দলের বিরুদ্ধে তাঁরা কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘সবুজ তৃণমূল’ নামে গড়ে তুলেছিলেন পৃথক মঞ্চ। নির্দল হয়ে ভোটে লড়েছিলেন দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধেই। ভোটের ফল বেরোতেই দল-বিরোধী কাজের অভিযোগ তুলে সেই ‘সবুজ তৃণমূলের’ চার নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করে প্রত্যাঘাত করলেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
শুক্রবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তৃণমূলের জেলা কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক, রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি জানিয়েছেন, দল-বিরোধী কাজের জন্য জেলা কমিটির সদস্য মিহির বাউরি, দলের সংখ্যালঘু সেলের জেলা স্তরের নেতা সফি আনসারি, রঘুনাথপুর ১ ব্লক এলাকায় তৃণমূলের তপশিলি জাতি ও উপজাতি সেলের নেতা অঙ্কুর বাউরি এবং চোরপাহাড়ি অঞ্চলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা তাহির আনসারিকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিধায়ক বলেন, “দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর নির্দেশে ওই চার জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।” বহিষ্কৃত চার জনই রঘুনাথপুর ১ ব্লক এলাকার বাসিন্দা।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের ব্লক নেতৃত্ব ও বিধায়কের প্রতি ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ পদ্ধতিতে নির্বাচন পরিচালনার অভিযোগ তুলে ‘সবুজ তৃণমূল’ নাম নিয়ে দলেরই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতি ও তার অধীনে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির কিছু আসনে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ অংশের কিছু কর্মী। ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদীপ মাজির অভিযোগ, “সবুজ তৃণমূল নাম দিয়ে দলের মধ্যে উপদল তৈরি করে দলের প্রতীক পাওয়া প্রার্থীদের হারানোর ষড়যন্ত্র করেছিলেন ওই চার নেতা।” নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েতে ও সমিতির আসনে জিততে পারেননি বিক্ষুব্ধ প্রার্থীরা। কিন্তু, সমিতির একটি আসনে যুব তৃণমূলের রঘুনাথপুর ১ ব্লকের সভাপতি মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায় হেরে গিয়েছেন ‘সবুজ তৃণমূলের’ প্রার্থীর ভোট কেটে নেওয়ার জন্যই।
বস্তুত, এই বিক্ষুব্ধ অংশের নেতাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রথম থেকেই সরব হয়েছিলেন ব্লক তৃণমূলের নেতারা। রঘুনাথপুরে নির্বাচনী সভা করতে আসা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের কাছেও ওই দাবি জানানো হয়েছিল। দাবি জানানো হয় শান্তিরাম মাহাতোর কাছেও। দল সূত্রের খবর, নির্বাচনের আগে ওই নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পক্ষপাতী ছিলেন না দলীয় নেতৃত্ব। বিধায়ক পূর্ণচন্দ্রবাবুর কথায়, “ভোটের আগে কৌশলগত কারণেই আমরা ব্যবস্থা নিইনি।” পঞ্চায়েত নির্বাচনে রঘুনাথপুর ১ ব্লকে দলের সাফল্যর পরে ব্লক নেতারা কড়া ব্যবস্থা নিতে চাপ আরও বাড়ান জেলা নেতৃত্বের উপরে। ফল ঘোষণার পরে পরেই ‘সবুজ তৃণমূলের’ নেতাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়ে দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীগুলির প্রতি কড়া বার্তা দিল তৃণমূল বলেই মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল।
অন্য দিকে, মিহিরবাবুরা শুক্রবার অভিযোগ করেন, নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক দেওয়া নিয়ে আর্থিক দুর্নীতি করেছিলেন ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। তারই প্রতিবাদে দীর্ঘদিন ধরে দলে থাকা কর্মীরা নির্দল হয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন। মিহিরবাবুর দাবি, “ভোটের কয়েক দিন আগে জেলা সভাপতি আমাদের দল-বিরোধী কাজ থেকে সরে আসতে বলায় আমরা সব আসনেই তৃণমূল প্রার্থীদের হয়ে ভোট করিয়েছিলাম। সে জন্যই এই ব্লকে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মতো তৃণমূলকে হারতে হয়নি।” বহিষ্কারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওই বিষয়ে এখনও দলের তরফে আমাদের আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয়নি। আগে দল আমাদের বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানাক। তার পরেই আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাব।” |