|
|
|
|
ভিনদেশের ছোটদের শুভেচ্ছা পেল পাক্কে জঙ্গলের রক্ষীরা |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
বিশ্বের নানা প্রান্তে তাঁদের নাম ছড়িয়েছে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি জঙ্গলের বাঘের ওই ‘পাহারাদারেরা’। আজ ‘ওয়ার্ল্ড টাইগার ডে’ অনুষ্ঠানে ভিন্দেশের হাজার তিনেক পড়ুয়ার শুভেচ্ছাবার্তা হাতে পেয়ে তা-ই অবাক ‘পাক্কে টাইগার রিজার্ভ স্ট্রাইক ফোর্স’-এর বনরক্ষীরা।
অরুণাচলের ওই দুর্গম অরণ্যে পুরনো আমলের রাইফেল হাতে পাহারা দেওয়াই ওঁদের কাজ। পাঁচ বছর ধরে ‘পাক্কে ব্যাঘ্র প্রকল্পে’ লুপ্তপ্রায় ওই প্রাণীদের চোরাশিকারিদের কাছ থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তাঁরাই। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ ওই প্রকল্পের ৪০ জন বনরক্ষীর কাছে পৌঁছল বাচ্চাদের পাঠানো কৃতজ্ঞতার চিঠি।
পাক্কের মতো অনেকটাই অচেনা অরণ্যে বিশ্ব বাঘ দিবসের অনুষ্ঠান হল কেন?
সংগঠক আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংস্থার বক্তব্য, ইন্দোনেশিয়া এবং কানহা জঙ্গলের পরে পাক্কেই ব্যাঘ্র প্রকল্পের নামেই সবচেয়ে বেশি শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছেছে। নিউজিল্যান্ডের লিয়াম, অস্ট্রেলিয়ার নাইলা, ভেরনরা তাতে লিখেছে, “বন আর বাঘ বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ আপনাদের। আপনারা রয়েছেন বলেই আজও পৃথিবীতে বাঘ বেঁচে রয়েছে। বেঁচে রয়েছে অরণ্য।” পাক্কের বনরক্ষীদের অনেকেই ইংরেজি বোঝেন না। তর্জমা করে তাঁদের শোনানো হয় সে সব বার্তার অর্থ।
পূর্ব কামেং জেলার ‘পাক্কে ব্যাঘ্র প্রকল্পের’ ডিএফও তানা তাপি জানান, ২০০২ সালে দেশের ২৬-তম ব্যাঘ্র প্রকল্প হিসাবে পাক্কে স্বীকৃতি পায়। চোরাশিকার, বেআইনি কাঠ পাচার রুখতে প্রাক্তন সেনাকর্মী, স্থানীয় যুবকদের নিয়ে ওই ‘স্ট্রাইক ফোর্স’ তৈরি করা হয়েছিল।
বন বিভাগ সূত্রের খবর, সম্প্রতি ক্যামেরা ট্রাপিং-এ দেখা গিয়েছে, ওই জঙ্গলে ৬টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। রয়েছে বিপন্ন আরও অনেক প্রাণী। কার্যত পরিকাঠামোহীন, দুর্গম, জঙ্গি সমস্যাসঙ্কুল, সড়কহীন পাক্কে অরণ্যে টহল দেওয়া কতটা সমস্যার প্রত্যক্ষদর্শীরাই জানেন। জঙ্গি হুমকির জেরে পাক্কের একটি ভালুক পুনর্বাসন কেন্দ্রের কাজও বন্ধ হয়েছিল। বিপদের মোকাবিলায় স্ট্রাইক ফোর্সের সদস্যদের গেরিলা যুদ্ধ, জঙ্গলে বাঁচার নিয়ম সেখানো হয়।
ওই বনরক্ষীদের পরিশ্রমকে সম্মান দিতেই তাঁদের কাজ, জীবনের প্রতিকূলতা নিয়ে দেশ-বিদেশের ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করার প্রকল্প শুরু করে ওই আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংগঠনটি। বার্তা পাঠাতে চালু করা হয় ‘কার্ড ফর টাইগার্স’। অরুণাচলের স্কুলে অরণ্য নিয়ে গল্প লেখা, ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
আজ সেইজোসা গ্রামের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ব্যাঘ্র দিবসের অনুষ্ঠানে বনরক্ষীদের সম্মান দেওয়ার অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল এন এন ঝাসা। তিনি জানান, স্ট্রাইক ফোর্সের নজরদারির ফলে গত পাঁচ বছরে এখানে কোনও চোরাশিকারের ঘটনা ঘটেনি। স্ট্রাইক ফোর্সের সদস্য বিশাল নাবুম বলেন, “বিশ্বের এত ছেলে মেয়ে আমাদের কথা জানে এটা ভাবতেই পারছি না। এতে নতুন অনুপ্রেরণা পেলাম।” বাহিনীর আরও এক সদস্য ফিলিপ বলেন, “প্রতিদিন পদে পদে বিপদের সামনে দাঁড়াতে ভাল লাগে। আশা করি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের মতোই অরণ্যকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবে।” |
|
|
|
|
|