বিনোদন চেন্নাই এক্সপ্রেসের মুখোমুখি ঘোড়ার পিঠে জয়
থার্থই হিমঘর থেকে!
গত বছর মার্চ মাসে মারা গিয়েছিলেন অভিনেতা জয় মুখোপাধ্যায়। নিয়মভঙ্গের কিছু দিন পর ছেলে মঞ্জয় কিছু কাগজ ঘাঁটতে ঘাঁটতে খুঁজে পান একটা পুরনো কোল্ড স্টোরেজের বিল। বিলটা দেখে বুঝতে পারেন ‘লভ ইন মুম্বই’ বলে যে ফিল্মটি জয় পরিচালনা করেছিলেন, সেটির নেগেটিভগুলো ওই কোল্ড স্টোরেজেই পড়ে আছে। ভেবেছিলেন নেগেটিভগুলো খারাপ দশাতেই থাকবে। কিন্তু না। কোল্ড স্টোরেজে গিয়ে দেখেন সেগুলোর অতটা খারাপ অবস্থা নয়, যতটা একটা বিয়াল্লিশ বছরের পুরনো ছবির হওয়ার কথা। মঞ্জয় জানতে পারেন যে মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত প্রত্যেক বছর জয় এসে নাকি এক দিন কাটাতেন কোল্ড স্টোরেজে। নিজের হাতে নেগেটিভগুলো পরিষ্কার করে মুছে রাখতেন! এই সেন্টিমেন্টকে সম্মান করতেই ১৯৭২ সালে বানানো ছবিটি মুক্তি পেতে চলেছে এই শুক্রবার।
কিন্তু ৪২ বছরের পুরনো সিনেমা কি হালফিলের হিন্দি ফিল্মের সঙ্গে লড়াই করতে পারবে? ঘোড়ায় চেপে এসে জয় মুখোপাধ্যায় পারবেন ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এর সামনে দাঁড়াতে? জয়ের স্ত্রী নীলম মুখোপাধ্যায় বলছেন, “এই ছবিটির থেকে যে আমরা বিশাল কিছু বাণিজ্যিক সাফল্যের কথা ভাবছি তা কিন্তু নয়। এ বছর আমরা ভারতীয় সিনেমার একশো বছর উদযাপন করছি। এই ছবির মুক্তি পাওয়া তো সেটারও অঙ্গ। সিনেমা তো শুধু মাত্র বাণিজ্য নয়! মানুষের সেন্টিমেন্টও তার সঙ্গে জড়িত।”
লভ ইন মুম্বই ছবির একটি দৃশ্য।
শিলাদিত্য ভোরা, পিভিআর-এর ডিরেক্টর’স রেয়ার বিভাগের কর্ণধার। ওই বিভাগেই মুক্তি পাচ্ছে জয়ের ছবি। শিলাদিত্য বলছেন পুরনো ছবি মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা আগে থেকেই জানেন যে সিনেমাগুলোর ‘নিশ’ দর্শকই থাকবে। কয়েক মাস আগে তাঁরা ‘জানে ভি দো ইয়ারো’ রিলিজ করেছিলেন কুড়িটা স্ক্রিনে। বেশ ভাল চলেছিল। তার পর ‘চশমে বদ্দুর’ রিলিজ করা হয় বত্রিশটি স্ক্রিনে। সেটি মোটামুটি ব্যবসা করে। মীরা নায়ারের ‘সালাম বম্বে’ যতটা ভাল ব্যবসা করবে ভাবা হয়েছিল, তা অবশ্য করেনি। শিলাদিত্যর কথায়, “সামনে কিশোরকুমারের জন্মদিন। ‘লভ ইন মুম্বই’য়ে কিশোরকুমারের গান আছে। একটা নস্টালজিয়া তো কাজ করছে। এ সব দেখেই ফিল্মটা এখন রিলিজ করছি আমরা। তবে এটা ঠিক যে, সিনেমা মুক্তি পেলে সব সময় আশানুরূপ ব্যবসা করে না। এমনকী ‘জুরাসিক পার্ক’ও যখন থ্রি ডি আই ম্যাক্স-এ মুক্তি পেল, ফিল্মটা কিন্তু দারুণ ব্যবসা করতে পারেনি।”
এর আগে কিছু পুরনো হিন্দি কাল্ট সিনেমাকে রঙিন করে রিলিজ করা হয়েছে। রঙিন ‘মুঘল-এ-আজম’ (২০০৩), ‘নয়া দৌর’ (২০০৭) বা ‘হাম দোনো’-ও (২০১১) বক্স অফিসে খুব একটা দাগ কাটতে পারেনি। ক্লাসিক ছবি রঙিন করে দেখার ব্যাপারে কৌতূহল থাকলেও বাণিজ্যিক দিক থেকে এই ছবিগুলো তেমন সাফল্য পায়নি। তবে ‘মুঘল-এ-আজম’, ‘নয়া দৌর’ বা ‘হাম দোনো’-র গল্প জানা ছিল। সেগুলোর সাদা-কালো ভার্সান ডিভিডিতে পাওয়া যেত। কিন্তু ‘লভ ইন মুম্বই’য়ের জয় মুখোপাধ্যায়, ওয়াহিদা রহমান আর অশোককুমারকে তো কেউ দেখেনি বড় বা ছোট পর্দায়!
