মা আসতে এখনও বেশ কিছুটা দেরি। তবে তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। বিশেষত, দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজার বা অন্যান্য সাবেক বাজারের তুলনায় শপিং মলগুলিতে মা বোধহয় আগেই এসে গিয়েছেন। চোখ ধাঁধানো ছাড় আর অত্যাধুনিক ডিজাইনের পোশাকের সম্ভারে মেঘ-বৃষ্টির মধ্যেই পুজোর বাজার শুরু করে দিয়েছেন শহরবাসী।
এমনিতে কেনাকাটা এখন আর পয়লা বৈশাখ বা পুজোর ঘেরাটোপে আটকে নেই। প্রত্যেকেই সারা বছর টুকটাক কেনাকাটা করে থাকেন। শহরের অন্যান্য দোকানগুলোতেও পুজোর বাজারের রমরমা এখনও সেভাবে শুরু হয়নি। কিন্তু পুজোর বাজার ধরতে আগেভাগেই শপিং মলগুলি জুতো থেকে জামাকাপড় সব কিছুতেই প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিতে শুরু করেছে। ফলে ভিড় জমেছে বেনাচিতি সিটিসেন্টারের শপিং মলগুলিতে।
শিশুদের পোশাক থেকে শুরু করে সালোয়ার কামিজ, কুর্তি বা লেটেস্ট ডিজাইনের পোশাক সবেতেই রয়েছে বিশেষ ছাড়। অনেকক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ পর্যন্তও ছাড় মিলছে। সিটিসেন্টারের এক শপিং মলে জামাকাপড় কিনছিলেন আরতি দাস। বললেন, “এখানে বেশ সস্তায় সুন্দর সব পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। ছোটদের জিন্সও ভালই এসেছে। পুজোর সময় বাড়ির শিশুদের তো ছোটখাটো উপহার দিতেই হয়। সুযোগ পেয়ে কিনে রাখছি।” |
তবে ছাড়ের ক্ষেত্রেও একেক দোকান একেক রাস্তা নিয়েছে। দামে ছাড় না দিয়ে অনেকেই একটি শাড়ির সঙ্গে অন্যটা ফ্রি বা একটি টি-শার্টের সঙ্গে অন্যটা ফ্রি-র ব্যবস্থা রেখেছে। সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না অনেকেই। শাশুড়িকে নিয়ে বাজারে এসেছেন রুমকি দাস। রুমকিদেবী বললেন, “এমনিতে পুজোর মাস খানেক আগে সবাই বাজার শুরু করে। কিন্তু শপিং মলে ছাড়ের দৌলতে এখন তা আরও আগে শুরু হয়ে গিয়েছে। সস্তায় মিলছে ট্রেন্ডি সব পোশাক।”
শুধু রেডিমেড পোশাক নয় ছাড়ের তালিকায় রয়েছে ভাগলপুরি সিল্ক, নেটের শাড়ি, গার্ডেন, জরদৌসি কাজ করা বিভিন্ন দামের শাড়িও। বেনাচিতির এক শপিং মলেও পুরুষদের নামী কোম্পানির জামাকাপড়ে চলছে নজরকাড়া ছাড়। সেখানে হাজির হয়েছেন প্রৌঢ় সুনীল কর। বললেন, “পুজোর অনেক দেরি ঠিকই। কিন্ত এখানে ভাল ছাড় চলছে তাই চলে এলাম। একটার সঙ্গে আরেকটা জিন্স ফ্রি পেয়ে কিনেও ফেললাম।” তাঁর মতে, বেনাচিতির পুরনো বাজারে এখনও পুজোর আঁচ লাগেনি। কিন্তু এখানে বাজার গমগমে। ক্রেতাদের ভিড় দেখে কলকাতা থেকে বিভিন্ন বুটিকও দুর্গাপুরের বিভিন্ন শপিং মলে আসর জমাচ্ছে। ডিজাইনার ব্লাউজ, শাড়ি, কুর্তি, পাঞ্জাবি থেকে রঙিন পাথরের নানা ধরণের গয়নাও রয়েছে তাদের সম্ভারে।
শপিং মলের এই ‘বাজার দখল’ নিয়ে কী বলছে সাবেক দোকানিরা? বেনাচিতি বাজার, স্টেশন বাজারের দোকানিদের কথায়, আমাদের পুজোর বাজার শুরু হয় অগস্টের শেষ দিকে। এখন থেকে পুজোর মাল তোলা শুরু হয়। পরে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে টুকটাক করে বাজার চলে। দুপুরের দিকে বাড়ির গিন্নিরাই বেশি ভিড় জমান। বেনাচিতি বাজারের এক দোকান মালিক বললেন, “কয়েকদিন ধরে আকাশ মেঘলা, বিকিকিনিও বিশেষ হচ্ছেনা। তাছাড়া আমাদের পুজো স্পেশাল বাজার শুরু হয় বোনাস ঘরে ঢোকার পরে। তখন নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকে না।”
চণ্ডীদাস বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী বিনয় পাল বলেন, “শপিং মলগুলির সেলে ভিড়ের খবর পেয়েছি। তবে আমরা এখন বিয়ের বাজার নিয়েই বেশি ব্যস্ত।” তবে একেবারে হাত গুটিয়ে বসে নেই এরাও। ইতিমধ্যেই ক্রেতাদের টেনে আনতে রকমারি উপায় ভাবতে শুরু করেছেন দোকানিরা। প্রতিযোগিতার বাজারে কে আর লক্ষ্মী হাতছাড়া করতে চায়! |