দু’বার সন্তান হারিয়ে ৫৫-য় পৌঁছে ফের মা
যে-বয়সে নাতি-নাতনিকে কোলে নিয়ে আদর করার কথা, সেই বয়সে পৌঁছে সন্তানের জন্ম দিলেন উত্তর কলকাতার বাসিন্দা এক স্কুল-শিক্ষিকা। ৫৫ বছর বয়সে নতুন করে মা হয়েছেন শ্যামবাজারের বাসিন্দা ইন্দ্রাণী মিত্র। ছেলেকে মানুষ করার জন্য এ বার শিক্ষকতা ছেড়ে দেবেন বলেও প্রায় স্থির করে ফেলেছেন ইন্দ্রাণীদেবী। নতুন করে বাঁচার ইচ্ছেটাও ফিরে এসেছে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে।
দু’বার সন্তান হারানোর পরেও নতুন করে ফের সন্তানলাভের ইচ্ছে থেকেই মনের জোর ফিরে আসে সোমনাথ-ইন্দ্রাণীর। মাস তিনেক আগে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) পদ্ধতিতে ওভাম ডোনেশন (অন্য মহিলার ডিম্বাণু প্রতিস্থাপন)-এর মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ইন্দ্রাণী। সাড়ে সাত মাসে জন্মালেও শিশুটি সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন ইন্দ্রাণীদেবীর চিকিৎসক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম খাস্তগীর।
অথচ বছর দুয়েক আগে ছবিটা ছিল একেবারে অন্য রকম। বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছিল ইন্দ্রাণী ও তাঁর স্বামী সোমনাথ মিত্রের। তাঁদের চব্বিশ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে হায়দরাবাদে পড়াশোনা করতে গিয়ে ডেঙ্গিতে মারা যায়। মিত্র-দম্পতির জীবনের সব রং মুছে গিয়েছিল সেই দিন। সন্তানশোক অবশ্য সেটাই প্রথম ছিল না তাঁদের। ’৮৪ সালে তাঁদের প্রথম সন্তানও মাত্র এক মাস বয়সে চলে গিয়েছিল।
সুখী পরিবার। স্বাতী চক্রবর্তীর তোলা ছবি।
গৌতমবাবুর মতে, নানা কারণেই বেশি বয়সে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে অনেক মহিলাকেই। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি হওয়ার ফলে আজ তা আর অসম্ভবও নয়। ঝুঁকি থাকে ঠিকই। শারীরিক ও মানসিক দিক খতিয়ে দেখে তবেই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয় বলে জানান গৌতমবাবু। ইন্দ্রাণীর ক্ষেত্রে সব দিক বিচার করেই সন্তানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বেশি বয়সের সন্তানকে মানুষ করার মতো শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক অবস্থাও দেখা উচিত বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইন্দ্রাণীদেবীর কথা শুনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র বললেন, “এই ধরনের গর্ভসঞ্চারে নানা ঝুঁকি থাকে। শিশুর জন্মগত ত্রুটিও থাকতে পারে। সেগুলো আগে থেকে পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া দরকার। ওই মা ও শিশুকে আমার অভিনন্দন।”
যে মনের জোর থেকে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছেন মিত্র দম্পতি, সেই জোরটাও এই ধরনের গর্ভসঞ্চারে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ মুখোপাধ্যায় তাই বলেন, “প্রত্যেক নারীর মধ্যেই মা হওয়ার, সন্তানকে আগলে বেঁচে থাকার একটা প্রবণতা থাকে। কোনও মহিলার মধ্যে সেই ইচ্ছা তীব্র থাকলে এবং তিনি শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। যদি আর্থ-সামাজিক দিক ও অন্যান্য সব কিছু ঠিক থাকে তা হলে মানসিক ভাবে তাঁকে প্রস্তুত করে তোলা যায়।”
গৌতম খাস্তগীর জানান, মিত্র-দম্পতির ইচ্ছাশক্তির জোর তো ছিলই, তার উপর ইন্দ্রাণীদেবী সুস্থ ছিলেন। মনকেও তাঁরা তৈরি করেছিলেন। বেশি বয়সে সন্তানধারণের ঝুঁকি নিতে সাহায্য করেছে তাঁদের আর্থিক সচ্ছলতাও।
পঞ্চাশ মানে তাই থেমে থাকা নয়। সন্তানসুখ পেতে চাইলে বয়সের বাধাও যে পেরিয়ে যাওয়া যায়, প্রমাণ করলেন ইন্দ্রাণীদেবী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.