গাড়িতে করে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়ার পথে ওড়িশার ভদ্রকে শুক্রবার দুপুরে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল হলদিয়ার এক দম্পতি এবং তাঁদের দুই আত্মীয়ের। গুরুতর জখম হন চার জন। ওই রাতেই হুগলি এবং উত্তর ২৪ পরগনাতে তিনটি পথ দুর্ঘটনায় তিন জন এবং শনিবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় একটি দুর্ঘটনায় এক মহিলার মৃত্যু হয়।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে. ভদ্রকের দুর্ঘটনায় মৃতেরা হলেন পঙ্কজ দেবদাস (৫৫), তাঁর স্ত্রী মানসী দেবদাস (৪৩), তাঁদের বেয়ান প্রণতি মাহারা (৩৯) এবং পঙ্কজবাবুর দাদার শ্যালক অনিমেষ করণ (৫০)। আহতদের মধ্যে রয়েছেন পঙ্কজবাবুর বেয়াই, ভাইঝি, মেয়ে, এবং পরিচারিকার মেয়ে। হতাহতেরা সকলেই হলদিয়ার দুর্গাচকের বাসিন্দা। |
শুক্রবার সকাল ছ’টা নাগাদ একটি গাড়িতে পঙ্কজবাবুরা মোট আট জন হলদিয়া থেকে বেরোন। দুপুরে ভদ্রকের ৫ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে যাওয়ার সময়ে উল্টো দিক আসা একটি ডাম্পারের সঙ্গে তাঁদের গাড়িটির সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই চার জন মারা যান। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌঁছন পঙ্কজবাবুর ছেলে মৈনাক। তবে, গাড়ির চালকের খোঁজ মেলেনি।
ময়না-তদন্তের পরে মৈনাকের উদ্যোগেই দেহগুলি শনিবার দুর্গাচকে ফিরিয়ে আনা হয়। আহতদের নিয়ে এসে হলদিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মৈনাক বলেন, “পাঁজি দেখে বাবারা পুজো দিতে বেরিয়েছিলেন। স্ত্রীকে নিয়ে কিছু দিন আগেই ঘুরে এসেছিলাম বলে আমি যাইনি। একটা দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।”
শুক্রবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় দু’টি পৃথক দুর্ঘটনা ঘটে। পৌনে ১২টা নাগাদ ঠাকুর হরিদাস সেতুর কাছে পেট্রাপোলগামী ট্রাকের ধাক্কায় একটি ভ্যান থেকে ছিটকে পড়েন সাহেব আলি মণ্ডল (৪৩) নামে এক যাত্রী এবং চালক ভীম বিশ্বাস (৫৩)। ঘটনাস্থলেই তাঁরা মারা যান। সাহেব আলি নরহরিপুরের এবং ভীম বিশ্বাস খলিতপুরের বাসিন্দা ছিলেন। পুলিশ ট্রাকটি আটক করে। তার প্রায় এক ঘণ্টা আগে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সেতু দিয়ে মোটরবাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বনগাঁর মতিগঞ্জের বাসিন্দা দীপজ্যোতি মণ্ডল (২৪)। একটি কুকুর তাঁর বাইকের সামনে চলে আসায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি ছিটকে পড়েন। বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান।
হুগলির দুর্ঘটনাটি হয় চণ্ডীতলার কলাছড়ায়। ২৬ নম্বর রুটের দু’টি বাস রেষারেষি করতে করতে অহল্যাবাঈ রোড ধরে হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের দিকে যাচ্ছিল। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়িতে ধাক্কা মেরে বাসটি উল্টে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন। বাসের তলায় চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান চণ্ডীতলার জঙ্গলপাড়ার বাসিন্দা, মহাদেব পাল (৪৫) নামে এক যাত্রী। তিনি বাসের দরজায় দাঁড়িয়েছিলেন। আহত হন ২৫ জন। তাঁদের চণ্ডীতলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তিন জনকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। ঘটনার প্রতিবাদে গ্রামবাসীরা কিছু ক্ষণ বিক্ষোভও দেখান। মৃতের পরিবারের তরফে বাসের রেষারেষি এবং রাস্তার ধারে বেআইনি পার্কিংয়ের অভিযোগ দায়ের করা হয় থানায়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটির চালক-কন্ডাক্টর পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অন্য দিকে, শনিবার বিকেলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির ঝালবাড়ি মোড়ের কাছে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি যাত্রীবাহী গাড়ির সঙ্গে অন্য একটি গাড়ির সংঘর্ষে রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা ফতেমা বিবি (৪৫) নামে এক মহিলা মারা যান। আহত হন চার জন। সকলেই যাত্রীবাহী গাড়িটিতে ছিলেন। আহতদের কুলপি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। |