নিরাপত্তার ব্যবস্থা বেশ ভালই। অপেক্ষায় বসে ভোটকর্মীরাও। কিন্তু যাঁদের জন্য অপেক্ষা তাঁদেরই তেমন দেখা নেই। এক জন-দু’জন করে এলেন ও ভোট দিয়ে গেলেন। দিনের শেষে ভোট পড়ল ৬৬.৭৩ শতাংশ, যা ১৫ জুলাইয়ের তুলনায় অনেকটাই কম।
বৃহস্পতিবার মেমারির ৫৫টি ও মন্তেশ্বরের একটি বুথে পুনর্নির্বাচন ছিল। গত ২৯ জুলাই ভোট গণনার দিন দুষ্কৃতীরা ব্যালট বাক্স ছিনতাই করায় ও ব্যালট ছেঁড়ায় এ দিন ফের ভোট নেওয়া হল।
|
মেমারিতে এ দিনও বুথে তাদের এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ সিপিএমের। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, “মঙ্গলবার রাত থেকে সিপিএম কর্মীদের উপরে হামলা চলছে। বহু কর্মী ঘরছাড়া। ১৫ জন আহত হয়েছেন।” তাঁর আরও অভিযোগ, “এ দিন বহিরাগত মস্তানেরা বুথ দখল করেছে। নির্বাচন আধিকারিক আপত্তি করলে ব্যালট ছিনতাই করে তাঁকে মারধর করা হয়েছে। পরে অন্য আধিকারিক পাঠিয়ে ভোট পরিচালনা করা হয়। রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানানো হয়েছে।” তবে জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “এমন অভিযোগ পাইনি। এরকম কিছু ঘটে থাকলে নিশ্চয় জানতে পারতাম।”
এ দিন বুথে বুথে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। তবু বুথ ফাঁকা ফাঁকা। সকালে মেমারির কুচুট ১ পঞ্চায়েতের বসতপুর চারুশিলা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, একটি-দু’টি করে ভোট পড়ছে। প্রিসাইডিং অফিসার সন্তু সরকার জানান, মোট ভোটার ৭৯৩ জন। প্রথম এক ঘণ্টায় ভোট দিয়েছেন ৪০ জন। কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে ঠাকুর দাস নামে এক ভোটারের দাবি, “কাজকর্ম বন্ধ রেখে দু’বার ভোট দেওয়া অসুবিধার। তবু এলাম।”
|
ভোট শুরুর দু’ঘন্টা পরে একই ছবি দেখা গেল সাতগেছিয়া শান্তিডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে মোট ভোটার ৪০৭। তখনও ভোট পড়েছে ১৩০টি। সেখানকার তৃণমূল প্রার্থী সুকান্ত মালিকের দাবি, “গণনার দিন সিপিএম যে ভাবে সন্ত্রাস চালিয়েছিল তাতে ভয়ে কাবু সাধারণ মানুষও। তাই তাঁরা ভোট দিতে আসেননি।” পাশে শ্রীধরপুর অবিনাশ ইনস্টিটিউশনের বুথেও সকাল ১১টা পর্যন্ত ৯৯১ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২২৮ জন। বুথে বসেই তৃণমূলের এজেন্ট হেমন্ত বাগ বলেন, “সকাল থেকেই ভোটের হার কম। সিপিএমের হামলার ভয় একটা কারণ হলে অন্যটা হল চাষের কাজ ফেলে মানুষের দ্বিতীয় বার ভোট দিতে আসতে না চাওয়া।”
এলাকার বুথে-বুথে ঘুরে চোখে পড়েনি সিপিএমের কোনও ক্যাম্প। বুথগুলিও এজেন্টশূন্য। দলের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের মন্তব্য, “ওদের সন্ত্রাসের কথা আর কত বলব! সকালে যে সাত-আট জায়গায় আমাদের এজেন্টরা বসতে গিয়েছিলেন, তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গরিব মানুষদের জোর করে ওদের ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। অনেককে বলা হয়েছে, ভোটার তালিকায় নাম নেই। পুলিশ বা প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও ফল না মেলায় আমরা ভোটে আগ্রহ হারিয়েছি।” |
বসতপুরে প্রায় ফাঁকা বুথ। |
সাতগেছিয়ায় দলীয় কার্যালয়ে বসে তৃণমূলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের পাল্টা দাবি, “গণনার দিন আমাদের কর্মীরা এখানে তিরবিদ্ধ হয়েছেন। এখনও সিপিএমের সন্ত্রাসের ভয়ে অনেকে ভোট দিতে আসেননি।” বুথে-বুথে তো সিপিএমের লোকই নেই। স্বপনবাবুর দাবি, “আমরা কাউকে ভয় দেখাইনি। ওদের এজেন্টরাই আসলে বুথে বসতে চাইছে না। আমরা কী করব?” ভোটদানের হার কমলেও জেতার ব্যাপারে নিশ্চিত তৃণমূল। দলের বর্ধমানের পর্যবেক্ষক অলোক দাস বলেন, “ভোট কম পড়ুক বা বেশি, আমরাই বেশির ভাগ জায়গায় জিতব।”
|
বৃহস্পতিবার ছবিগুলি তুলেছেন উদিত সিংহ। |