‘বস’-য়ের মুখোমুখি বস
মাদের সিলভার কালারের ইনোভা-টা গেটের ভিতর দিয়ে ঢুকছে। তখনও বুঝতে পারছি না, গাড়িটা ভিতরেই পার্ক করতে দেবে কি না? নাকি বাইরে রাখতে হবে? ছুটে এল সিকিউরিটি। সিকিউরিটি এজেন্সির লোকগুলো যেমন ষন্ডামার্কা কালো শার্ট পরা হয়, সে রকম। বলল, “অজিত সাব কৌন হ্যায়? অজিত সাব?” ঘাবড়াইনি, বুঝলাম জিৎ আর অজিত গুলিয়ে ফেলেছে। পরিচয় জেনে সে হাত দেখিয়ে ভিতরে ঢোকার ছাড়পত্র দিয়ে দিল। সেই ছাড়পত্র, যার জন্য আমি এত এত বছর অপেক্ষা করেছি। কালো শার্টের হাত দেখানোতে যেন ধাম করে মাথার মধ্যে লাগল!
ফ্ল্যাশব্যাক যেমন হয়! মাথার ভেতর ওই ধাক্কায় সেকেন্ডে সতেরোটা বছর পিছিয়ে গেলাম।
১৭ মে ১৯৯৬। ওই দিনটাতে মুম্বইয়ে আমার স্ট্রাগলারের জীবন শুরু। পাঁচ বছর ছিলাম ওই শহরটাতে। চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম হিরো হওয়ার। আর যাঁকে আদর্শ করে চেষ্টা করছি, তাঁর বাড়ির দিকে যাব না তাই কি হয়! প্রোডিউসরের সঙ্গে কোথায় দেখা করা যায়, সেই খোঁজের আগেই জেনে নিয়েছিলাম, অমিতাভ বচ্চন কোথায় থাকেন। স্ট্রাগলার হিসেবে যে রুটটায় আমায় নিয়মিত যাতায়াত করতে হত, অসীম সৌভাগ্যে তার ভিতরেই পড়ত অমিতাভ বচ্চনের বাড়িটা।
প্রতীক্ষা। জুহু ভিলে পার্লে। টেনথ্ রোড। কর্নার প্লট।
মুম্বইয়ে নিজের অফিসে বসে ‘বস’য়ের পোস্টারে সই করছেন বিগ ‘বস’
আমার মতো গোটা ভারতের স্ট্রাগলারের কাছেই ওটা মন্দির। রোজ যেতাম ওখান দিয়ে। আর মাঝে মাঝে বাইরে বসে থাকা সিকিউরিটিকে জিজ্ঞেস করতাম, “বস হ্যায় ক্যায়া অন্দর?” সে অবধারিত বলত, নেই। কোনও কোনও দিন আবার বদমায়েশি করে, বাইকে বসে জিজ্ঞেস করতাম, “বস হ্যায় কেয়া?” ওরা বলত, “নেহি হ্যায়।” তখন আমি বাইকে স্টার্ট দিয়ে মোশনের উপর বলতে বলতে যেতাম, “সাব কো বোল দেনা, আভি ম্যায় উনকে সাথ চায়ে পিনে কে লিয়ে আ রহা হু।” বলেই পালিয়ে যেতাম।
পালিয়ে গেলেও জীবনের এই স্বপ্নটা থেকে কখনও পালাইনি যে, বসের বাড়িতে বসে আমায় একদিন চা খেতে হবে! জিৎ মদনানি কখনও যে তার স্বপ্নের নায়ককে কাছ থেকে দেখেনি এমন নয়। বিএফজেএ-র ফাংশনে দু’বার দেখেছি। নেতাজি ইন্ডোরে বসে টেলিগ্রাফ ডিবেটে ওঁর বক্তৃতা শুনেছিলাম। মুম্বইতে যখন ছিলাম কমলিস্তান স্টুডিয়োতে উনি একবার রাত্তিরে ‘লাল বাদশা’র শ্যুটিং করছিলেন। কলকাতার কিছু অতিথি তখন আমার কাছে মুম্বইয়ে। অসীম সাহসে তাঁদের নিয়ে আমি চলে গিয়েছিলাম ওঁর কাছে। ভ্যানের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। যখন উনি নামছেন, গিয়ে আলাপ করি। বলি, স্যর, আপনার ভীষণ ভক্ত আমরা সবাই। উনি হেসে চলে গিয়েছিলেন শট দিতে। কাছে থাকার মোট সময় ছিল আধ মিনিট। আর গত বছর যখন উনি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সময় এসেছিলেন, তখন আলাপ হতেই পারত। কিন্তু আমি তখন হায়দরাবাদে শ্যুটিং করছি।
