উত্তর কলকাতা
হয়নি পুনর্বাসন
আবাসন শিকেয়
ত্তর কলকাতার মসজিদ বাড়ি স্ট্রিটের কাটমার বাগান এলাকায় বেসিক সার্ভিসেস ফর আরবান পুওর (বিএসইউপি) প্রকল্পে দারিদ্রসীমার নীচে বসাবসকারী বাসিন্দাদের জন্য আবাসন নির্মাণের পরিকল্পনা কার্যত ভেস্তে গেল। বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জায়গা না পাওয়ার ফলেই কলকাতা পুরসভার এই সিদ্ধান্ত।
পুরসভার মেয়র পারিষদ (বস্তি উন্নয়ন) স্বপন সমাদ্দার বলেন, “আমি এলাকা ঘুরে দেখেছি। পুনর্বাসনের কোনও জায়গা না পাওয়ায় বিএসইউপি প্রকল্পে আবাসন নির্মাণ সম্ভব নয়। সেই কারণেই পরিকল্পনা থাকলেও এই প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া গেল না। যদি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায় তা হলে রাজীব আবাস যোজনায় এই প্রকল্পের কথা পুরকর্তৃপক্ষ ভাববেন। সেই কারণেই উত্তর কলকাতা সমেত শহরের বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের প্রকল্প নির্মাণের ব্যাপারে পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পুরসভা। পুরসভা নিজের খরচেই এই কাজ করবে।”
এই এলাকায় আবাসন প্রকল্পে সমস্যা কোথায়?
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রথমে ঠিক হয়েছিল, বস্তির কয়েকটি বাড়ি ভেঙে বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দিয়ে সেই জায়গায় বিভিন্ন পর্যায়ে আবাসন তৈরি করা হবে। কিন্তু পুনর্বাসনের জন্য জায়গা খুঁজতে গিয়েই সমস্যা তৈরি হল। কিছু দূরে দু’টি ফাঁকা জায়গা থাকলেও সেই জমি বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং রেল কর্তৃপক্ষের অধীনে। তাঁরা এই জমি ব্যবহারের অনুমতি দেননি। পরে, সামনের একটি বড় বাড়ির ছাদে অস্থায়ী ভাবে বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জায়গা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পুরসভার বিল্ডিং দফতর বাড়িটির কাঠামোর কথা ভেবেই ছাদে এই ধরনের পুনর্বাসনের জন্য জায়গার অনুমতি দেয়নি। ফলে এই প্রকল্পও আটকে যায়।
স্থানীয় কাউন্সিলর তথা পুরসভার মেয়র পারিষদ (খাদ্য ভেজাল প্রতিরোধ) পার্থপ্রতিম হাজারি বলেন, “বিধান সরণির কাছে কাশী বোস লেনের পার্কে পুনর্বাসনের কথা ভাবা হয়। কিন্তু পার্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় পুরসভার উদ্যান দফতর অনুমতি দেয়নি।” পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস  কুমার বলেন, “পুরসভার কোনও পার্কেই পুনর্বাসন দেওয়া যাবে না। কারণ, পার্ক নষ্ট হবে। এ ছাড়াও এই পার্কে বহু বছর ধরে দুর্গাপুজো হয়। এই মাঠটিকে ঘিরে এলাকার মানুষের আবেগও রয়েছে। মাঠ যাতে কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারেও পুজো কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া থাকে।”
বামফ্রন্টের আমলেই জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন-এর (জেএনএনইউআরএম) আওতায় বিএসইউপি প্রকল্পে শহরে ১৩ হাজার ৯১৬টি আবাসন বা ফ্ল্যাট করার পরিকল্পনা হয়েছিল। আবাসন নির্মাণের জন্য যে সমস্ত জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছিল সেগুলি হল পূর্ব কলকাতার রাজারঘাট, হাটগাছিয়া, আনন্দনগর, দক্ষিণ কলকাতার গার্ডেনরিচ, পাগলাডাঙা, তপসিয়া ও বেহালার ব্যানার্জিপাড়া। এই প্রস্তাবিত প্রকল্পের মধ্যে বামফ্রন্ট আমলে  রাজারঘাটে নির্মাণ করা হয়েছিল ৬০টি ফ্ল্যাট। এ ছাড়াও গার্ডেনরিচে আবাসন প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছিল।
পরবর্তী কালে, তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড ক্ষমতায় আসার পরেই রাজারঘাটে বাকি ১৪০টি ফ্ল্যাট এবং গার্ডেনরিচে ৩২০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করে প্রকল্পটি শেষ করে। এ ছাড়াও বেহালার ব্যানার্জিপাড়া, সেনহাটি কলোনি, পূর্ব কলকাতার ক্যানাল সাউথ রোডে আবাসন প্রকল্পের কাজে হাত দেয়। দক্ষিণের চেতলাতেও একটি আবাসন নির্মাণ করা হবে। অনেক জায়গায় আবাসন প্রকল্প নির্মাণের প্রস্তাব থাকলেও পুনর্বাসনের জন্য বাসিন্দাদের জায়গা না পাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
পুরসভা সূত্রে খবর, বিএসইউপি প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। কিন্তু এই বরাদ্দ অর্থে সমগ্র প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় বরাদ্দ অর্থ খরচ করা যায়নি। ফলে সেই অর্থ ফেরত চলে যাবে। বর্তমানে দারিদ্রসীমার নীচে বসাবসকারী মানুষদের জন্য আবসন প্রকল্প নির্মাণ করতে গেলে নতুন করে ফের রাজীব আবাসন যোজনায় আনতে হবে। স্বপনবাবু বলেন, “পুনর্বাসনের পরিকল্পনা ছাড়াই বামফ্রন্ট পরিচালিত বোর্ড অনেকগুলি আবাসন নির্মাণ করার প্রস্তাব দেয়।
সেই ভাবে টাকাও বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু খরচ করতে না পারায় তা ফেরত চলে যাবে। আমরা যেখানে যেখানে পুনর্বাসন দিয়ে কাজ করতে পারব সেখানেই রাজীব আবাসন যোজনায় এই প্রকল্পগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে পারব।”

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.