জেলা জুড়ে বামেদের ধস নামলেও মেখলিগঞ্জে দুর্গ অটুট রাখতে সমর্থ হয়েছে বামফ্রন্ট। ওই মহকুমায় তিনটি স্তরে অধিকাংশ আসন নিজের দখলে রেখেছে ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিএম। তৃণমূল কংগ্রেস গ্রাম পঞ্চায়েতে কিছু আসন বাড়িয়ে নিলেও পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে ৪টি আসনের একটিও দখল করতে পারেনি। এ বারের নির্বাচনে দিনহাটার মতো ফরওয়ার্ড ব্লকের দুর্গ ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। সেখানে মেখলিগঞ্জের দুর্গ রক্ষা করে কোচবিহারে বামেদের মুখরক্ষা করেছেন পরেশ অধিকারী। মেখলিগঞ্জের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক পরেশ অধিকারীর নেতৃত্বেই সেখানে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে।
পরেশবাবু বলেন, “সারা বছর ধরে মেখলিগঞ্জে সংগঠন শক্তিশালী করার কাজ করা হয়েছে। পাশাপাশি তৃণমূলের মিথ্যা চাকরির আশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করেছে সাধারণ মানুষ। ভোটারেরা ঠিকঠাক ভোট দিতে পেরেছে। তাই আমরা জিতেছি।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “সারা জেলার সঙ্গে মেখলিগঞ্জেও আমরা ভাল ফল করেছি। আরও ভাল ফল কেন হল না তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, মেখলিগঞ্জ ও হলদিবাড়িতে ১৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। এর মধ্যে ১২ টি গ্রাম পঞ্চায়েত ২০০৮ সালে দখল করেছিল বামফ্রন্ট তথা ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিএম। এবারে ১০ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে রাখতে সমর্থ হয়েছে তারা। বাকি ৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২ টি ত্রিশঙ্কু রয়েছে। বাকি দু’টি তৃণমূল কংগ্রেস দখল করেছে। মেখলিগঞ্জ ও হলদিবাড়ি দুটি পঞ্চায়েত সমিতি করেছে বামেরা। এ ছাড়া ৪ টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে ৩টি ফরওয়ার্ড ব্লক ও ১টি আসনে সিপিএম জয়ী হয়েছে। গোটা জেলায় ৩৩টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে ৬টি দখল করেছে বামেরা। এর মধ্যে ৪টি মেখলিগঞ্জ মহকুমায়। পরেশবাবু বলেন, “বাকি আসনগুলি কেন পেলাম না তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হবে।”
মেখলিগঞ্জের ব্লকে ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন রয়েছে। এর মধ্যে ভোটবাড়ি ছাড়া ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত ২০০৮ সালে বামেদের দখলে ছিল। এ বারে কুচলিবাড়ি, রানিরহাট ফরওয়ার্ড ব্লকের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। বাগাডাগরা ফুল কাদা বাড়ি ত্রিশঙ্কু। যেখানে ১০টি আসনের মধ্যে ২টি ফরওয়ার্ড ব্লক ৫টি তৃণমূল এবং ৩ টি নির্দল পেয়েছে। এ ছাড়া চ্যাংরাবান্ধা। জামালদহ, নিজতরফ ভোটবাড়ি এবং উছলপুখুরি নিজেদের দখলে রেখেছে বামেরা। হলদিবাড়িতে ৬টি পঞ্চায়েত রয়েছে। এর পর মেখলিগঞ্জ বিজেপি প্রধান ছিল। এ ছাড়া বাকি ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত বামেদের দখলে ছিল। এবারে দেওয়ানগঞ্জ ত্রিশঙ্কু হয়েছে। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে ফরওয়ার্ড ব্লক ৪টি, সিপিএম ২টি এবং তৃণমূল ৬টি আসন পেয়েছে। এ ছাড়া বক্সিগঞ্জ, দক্ষিণ বড় হলদিবাড়ি, হেমকুমারি, পার মেখলিগঞ্জ, উত্তর বড় হলদিবাড়ি নিজেদের দখলে রেখেছে বামেরা। কোচবিহার জেলায় ১২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে এবারে ২২টি দখল করেছে বামফ্রন্ট। এর মধ্যে ১০টি মেখলিগঞ্জের। কোচবিহার জেলা বাম ফ্রন্টের এক নেতা বলেন, “এ বারে কোচবিহারে বামেদের কিছুটা মুখ রক্ষা করেছে পরেশ অধিকারী।” |