২৫ জুলাই ২০১৩। এই দিনটা তাই শেষ নিশ্বাস পড়া পর্যন্ত আমার মনে থেকে যাবে। সে দিনই দুপুরে মুম্বইয়ে রিলায়্যান্স এন্টারটেনমেন্ট থেকে ফোন পেলাম যে, আমাদের ‘বস’ ছবির জন্য ওঁর সঙ্গে যে দেখা করতে চেয়েছিলাম, তাতে মিস্টার বচ্চন রাজি হয়েছেন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট ২৭ তারিখ বিকেল সাড়ে পাঁচটা। আমার তো বুকের মধ্যে গুড়গুড় করা শুরু করে দিল। আদত আইডিয়াটা আমার এক সাংবাদিক বন্ধুর। যে বলেছিল, “ছবির প্রচারে এটা খুব ইন্টারেস্টিং হবে যদি বলিউডের বস, ফিল্মের ‘বস’য়ের সঙ্গে দেখা করেন।”
আইডিয়াটা এক জিনিস, আর সেটা সত্যি হওয়াটা আরেক। স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি, বসকে সাথ সাচমুচ চায়ে পিনে কে লিয়ে ওয়াক্ত আ জায়েগা। কলকাতায় বসে তখন আমি টেনশনে কাঁপছি। মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে ওঁর সামনে। কী নিয়ে যাব? কী বলব? কী করব? কী পরব? আপনাদের পরিচিত হিরো জিৎ তখন কোথায় হারিয়ে গিয়ে মুম্বইয়ের স্ট্রাগলার জিৎয়ে ফিরে গিয়েছে।
আমাদের গাড়িটা যে বাড়িতে ঢুকছে সেটা অবশ্য ‘প্রতীক্ষা’ নয়। ‘জনক’। ‘জনক’ হল ওঁর এখনকার অফিস। যেখানে উনি থাকেন, সেই জুহুর বাড়ি থেকে হেঁটে দেড় মিনিট। গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম বাঁ-দিকে ওঁর সব বিশাল বিশাল কাট-আউট। ‘ইয়ারানা’, ‘দিওয়ার’, ‘ডন’। আমাদের নিয়ে যাওয়া হল দোতলায়। ওঁর সেক্রেটারির ঘরে। সেক্রেটারি যে ঘরে বসে, সেটা খুব বড় নয়। তার বাইরে একটা বড় হল। কুড়ি বাই কুড়ি হবে। সেখানে কেউ যেন ট্রফির দোকান দিয়েছে। আইফা, ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, ফিল্মফেয়ার মনে হল সব ওখানে। ঘরের ভিতরেও দু’-চারটে ট্রফি আছে। ওঁর বিভিন্ন ছবি লাগানো। ছোট-বড়। চাকার মতো একটা বড় কিছু লক্ষ করলাম। এটাও কি কেউ প্রাইজ দিয়েছে? ওপরে হিন্দিতে লেখা অ ব।
