পড়াশোনা বন্ধ করে বিয়ে দিতে চেয়েছিল বাড়ির লোক। বাড়িতে থাকলে বিয়ে এড়ানো মুশকিল বুঝে ঘর ছেড়ে কাজের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছিল চার জন। তবে পথ থেমে যায় সেখানেই। ৩০ জুলাই অন্ডাল থেকেই রেলপুলিশ তাদের উদ্ধার করে অভিভাবকদের হাত তুলে দেয়।
১২ বছরের সাইলা, ১৫ বছরের জেবা, ১৬ বছরের রেশমা ও শাবানা ২৯ জুলাই ঝাড়খণ্ডের রাজমহল থানার সাহেবগঞ্জ-নয়াবাজার থেকে বনাঞ্চল এক্সপ্রেসে চড়ে বসেছিল। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ পৌঁছয় অন্ডালে। সকালে স্টেশনের কাছেই একটি মাঠ থেকে তাদের উদ্ধার করে রেলপুলিশ। সাইলা, জেবারা জানায়, বিড়ি বেঁধে সংসার চলে তাদের। ইচ্ছে ছিল, পড়াশোনা করে বাড়ির লোকেদের পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু বাড়ি থেকে এখনই জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। মাদ্রাসায় যেতেও বারণ করা হয়েছে। তাই বিয়ের হাত থেকে বাঁচতে বাড়ি থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা। জেবা জানায়, তাদের চার জনেরই এক অবস্থা। শাবানার বুদ্ধিতে তারা ঠিক করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাবে তবু বিয়ে করবে না। অন্য কোথাও গিয়ে খেটে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। শাবানা বলে, “আমরা ভেবেছিলাম, পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর চাকরি। কোনও না কোনও কাজ নিশ্চয় পাওয়া যাবে। তাই অন্ডালে নেমে যাই।”
রেলপুলিশ জানিয়েছে, ৩০ জুলাই সকালে রাজমহল থানা থেকে তাঁদের ফোনে জানানো হয়, চারজন ঘর থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের বাড়ির লোকেরা রেলস্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরছে, সম্ভবত তারা অন্ডালেরই টিকিট কেটেছিল। সেইমতো খোঁজাখুঁজি শুরু করে ওই চার কিশোরীকে অন্ডালের জিআর গ্রাউন্ডে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। তাদের উদ্ধার করে নিয়ে এসে আটক করে রাখেন তাঁরা। পরে অভিভাবকরা অন্ডালে এলে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
কিন্তু পুলিশ তাদের বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ায় ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা তাদের রয়েই গেল। যে জেদে ভর করে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল সেই জেদ কী করে অটুট থাকবে সেটাই তাদের চিন্তা। যদিও রেলপুলিশ জানিয়েছে, অভিভাবকেরা প্রাপ্তবয়স্ক না হলে বিয়ে দেবেন না বলে জানিয়েছেন। তবু ছলছল চোখে রেশমা বলে, “মনে হচ্ছে বাড়ির লোকের নজর এড়িয়ে আর কোথাও যেতে পারব না। জানি না কী হবে।” |