উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
বর্মা কলোনি
নিরুপায় বাস
দেওয়াল ফাটিয়ে শিকড় ঢুকে পড়েছে। খসে পড়েছে চাঙড়, প্লাস্টার। বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে লোহার বিম। এ ছবি কামারহাটির বর্মা কলোনির আবাসনগুলির। দীর্ঘ দিন এখানে কোনও সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ।
বিটি রোডের সিইএসসি বাসস্টপের কাছে উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের জন্য ষাটের দশকে এই আবাসন তৈরি হয়। এটি কামারহাটি পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। এখানে চারটি ভবন রয়েছে। প্রতিটি তিন তলার। প্রতি তলে ১২টি করে ফ্ল্যাট রয়েছে। বর্মা (অধুনা মায়ানমার) থেকে আসা ভারতীয় বংশোদ্ভূত উদ্বাস্তুরা এখানে ঠাঁই পান। তাই এটি বর্মা কলোনি বলে পরিচিত। ছিলেন অন্য রাজ্যের কিছু বাসিন্দাও। সব মিলিয়ে এখানে ১৪৪টি পরিবার ছিল।
অভিযোগ, তৈরির পরে এই আবাসনগুলির নিয়মিত সংস্কার হয়নি। ফলে ফ্ল্যাটগুলি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। চারটি ভবনেরই বেহাল দশা। ভবনের গায়ে আগাছা গজিয়েছে। কয়েকটি ফ্ল্যাটে বৃষ্টির সময় ছাদ থেকে জল পড়ে। তখন ঘরের মধ্যেই পলিথিন টাঙিয়ে থাকতে হয়। কমন করিডরে ঢালাই খসে পড়ায় কাঠের পাটাতন পেতে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
জলের ট্যাঙ্কও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই আবাসিকদের পানীয় ও গৃহস্থালীর প্রয়োজনে নীচে থেকে জল আনতে হয়। যাঁদের সামর্থ্যে কুলিয়েছে তাঁরা এর মধ্যেই আবাসন ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তবে এখনও ৭০-৭৫টি পরিবারের ২৫০-৩০০ জন বাস করেন। আবাসিক সূর্য দে বলেন, “বাধ্য হয়ে বাস করতে হচ্ছে। অধিকাংশ আবাসিকই দরিদ্র। বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা করার সামর্থ্য নেই। সরকারকেই ব্যবস্থা করতে হবে।”
স্থানীয় কাউন্সিলর তথা কামারহাটির পুরপ্রধান সিপিএমের তমাল দে বলেন, “ওটি উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের জমি। পুরসভার কিছু করার নেই। উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরকে চিঠি দিয়েছি। আবাসিকদের সতর্ক করার জন্য নোটিস দিয়েছি। কিন্তু বাসিন্দারা কোথাও যেতে রাজি নন।”
আবাসিকরা জানান, মাস ছ’য়েক আগে স্থানীয় বিধায়ক তথা পরিবহণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের প্রতিনিধি হয়ে পুরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের সমীরণ দাস ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের গোপাল সাহা তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। নাগরিক সভাও হয়। তাঁরা পুরনো আবাসন ভেঙে নতুন আবাসন গড়ার আশ্বাসও দেন। কিন্তু তার পরেও কিছুই হয়নি। মন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “ওই আবাসন ভেঙে নতুন আবাসন তৈরি করা হবে। তৈরির আগে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।”
উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের ডেপুটি কমিশনার সমীররঞ্জন চট্টরাজ বললেন, ‘‘মন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আমরা বর্মা কলোনি পরিদর্শন করেছি। ওঁরা অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছেন। আমরা ওঁদের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল। বাসিন্দাদের ওখান থেকে সরিয়ে সংস্কারের বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’’

ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.