কৌতূহল চাপতে না পেরে জিজ্ঞেসই করে ফেললাম সেক্রেটারিকে, “ইয়ে ক্যায়া হ্যায়?” বলল, “রামায়ণ।” ভাবতেই পারিনি, চাকার মতো ওই ব্যাপারটা বই হতে পারে। তখন মনে হল, এটা তো আগেই শুনেছিলাম যে নিয়ম করে উনি রামায়ণ পড়েন। বলতে ভুলে গেছি, ঘরে বচ্চন সাবের ছবিগুলোর ওপর লেখা, ‘ওনলি লেজেন্ডস্ আর বর্ন টোয়াইস’। রীতিমত নার্ভাস লাগছে তখন। গেছি আমাকে নিয়ে তিনজন। রিলায়্যান্স এন্টারটেনমেন্টের সিইও মহেশ রামনাথন আর আমার ভাগনে অমিত। প্ল্যান ছিল, আমরা ওঁকে ল্যাপটপে ‘বস’-য়ের ট্রেলার দেখাব। কিন্তু টেনশনেই বোধ হয় অমিত ল্যাপটপটা হোটেলে ফেলে এসেছিল। অন্য দিন হলে হোটেলে দৌঁড়ে গিয়ে ফেরত আনার কোনও চান্স ছিল না। কারণ বচ্চনসাব এমনই মানুষ, যাঁকে দেখে ঘড়ির টাইম মেলানো যায়। আজ আমাদের সৌভাগ্যবশত, উনি কোথাও আটকেছেন। তারই মধ্যে অবশ্য দু’বার ফোন করে ফেললেন, আমি এখনই আসছি, ওদের যেন চা-টা দেওয়া হয়।
এত ক্ষণ যাকে বচ্চনসাবের সেক্রেটারি ভাবছিলাম, এ বার জানলাম তিনি আসলে এবি কর্প-এর সিইও। রমেশ পুলাপাকা। এটাও শুনলাম পুরি জগন্নাথ নাকি এই ঘরে বসেই, ‘বিজনেসম্যান’ ছবিটার কথা প্রথম ভাবেন। তার মূল থিম তৈরি হয় এখন আমরা যেখানে বসে আছি সেখান থেকে। যেটা তেলেগুতে করেছিলেন মহেশ বাবু। ওই ছবিটার আদলেই ‘বস’ বানানো হয়েছে। আর লিড রোলটা করেছি আমি। পুরি জগন্নাথ নাকি অরিজিনাল ফিল্মে অভিষেক বচ্চনকে নেবেন ভেবেছিলেন। যে কোনও কারণেই হোক সেটা হয়নি।
আমি বসে আছি ঘরের বাঁ-দিকে। ঘরে ঢুকলে কেউ আমাকে দেখতে পাবে না। আমিও কাউকে দেখব না। আমার উল্টো দিকে দরজার সোজাসুজি বসে আছে অমিত। হঠাৎ দেখলাম ও উঠে দাঁড়িয়েছে। ওর দিকে তাকাতে তাকাতেই এ বার ভেসে এল সেই ব্যারিটোন “জিৎ কাঁহা হ্যায়?” মনে মনে এত রিহার্সাল দিয়েছি এই মুহূর্তটার জন্য যে পরের শটগুলো আমার সব ভেবে রাখা। বললাম, “ম্যায় ইহা হু স্যর।” প্রণাম করলাম পায়ে হাত দিয়ে। কড়াপাকের সন্দেশ নিয়ে গিয়েছিলাম কলকাতা থেকে। প্যাকেটটা দিলাম। বললাম, “স্যর, জীবনে যা হয়েছি, সব আপনাকে সামনে রেখে।” ওঁর হাতে দু’টো বাঁধানো অক্সফোর্ড ফ্রেম দিলাম একটা কালো, একটা ধূসর। দু’টোর ভিতরেই লেখা, আই অ্যাম অ্যান অ্যাক্টর ওনলি বিকজ দেয়ার ইজ অ্যান ইন্সটিটিউট কলড্ মিস্টার অমিতাভ বচ্চন। উনি জিজ্ঞেস করলেন, “কোনটা আমার জন্য?” বললাম, “স্যর, ব্ল্যাকটা।” ধূসর ফ্রেমটায় সই করিয়ে আমার কাছে রেখে দিলাম। চিরজীবন আমার সঙ্গেই থাকবে।
