সম্পাদকীয় ১...
খণ্ডের সাধনা
ভারতের ২৯তম প্রদেশ তেলেঙ্গানার জন্মের কথা ঘোষিত হইয়াছে। অন্ধ্রপ্রদেশের দশটি জেলা লইয়া এই পৃথক রাজ্য গঠনের সিদ্ধান্তটি কেন্দ্রের ইউ পি এ সরকার তথা কংগ্রেস দলের। তেলেঙ্গানার দাবিতে আন্দোলন বহু দিনের, তথাপি এ ধরনের ছোট ছোট রাজ্যে প্রজাতন্ত্রকে বিভক্ত করিয়া ফেলার প্রবণতাকে কংগ্রেস এত কাল প্রশ্রয় দেয় নাই। ইতিপূর্বে তাই বিহার ভাঙিয়া ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ ভাঙিয়া ছত্তীসগঢ় এবং উত্তরপ্রদেশ ভাঙিয়া উত্তরাখণ্ড গঠনের দাবি ও আন্দোলনকে কংগ্রেস সে ভাবে সমর্থন করে নাই। বিজেপি পরিচালিত এন ডি এ সরকারই ওই তিন নূতন প্রদেশ সৃষ্টি করিয়াছিল। এ বার যে কংগ্রেস নেতৃত্ব তেলেঙ্গানায় সম্মত হইলেন, তাহার নেপথ্যে সুশাসনের যুক্তি ততটা নাই, যতটা আছে রাজনৈতিক তাগিদ। দেশব্যাপী দলের শক্তি ক্ষয় ও ভাবমূর্তি ম্লান হওয়ার প্রেক্ষিতে আগামী লোকসভা নির্বাচনে দলকে কিছুটা সুবিধা করিয়া দিতেই এই সিদ্ধান্ত। অতঃপর তেলেঙ্গানার জনসমর্থন কংগ্রেসের দিকে যাইবে এবং অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশ হইতে যাহা পাওয়া যাইত না, বিভাগ-উত্তর তেলেঙ্গানা হইতে তাহা পাওয়া যাইবে, এই আশাও সক্রিয় থাকিয়াছে।
প্রাপ্তিযোগের সম্ভাবনা বলিতে অবশ্য লোকসভার ১৭-১৮টি আসন। কংগ্রেস হাই কমান্ডের আশা, পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনকারী তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি অতঃপর কংগ্রেসে মিশিয়া যাইবে। এ কংগ্রেস নেহরুর কংগ্রেস নয়, যিনি মনে করিতেন, আন্দোলনের আবেগ বা অনশন নয়, তথ্য ও যুক্তিই রাজ্য গঠনের ভিত্তি হওয়া উচিত। নেহরুকেও অবশ্য, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারীর মতোই, নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও অন্ধ্র আন্দোলনের নেতা পোট্টি শ্রীরামালুর মৃত্যু ও তৎপরবর্তী ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সামনে নত হইতে হয়। তবে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির তেলুগুভাষী জেলাগুলিকে হায়দরাবাদের সহিত জুড়িয়া অন্ধ্রপ্রদেশ সৃষ্টির মধ্যে ভাষাভাষীর সমস্যাকে প্রাদেশিকতা দিয়া সমাধান করার যে বিপথগামিতা ছিল, তাহার বিপদ সম্পর্কেও নেহরু সে দিনই সতর্ক করিয়াছিলেন। আজ তেলেঙ্গানা সৃষ্টির মধ্য দিয়া কংগ্রেস নেতৃত্ব মৌচাকে যে ঢিলটি ছুড়িল, নেহরুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী তাহার হুল সকলকেই জর্জরিত করিবে। ইতিমধ্যেই পার্বত্য দার্জিলিঙে গোর্খাল্যান্ড রাজ্য গড়ার পুনরুজ্জীবিত দাবিতে বন্ধ-এর তোড়জোড় শুরু হইয়াছে। ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তর তীর বরাবর স্বতন্ত্র বড়োল্যান্ড রাজ্য গঠনের দাবিও নূতন অশান্তি সৃষ্টি করিতেছে। মহারাষ্ট্রে বিদর্ভ, উত্তরপ্রদেশে হরিৎপ্রদেশ, পূর্বাঞ্চল ও বুন্দেলখণ্ড, কর্নাটকে কুর্গ ইত্যাদি অঞ্চলে স্বতন্ত্র রাজ্যের দাবিও উঠিয়া পড়িয়াছে। উদ্বিগ্ন জম্মু-কাশ্মীর মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার শঙ্কা, এ বার না স্বতন্ত্র জম্মু ও লাদাখ প্রদেশের দাবি ওঠে। ওড়িশায় স্বতন্ত্র কোশল রাজ্যের স্লোগান শুনা যাইতেছে। ভারত কি তবে অতঃপর শত-শত ক্ষুদ্র জনপদে বিভক্ত একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হইবে?
ক্ষুদ্র রাজ্যের সমস্যা কম নহে। ঝাড়খণ্ড লক্ষণীয়। জনজাতীয় আত্মশাসন মসৃণ করার জন্য বিহারের ছোটনাগপুর ও সাঁওতাল পরগনা অঞ্চল লইয়া এই প্রদেশ গঠিত হয়। দশ বছরে এই রাজ্যটিতে নয় জন মুখ্যমন্ত্রী হইয়াছেন। সুশাসনের নমুনা হিসাবে ঝাড়খণ্ডের নাম কেহ করিতেছে না। জনজাতীয় স্বশাসনের দাবির মধ্যে যে আত্মপরিচয়ের রাজনীতি থাকে, তেলেঙ্গানার ক্ষেত্রে সেটাও তত জোরালো ছিল না। ভাষাভিত্তিক প্রাদেশিকতার আন্দোলনও অনুপস্থিত ছিল। তথাপি অন্ধ্রপ্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হইল। এখানেই যে এই বিভাজনের প্রক্রিয়া সাঙ্গ হইবে, এমন মনে করাও কঠিন। রায়লসীমা ও সীমান্ধ্র (উপকূলবর্তী অন্ধ্রও) অঞ্চলও অতঃপর স্বতন্ত্র প্রদেশ রূপে গণ্য হওয়ার দাবি তুলিতে পারে। এই প্রক্রিয়া কোথায় গিয়া থামিবে? প্রজাতন্ত্রের এই ক্রমবিভাজনের দায় কিন্তু কংগ্রেসের উপরেই বর্তাইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.