প্রশ্নে কলকাতা পুলিশ
মেট্রোয় ‘কটূক্তি’, নালিশ জানাতে নাজেহাল তরুণী
মেট্রো স্টেশনে আইনশৃঙ্খলা দেখার দায়িত্ব কলকাতা পুলিশের। কিন্তু অভিযোগ, প্ল্যাটফর্মে কলকাতা পুলিশের কর্মীরা কম সংখ্যায় থাকায় আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ জানাতে গেলে যাত্রীরা অহেতুক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সোমবার রাতে মেট্রোয় এক মহিলা সাংবাদিকের উদ্দেশে কটূক্তি করে দুই যুবক। অভিযোগ, এই ঘটনার অভিযোগ দায়ের করতে গিয়ে নাজেহাল হন ওই মহিলা সাংবাদিক ও তাঁর সহকর্মী।
কী ঘটেছিল সোমবার রাতে?
অভিযোগকারিণী এ দিন জানান, সোমবার রাত সওয়া ৮টা নাগাদ এক সহকর্মীর সঙ্গে তিনি মেট্রোয় বাড়ি ফিরছিলেন। চাঁদনি চক স্টেশন থেকে মেট্রোর প্রথম কামরায় ওঠেন তাঁরা। অভিযোগ, এসপ্ল্যানেড থেকে দুই যুবক মেট্রোয় ওঠার সময়েই ওই তরুণীর উদ্দেশ্যে কটূক্তি করে। তাঁর সহকর্মী প্রতিবাদ করলে ওই যুবকেরা তখনকার মতো চুপ করে যায়। পরে ময়দান স্টেশনে নামার সময়ে তারা ফের ওই তরুণীর উদ্দেশে কটূক্তি করে। তরুণীর সহকর্মী সাংবাদিক তখন মেট্রোর কামরা থেকে ওই দুই যুবককে টেনে প্ল্যাটফর্মে নামান।
তরুণীর আরও অভিযোগ, প্ল্যাটফর্মে সেই সময়ে কোনও পুলিশ ছিল না। স্টেশনের গেটের কাছে তিন জন মেট্রোকর্মীকে দেখতে পেয়ে সাহায্যের জন্য তাঁদের কাছেই যান ওই তরুণী। কিন্তু তাঁরা বিষয়টি নিয়ে তেমন তৎপর হননি বলে অভিযোগ। পরে উপরে উঠে এক জন আরপিএফ জওয়ানকে ডেকে আনেন তিনি।
আরপিএফের ওই জওয়ান এসে অভিযুক্ত দুই যুবকের সঙ্গে তাঁদের বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেন বলে জানিয়েছেন ওই মহিলা সাংবাদিক। এর পরে মেট্রোকর্মীরা তাঁদের স্টেশন মাস্টারের কাছে নিয়ে যান। সেখান থেকে খবর দেওয়া হয় ময়দান থানায়। তবে ভোগান্তির এখানেই শেষ নয়। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ পুলিশ ভ্যানে চড়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে নিয়েই ময়দান থানায় যান তাঁরা। শুরু হয় এফআইআর লেখার পর্ব। মোট পাঁচ বার তাঁদের দিয়ে এফআইআর লেখানো হয় বলে ওই তরুণী অভিযোগ করেছেন।
পুলিশ জানায়, শেষাদ্রি চক্রবর্তী (২৫) ও রীতেন সেন (২৩) নামে ওই দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। শেষাদ্রি ডায়মন্ড হারবার ও রীতেন গাঙ্গুলিবাগানের বাসিন্দা। তাদের বিরুদ্ধে মহিলাদের কটূক্তি করা ও অশোভন আচরণের অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। তবে, ওই দুই যুবকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, আইনের চোখে তা মামলা হয় না, এমন (নন-কগনিজেব্ল) অপরাধ।
মেট্রোর যাত্রীদের অভিযোগ, এখন মেট্রোর যাত্রাপথ অনেক বেড়েছে। বেড়েছে স্টেশনও। অপরাধ যে কোনও সময়ে যে কোনও স্টেশনেই ঘটতে পারে। কিন্তু স্টেশনগুলিতেই যদি পুলিশ না রাখা হয়, তবে অপরাধীদের ধরা হবে কী করে? সোমবারের ঘটনায় তরুণীর সহকর্মী নিজেই ওই দুই যুবককে ধরেন। শুধু ধরাই নয়, অভিযুক্তদের মেট্রো স্টেশন থেকে বার করে থানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াও একটা বড় কাজ। যাত্রীদের বক্তব্য, এ বার রেলের অন্যান্য স্টেশনের মতো মেট্রো স্টেশনগুলির জন্যেও কলকাতা পুলিশের আলাদা থানা তৈরি করার কথা ভাবা উচিত। যেমন থানা রয়েছে রেল পুলিশের (জিআরপি)।
মেট্রো সূত্রে খবর, মেট্রোয় আত্মহত্যা বাড়ায় এমনিতেই প্ল্যাটফর্মে সব সময়ে দু’জন করে আরপিএফ জওয়ান থাকেন। ঘটনার সময়ে ময়দান স্টেশনে অবশ্য তাঁদের কাউকেও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।
এ ব্যাপারে কী বলছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ? মেট্রোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষ ঘোষ এ দিন বলেন, “মেট্রো শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া-আসা করে বলেই নতুন করে স্টেশনে থানার কোনও ব্যবস্থা করা নেই। অন্য রেল স্টেশনে দূরপাল্লার ট্রেন চলাচল করে বলে প্ল্যাটফর্মেই থানা তৈরি করা হয়েছে।” কলকাতা পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, মেট্রোযাত্রীদের নিরাপত্তা দেখার জন্য সব সময়েই প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখে পুলিশ থাকে। সোমবারের ঘটনার সময়ে তাদের কেন সেখানে দেখা যায়নি, তা খতিয়ে দেখার আশ্বাসও দেন পুলিশকর্তারা।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “রেল স্টেশনে জিআরপি যে কাজ করে, মেট্রো স্টেশনে কলকাতা পুলিশ সেই দায়িত্বই সামলায়।” তবে সোমবার রাতে প্ল্যাটফর্মে আরপিএফের দেখা মেলেনি কেন, সে বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নজরে নিরাপত্তা
মেট্রো রেল পুলিশের সংখ্যা ৫৬০
• ইনস্পেক্টর ৫
• সাব ইনস্পেক্টর ৩
• এএসআই ১৬
• কনস্টেবল ৫৮
• হোমগার্ড, সিভিক পুলিশ, মহিলা হোমগার্ড ৪৭৮
রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স বা আরপিএফ ৪৫০
• স্টেশনের সংখ্যা ২৩ (নোয়াপাড়া বাদে)
• দমদম-কবি সুভাষ দূরত্ব প্রায় ২৮ কিমি
• দৈনিক যাত্রী-সংখ্যা ৬ থেকে সাড়ে ৬ লক্ষ
সূত্র: কলকাতা পুলিশ ও মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.