ভাগনে অমিতের দিকে তাকিয়ে দেখি, ও যেন ততক্ষণে ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে। আমার অবশ্য তখন ও সব দেখলে চলবে না। নিজের এত বছরের কৌতূহল দ্রুত মিটিয়ে নিতে হবে। গোটা বারো পোস্টার দিলাম ওঁকে আমাদের ছবির। প্রত্যেকটায় অটোগ্রাফ চাই। সই করার ফাঁকে টুক করে বলে দিলাম, “স্যর, সামান্য চেষ্টা করেছি যদি বিজয় দীননাথ চৌহানকে একটু নকল করতে পারি।” উনি হাসলেন। কিছুই বললেন না। সই শেষের পরে খুব সাহস সঞ্চয় করে বলে ফেললাম, স্যর, বহত সারে সওয়াল হ্যায়। বহত সারে বাতে হ্যায়। ম্যায় জানতা নেহি, কাঁহাসে শুরু করু।
ওঁর কোম্পানির কর্তা আগেই আমায় জানিয়েছেন, বচ্চন সাবের হাতে আজ একদম সময় নেই। ওঁর পর পর ছ’টা মিটিং রয়েছে। কিন্তু আমারও তো রয়েছে এত বছরের খিদে! আমারও তো অনেক কিছু আছে যা না-জানলে চলবে না। আমার আদর্শ যে উনি। ‘দিওয়ার’ দেখে প্রথম ঠিক করি, আমাকে অভিনেতা হতে হবে। সেই লোককে আজ সামনে পেয়ে ছেড়ে দেব? স্রেফ কয়েকটা মিটিংয়ের ভয়ে! হয় নাকি? পুলাপাকা বলেছিলেন, “আজ আপনাদের ট্রেলার দেখার সময় ওঁর হবে না।” কিন্তু আমি তো নাছোড়। বললাম, স্যর, দেখাব?
ব্যারিটোন বলল, “কাঁহা হ্যায়, দিখাইয়ে।” সাড়ে তিন মিনিটের ট্রেলার দেখে উঠে উনি স্বগতোক্তির মতো বললেন, “গুড।” তার পর নিজেই জিজ্ঞেস করলেন, “কেয়া বাজেট হোগা ইস ফিল্ম কা?” বললাম, স্যর, সাড়ে চার কোটি। টাকার অঙ্কটা একটু কম করে বলা। এটা নিছক প্রোডাকশন বাজেট। কিন্তু ওঁকে শুনে বেশ বিস্মিতই দেখাল, “বাংলা সিনেমা কি এখন এত বদলে গেছে যে, এই ধরনের ছবি বানানো হচ্ছে?” বললেন, “ইসকা মতলব মার্কেট বড়া হো গ্যয়া। আচ্ছা বাংলাদেশ মার্কেট কি তার মানে খুলে গেছে?” বললাম, না স্যর। সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এখনও জট খোলেনি।
এ বার আমার ওঁকে খুব তাড়াতাড়ি পরপর প্রশ্ন করার পালা। বললাম, স্যর, আপনি যে ভাবে নিজেকে সময়ের সঙ্গে বদলেছেন, ভাবাই যায় না। আপনার চিন্তাভাবনা ক্রমশ বদলে বদলে গেছে। এখনও টুইট করেন। ব্লগ লেখেন। সব সময় আপডেটেড। কী করে পারেন? উনি খুব বিনয়ের সঙ্গে বললেন, “অ্যায়সা কুছ নেহি। আমি লোকের সঙ্গে মিলেমিশে থাকি। সব সময় ছোটদের সঙ্গে কথা বলি। ওদের কাছেও কত কিছু শিখি।” বললাম, স্যর, আমাকে কিছু বলুন না। কী ভাবে ঠিকঠাক নিজের লক্ষ্যের দিকে এগোতে পারি? উনি বললেন, “কাজ করে যান। কাম করতে রহিয়ে, ব্যস। জিন্দেগি আপনেসেহি সব কুছ শিখা দেতি হ্যায়।”
বললাম, স্যর, আমায় দশটা টিপস দিন না। মনপ্রাণ দিয়ে ফলো করব। উনি আবার বললেন, “কাম করতে রহিয়ে।”
প্রশ্নোত্তর
জিৎ: ‘জোশ’ ছবিতে পুনিত ঈসারের সঙ্গে কাজ করেছিলাম। প্রথমদিনই ওঁকে জিজ্ঞেস করি, একটু বলবেন, ‘কুলি’তে মিস্টার বচ্চনের সেই ভয়ঙ্কর অ্যাক্সিডেন্টটা কী করে হয়েছিল? স্যর আসলে কী ঘটেছিল?
