দলে রয়েছেন দীর্ঘদিন। তবু ভোটের লড়াইয়ে দলীয় প্রতীক পাননি ওঁরা। শেষে দলীয় নির্দেশ অগ্রাহ্য করেই মুচকি হেসে কে ‘আসল তৃণমূল’ তা প্রমাণ করতে নেমেছিলেন। ভোট শেষে হাসিটা আরও চওড়া হল।
দুর্গাপুর-ফরিদপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থী হয়েছিলেন সরিফ মণ্ডল, ইছাপুর পঞ্চায়েতে দাঁড়িয়েছিলেন প্রভাত গড়াই এবং গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে দাঁড়িয়েছিলেন কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায়। শুরুতেই সাংগঠনিক প্রভাব খাটিয়ে দলীয় প্রার্থীকে প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করাতে সফল হয়েছিলেন সরিফ মণ্ডল। কিন্তু বাকিদের রীতিমতো পরীক্ষায় বসতে হয় এবং দু’জনেই জিতে যান। তাই ভোট শেষে সন্তুষ্টির ছাপ প্রভাতবাবু, কাশীনাথবাবুর মুখে।
সরিফ মণ্ডলকে তৃণমূল প্রার্থী করেনি। নিজের জোরেই মনোনয়ন দাখিল করেন তিনি। দলীয় নেতৃত্ব প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের অনুরোধ করলেও সিদ্ধান্ত বদলান না। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শেষ মূহুর্তে দলীয় প্রার্থী বাপি সূত্রধরকেই নাম প্রত্যাহার করাতে হয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চায়েত সমিতিতে জিতে যান সরিফ মণ্ডল। তিনি বলেন, “প্রতীক পাইনি তো কি হয়েছে! আমি তো তৃণমূল প্রার্থী হিসাবেই জয়ী হয়েছি।”
ইছাপুর পঞ্চায়েতের ১৭ নম্বর আসনে জয়ী নির্দল প্রার্থী প্রভাতবাবু জানান, দলের গ্রাম কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হেতেডোবা পঞ্চায়েত আসনটিতে তৃণমূলের হয়েই তিনি মনোনয়ন জমা দেন। সিপিএমের হয়ে মনোনয়ন জমা দেন এক আদিবাসী প্রার্থী। তৃণমূলও তখন মঙ্গল সোরেনকে মনোনয়ন জমা দিতে বলে। দলীয় নেতৃত্ব মঙ্গলবাবুকেই দলীয় প্রতীক দেন। এ দিকে সিপিএম প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। প্রভাতবাবুর সমর্থনেই এগিয়ে আসে তৃণমূলের গ্রাম কমিটি। ওই কমিটির সভাপতি নির্মল গড়াই জানান, প্রভাতবাবু প্রথম থেকে তৃণমূলের সঙ্গে আছেন। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে স্থানীয় বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী জাহির আলমের পোলিং এজেন্ট ছিলেন তিনি। নির্মলবাবুর দাবি, “দলের প্রতীক পাওয়া প্রার্থীকে কোনওদিন দলের কোনও কাজে দেখেননি গ্রামের মানুষ।” এর পরেই সিদ্ধান্ত হয়, প্রভাতবাবুকে নির্দল প্রার্থী করার। ফল বেরোলে দেখা যায়, ৩৬৫ ভোট পেয়েছেন প্রভাতবাবু। মঙ্গলবাবু পেয়েছেন ২৫৩টি ভোট। ফল বেরোনোর পরে অবশ্য তৃণমূল ব্লক সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “একটা বোঝাবুঝি একটা হয়েছিল, মিটে গিয়েছে।”
গলসি ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায়কে অবশ্য বেজায় অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির জয়ী নির্দল প্রার্থী কাশীনাথবাবু। দু’দশক ধরে তিনি পঞ্চায়েত সদস্য। শেষ তিন বছর পঞ্চায়েত প্রধান। কিন্তু এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনি টিকিট পাননি। পঞ্চায়েত সমিতির ৯ নম্বর আসনে তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন জমা দেন। কিন্তু ১০ জুন, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিনে জানতে পারেন, ওই আসনে দলের হয়ে প্রার্থী হয়েছেন অনুপ চট্টোপাধ্যায়। ব্লক সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায় কাশীনাথবাবুর বিরুদ্ধে দলীয় নির্দেশ অগ্রাহ্য করার অভিযোগও আনেন। তাঁর দাবি ছিল, কাশীনাথবাবু প্রথমে পঞ্চায়েত সমিতিতে লড়বেন না বলে জানিয়েছিলেন। পরে তাঁকে আটকাতে সেই আসনেই মনোনয়ন জমা দেন। এরপরেই তাঁর প্রার্থীপদ বাতিল করে দেওয়া হয়। কিন্তু জয়ের পরে কী বলছেন তিনি? জনার্দনবাবু বলেন, “ওই আসনেই শুধু আমাদের দলীয় প্রার্থীকে হারিয়েছে তা নয়, গ্রাম পঞ্চায়েতে বেশ কিছু আসনেও ওর জন্য হারতে হয়েছে।’ কাশীনাথবাবুর জবাব, “লড়াইটা ছিল কে আসল তৃণমূল তা প্রমাণ করার। করে দেখালাম।” |