শুরুর কথা ভাবলে ঘুরেফিরে আসে নানা স্মৃতি। একসঙ্গে বসে আড্ডা, মহড়া, প্রথম মঞ্চে অনুষ্ঠান, আরও কত কী।
ওঁদের কেউ স্কুলশিক্ষক, কারও কর্মস্থল হাসপাতাল, কারও বা বিশ্ববিদ্যালয়। গানের টানেই এক হয়েছেন ওঁরা। অবসরটুকু সেই গান নিয়েই মেতে থাকেন। চলে নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। মেঠো সঙ্গীত থেকে রবি ঠাকুরের গান, সব কিছুকেই আপন করে নিয়েছে মেদিনীপুরের গানের দল ‘পারিজাত’। নিজেদের লেখা গান তো আছেই। ইতিমধ্যে পাঁচটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। এ বার ষষ্ঠ অ্যালবামের পালা। আগামী মঙ্গলবার মেদিনীপুর শহরের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ নামে নতুন অ্যালবামটি প্রকাশ করবেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র। ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য কিংশুক রায় বলেন, “লোপামুদ্রাদি আর জয়দার (সুরকার জয় সরকার) সঙ্গে অনেক দিনের পরিচয়। ওঁরা পাশে না থাকলে হয়তো এতদূর এগোনোই হত না। প্রথম অ্যালবাম প্রকাশের সময়টার কথা মনে পড়ছে। সেই সময় কলকাতার বুকে আমাদের ক’জনই বা চেনে? ওঁরা সহযোগিতা করেছিলেন বলেই তা সম্ভব হয়েছিল।” কিংশুকের কথায়, “ইচ্ছে ছিল ষষ্ঠ অ্যালবামটা লোপাদিই আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করুক। ওঁকে বলতেই উনি এক কথায় রাজি হয়ে যান।” |
কিংশুক হাইস্কুলের শিক্ষক। দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে আছেন শান্তনু জানা, সুমন্ত সাহা, স্বাগত মাইতি, স্বপন চক্রবর্তী, দেবব্রত দে সরকার। সুমন্ত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী। স্বাগত শালবনি হাসপাতালে কাদ করেন। শান্তনু গানের শিক্ষক। এঁদের একসঙ্গে পথ চলা শুরু ২০০৪ সালে। তবে ‘পারিজাত’ ব্যান্ডের আত্মপ্রকাশ ২০০৭ সালে। শান্তনু বলছিলেন, “একার পক্ষে অনেক কিছুই করা মুশকিল। পাঁচ-সাত জন মিলে তা করা সম্ভব। আমাদের সকলের ইচ্ছে ছিল নতুন কিছু একটা করার। বিশেষ করে, গানের জগতে। সেই ইচ্ছে থেকেই ব্যান্ড তৈরি।” ইতিমধ্যে এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা এবং ভিন্ রাজ্যে গিয়ে পারফর্মও করেছে পারিজাত। কলকাতা, দুর্গাপুর, আসানসোল, বর্ধমান থেকে দিল্লি, অসম সর্বত্র শ্রোতাদের প্রশংসা পেয়েছেন। গান শোনানোর সুযোগ এসেছে সরকারি অনুষ্ঠানেও। উত্তরবঙ্গ উৎসব, জঙ্গলমহল উৎসবে।
একটা সময় মেদিনীপুরের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী জয়ন্ত সাহার বাড়িতে রোজ এঁদের আড্ডা বসত। গান নিয়ে কত চর্চা হত। ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য সুমন্ত জয়ন্তবাবুর ছেলে। জয়ন্তবাবু বলছিলেন, “ওরা সবাই আমার ছেলের মতো। ভাল কাজ করছে। আগামী দিনে আরও ভাল কাজ করবে। শিক্ষক হিসেবে এটুকু আশা করতেই পারি।” যে অ্যালবামটি প্রকাশ হতে চলেছে, তার সবক’টাই রবীন্দ্র সঙ্গীত। শুধু যন্ত্রানুষঙ্গ বদলেছে। কিংশুকের কথায়, “নিজেদের লেখা গান নিয়ে আগের চারটে অ্যালবাম করেছি। পঞ্চম অ্যালবামটা ছিল লোকগান নিয়ে। এ বারের অ্যামলবামটা রবি ঠাকুরের গান নিয়ে। গান একই থাকছে। আমরা শুধু মিউজিকটা নিজেদের মতো করে সাজিয়েছি।”
অন্য রকম কিছু করার তাগিদ থেকেই আরও অনেকটা পথ এগোতে চায় ‘পারিজাত’। |