বিগ ‘বস’: লোকের ভুল ধারণা, পুনিতের ঘুসিতে আমার লেগেছিল। আমার লেগে গিয়েছিল হঠাৎ করে টেবিলের কোনায়। ওর কোনও দোষ নেই। উনকা কোয়ি কসুর নেহি থা।

জিৎ: স্যর, আমায় বলুন অভিনেতার কি রাজনীতিতে যাওয়া উচিত? মেক আপের বাইরেও কি রং মাখা উচিত অভিনেতার?
বিগ ‘বস’: ইয়ে আপকি খুদ কি ফ্যায়সলা হ্যায়। এটা আপনাকে নিজেকেই ঠিক করতে হবে। আমি যেমন রাজনীতি যে বুঝি না, সেটা নিজেই বুঝে গেছি।

জিৎ: স্যর, কীভাবে ঠিকঠাক নিজের লক্ষের দিকে এগতে পারি?
বিগ ‘বস’: কাজ করে যান। কাম করতে রহিয়ে, বাস। জিন্দেগি আপনে সেহি সব কুছ শিখা দেতি হ্যায়।
ওঁকে জানালাম, রোববার রোববার উনি যে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ভক্তদের দর্শন দেন, একটা সময় সেই ভিড়ে আমিও থাকতাম। জিজ্ঞেস করে জানলাম, ‘কুলি’ ছবিটা রিলিজের পর থেকে এই প্রতি রবিবার দর্শন দেওয়ার ব্যাপারটা চালু। তখন থেকেই ওঁর ক্রেজটা বেড়ে গিয়েছে। নিজে অবশ্য বিনীত ভাবে বললেন, “ম্যায়নে কুছ নেহি কিয়া। আপসে আপ হো গয়ে।” ওঁকে বলেই ফেললাম, আমার ‘জোশ’ ছবিতে পুনিত ঈশারের সঙ্গে কাজ করেছিলাম। শু্যটিংয়ের ফাঁকে প্রথম দিনই ওঁকে জিজ্ঞেস করি, একটু বলবেন, ‘কুলি’তে মিস্টার বচ্চনের সেই ভয়ঙ্কর অ্যাক্সিডেন্টটা কী করে হয়েছিল? পুনিত বলেছিলেন, “লোকে আমায় ভিলেন বানিয়ে দিচ্ছিল ঠিকই। কিন্তু আমার কোনও দোষ ছিল না। টেবিলের কোনায় লেগে গিয়েছিল ওঁর।” বচ্চনসাবও একই কথা বললেন।
“লোকের ভুল ধারণা, পুনিতের ঘুসিতে আমার লেগেছিল। আমার লেগে গিয়েছিল হঠাৎ করে টেবিলের কোনায়। ওর কোনও দোষ নেই। উনকা কোই কসুর নেহি থা।”
আমি জানি বচ্চনসাবের পরের অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় চলে এসেছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন যে শেষ হয়নি। ক্ষমা চাইলাম অবশ্য ওঁর কাছে। বললাম, কিছু মনে করবেন না। জার্নালিস্টের মতো আপনাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছি বলে। আমার আসলে অনেক কিছু জানার আছে।
যেমন জানার আছে, ওঁর ঘুম নিয়ে। বললাম, স্যর, শুনা হ্যায় আপ সোতে নেহি হ্যায়। ইয়ে সচ হ্যায়? উনি বললেন, “আরে না, না, লোকে যে কী বলে। আমি শুই তো বটেই। সুযোগ পেলেই ঘুমিয়ে পড়ি।” বললাম, স্যর, বিশ্বাস হয় না। আপনি তো রাত দু’টো-তিনটে পর্যন্ত ব্লগ লেখেন। ঘুমোন কখন?
