার জন্য।

বুঝলাম। আজকে অনেকে বলছেন শিল্পীদের মধ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আপনার ছবি ভাল লাগলেও আপনার বন্ধুরা সেটা বলতে ভয় পাবে।
হ্যাঁ জানি। একটাই কথা বলার আছে। আমি আজও আমার বন্ধুদের ওপর ভরসা রাখি। আমি এখনও ওদের বিশ্বাস করি। একটা জিনিস আবার বলব, ‘কাঙাল মালসাট’ কিন্তু অ্যান্টি-তৃণমূল ছবি নয়।

শেষ প্রশ্ন। সেন্সর বোর্ড যে আপনাকে এত হেনস্থা করল। আজকে রিলিজের দিন তাদের উদ্দেশে কিছু বলবেন?
ফ্যাতাড়ুদের মতন বললে এটাই বলতে হয়, “সবাইকে ঘাঁটাবেন না।” নিজের কাজ করুন।

মানে নো চুদুরবুদুর।
ইয়েস, নো চুদুরবুদুর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.