বলিউডে জয়ের অভিষেক হয়েছিল ‘লভ ইন সিমলা’য়। সহ-অভিনেত্রী ছিলেন সাধনা। তার পর আশা পারেখের সঙ্গে করেছিলেন ‘লভ ইন টোকিও’। এ বার ‘লভ ইন মুম্বই’! জয়ের স্ত্রী নীলম মুখোপাধ্যায় মুম্বই থেকে বলেন, “আমি জানি এটা সত্তরের দশকে তৈরি একটা র্যোমান্টিক কমেডি। যাঁরা দেখতে আসবেন, তাঁরা নিশ্চয়ই সেই মানসিকতা নিয়েই সিনেমাটা দেখবেন। আমার স্বামীর সব থেকে বড় দুঃখ ছিল যে ‘লভ ইন মুম্বই’ সেন্সর সার্টিফিকেট পাওয়ার পরেও রিলিজ করা যায়নি।”
কেন? নীলমের বক্তব্য, এক জন ডিস্ট্রিবিউটর অনেক রকমের ঝামেলা করেছিলেন। কোর্ট কেস হয়েছিল। মোট ৩৭টা কেস ছিল। “ফিল্মটির সঙ্গে যাঁরা জড়িয়ে ছিলেন, তাঁদের সবার টাকা জয় মিটিয়ে দিয়েছিল। আমার বিশ্বাস, যে কোনও শিল্পীর কাজ ক্যানবন্দি হয়ে থাকার থেকে মুক্তি পাওয়াটাই সব সময় কাম্য। এই সিনেমায় শঙ্কর-জয়কিষেণের সঙ্গীত রয়েছে। মজরুহ সুলতানপুরীর লিরিক। অশোককুমার আছেন।”
এ দিকে ওয়াহিদা রহমান নাকি জানিয়েছেন যে, তিনি এই ছবিটি এত বছর পরে মুক্তি পাওয়ার বিষয় নিয়ে খুব একটা খুশি নন। সে বিষয়ে নীলমের বক্তব্য, “ওয়াহিদা রহমান সম্ভ্রান্ত মহিলা। আমি বিশ্বাস করি না যে তিনি এ কথা বলতে পারেন। আমার ছেলে ওঁর সঙ্গে মঙ্গলবার দেখা করেছিল। ভাল ভাবেই কথা হয়েছে।” মুম্বইয়ের স্পেশাল স্ক্রিনিংয়ে অবশ্য ওয়াহিদা আসছেন না।
জয়ের ছবিতেই শেষ নয়। দিওয়ালি নাগাদ মুক্তি পেতে চলেছে চেতন আনন্দের ‘হকিকত’ও। বলরাজ সাহনি আর ধর্মেন্দ্র অভিনীত ফিল্মটি রঙিন করা হয়েছে। চেতন আনন্দের পুত্র কেতন আনন্দ জানাচ্ছেন, “আমি জানি যে, পুরনো সিনেমার দর্শক সে রকম নেই। অনেকেই বলেছে যে রঙিন ‘হাম দোনো’টা লম্বা লেগেছিল। আর ফরম্যাটটাও ছিল পুরনো। কিন্তু রঙিন ‘হকিকত’কে আমি নতুন করে সাজিয়েছি। তিন ঘণ্টা থেকে ফিল্মটা কেটে দু’ঘণ্টা দশ মিনিটে নামিয়ে এনেছি। মদনমোহনের গানগুলো পাল্টাইনি। কিন্তু সাউন্ড স্কেপটা ডলবি ডিজিটালে করেছি। যাতে এখনকার সময়ের সঙ্গে মানানসই হয়।”
কিন্তু আজকালকার হিন্দি ছবিতে হলিউডি স্টাইলের অ্যাকশনের রমরমা। তা সে যুদ্ধের ছবি হোক বা আন্ডারওয়র্ল্ড। তার সঙ্গে পেরে উঠবে রঙিন ‘হকিকত’? উত্তরে কেতন বললেন, “কেন পারবে না। এই ছবিতে একটা যুদ্ধবিরোধী সেন্টিমেন্ট আছে। একটা ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বানানো। চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়েও ছবিতে কিছু অংশ রয়েছে। সে কথাগুলো আজও যথেষ্ট প্রযোজ্য।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.