উনি হেসে বললেন, “ওটা হয়ে যায়। ঠিক শুয়ে পড়ি।” এ বার আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম, স্যর আমায় বলুন অভিনেতার কি রাজনীতিতে যাওয়া উচিত? মেক আপের বাইরেও কি রং মাখা উচিত অভিনেতার?
ব্যারিটোন বলল, “ইয়ে আপকি খুদ কী ফয়সলা হ্যায়। এটা আপনাকে নিজেকেই ঠিক করতে হবে। আমি যেমন রাজনীতি যে বুঝি না, সেটা নিজেই বুঝে গেছি।”
আমার চা খাওয়া অনেকক্ষণ শেষ। তখনও ভাবার সময় পাইনি যে, আমার আদর্শ মানুষটির সঙ্গে অবশেষে চায়ের কাপ হাতে বসা। উনি অবশ্য চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে উঠে পড়লেন। মিটিংয়ে ঢুকে যেতে হবে। এই সত্তর প্লাস বয়েসেও উঠে দাঁড়ানো, হাঁটাচলা, তাকানো সব কিছুতে এত এনার্জি ভাবাই যায় না। আর কোথাও যেন মনে হয়, কিছুটা শিশুর মতো। নিজের কী উচ্চতা, কী প্রভাব নিজেই জানেন না। উনি বেরিয়ে যাওয়ার পর ঘরে যেন কেমন একটা শূন্যতা তৈরি হয়ে গেল।
চলে যাওয়ার সময় বলেছিলাম, স্যর, আপনাকে একটা হাগ করতে পারি? উনি বললেন, “নিশ্চয়ই।” এটাও আমার একটা স্বপ্ন ছিল। যেটা সফল হয়ে গেল। নীচে নেমে ওঁর বিশাল কাটআউটগুলোর সামনে দাঁড়ালাম। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, সত্যি আমরা ওঁর পাশে কত ছোট। আর এই মানুষটা কী উচ্চতার সব কাজ করেছে। কেমন যেন মনটা খারাপই হয়ে গেল। মনে হচ্ছিল, মাত্র ওইটুকু সুযোগ পেলাম। আহা সময়টাকে যদি থামিয়ে দেওয়া যেত। আরও কত কিছু জানার ছিল।
পুনশ্চ: কলকাতায় ফেরার পর মোহনা বলল, তুমি তো স্বপ্নটাকে সত্যি করে ছাড়লে। চা সেই খেয়েই এলে! আমি ওকে বললাম, ধুর, স্বপ্নটা তো সবে শুরু হল। এ বার আমি চোখের সামনে দেখছি ওঁর বাড়িতে বসে একসঙ্গে চা খাচ্ছি। আর ঠিক হচ্ছে পরের কোন ছবিতে আমরা একসঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করব। মোহনা, আমার লোভ বেড়ে গেছে। ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর।

ছবি: অমিত জুমরানি



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.