ভোট গণনা পরবর্তী রাজনৈতিক উত্তেজনা রুখতে গ্রামের পাশাপাশি শহরেও নিরাপত্তার কড়াকড়ি করা হয়েছে উত্তরবঙ্গে পাঁচ জেলায়। সোমবার সকাল থেকেই জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, মালদহ এবং দুই দিনাজপুরের পুরসভা এলাকাগুলিতেও বাড়তি পুলিশ বাহিনী মোতায়েন থাকবে। ‘গ্রাম দখলের’ লড়াইয়ের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে শহর এলাকাগুলিতেও। সেই আশঙ্কা করেই আজ, সোমবার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট গণনার দিন গ্রামের পাশাপাশি শহরকেও নিরাপত্তার নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
জলপাইগুড়ি জেলায় আলিপুরদুয়ার, ধূপগুড়ি মালবাজার, জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশি নিরাপত্তা থাকবে। উত্তেজনা ঠেকাতে একসঙ্গে একাধিক বাইক নিয়ে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা পুলিশ-প্রশাসন। তেমনিই কোচবিহার জেলার কালমাটি, বুড়িরহাটের মত উত্তেজনা প্রবণ গ্রামের পাশাপাশি কোচবিহার, তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙার মতো পুর এলাকাতেও পুলিশি নিরাপত্তা থাকবে। মালদহ এবং দুই দিনাজপুর জেলারও সব এলাকাতেই পুলিশ মোতায়েন থাকছে বলে জানা গিয়েছে। |
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের ৫৭টি কেন্দ্রে তিন স্তরের পঞ্চায়েত ভোট গোনা হবে। সকাল সাতটা থেকে গণনার কাজ শুরু হলেও জেলা পরিষদের ফল বার হতে বেশি রাত হয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গণনা কেন্দ্রে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম স্তরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের রাখা হবে। গণনা কেন্দ্রের ভেতরে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও থাকছে। গণনা কেন্দ্রের প্রায় দুশো মিটার দূরে সব রকম যানবাহন আটকে দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের চিহ্নিত অতি স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে অল্প হলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হচ্ছে।
রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি শশীকান্ত পূজারি বলেন, “উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলাতেই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শুধু গ্রাম বলে বলে জেলা সদর এবং অনান্য শহর এলাকাতেও পুলিশি টহল চলবে। বিজয় মিছিলকে কেন্দ্র করে যাতে উত্তেজনা না ছড়ায় সেদিকেও নজর রাখা হয়েছে।”
উত্তেজনা এড়াতে গণনার দিন এবং পরের দিন জলপাইগুড়ি জেলায় বিজয় মিছিল করার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। কোনও এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হলে দ্রুত মোকাবিলায় পুলিশের ‘কুইক রেসপন্স টিম’ তৈরি রাখা হয়েছে। বিজয় মিছিল নিয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে মালদহেও। কোচবিহারের ১২ টি গণনা কেন্দ্রে ৭ হাজারের বেশি কর্মী গণনার দায়িত্বে থাকছেন। প্রতিটি ঘরেই সিসিটিভি থাকলেও পৃথক ভাবে ভিডিওগ্রাফি করা হবে। |
হলদিবাড়ি হাইস্কুলের গণনা কেন্দ্রেও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। মালদহের ১৫টি ভোট গণনা কেন্দ্রে ১৪৪ ধারা জারি থাকছে। জেলায় গণনার জন্য ২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রেখে দেওয়া হয়েছে।
গণনা কেন্দ্রে খাবার, জলের বোতলও নেওয়া নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। উত্তর দিনাজপুরে গণনা কেন্দ্রের বাইরে তিন স্তরের নিরাপত্তা বাহিনী থাকার পাশাপাশি কেন্দ্রের ভেতরেও দুটি স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। দক্ষিণ দিনাজপুরের ৮টি গণনা কেন্দ্রের সবকটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো সম্ভব হয়নি। তবে গোটা প্রক্রিয়াই ভিডিও করবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। বেশি রাতে ফল ঘোষণা হলে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছে কোচবিহার জেলা প্রশাসন। জেলার অতীত অভিজ্ঞতার নিরিখে এবারে দ্রুত গণনা পর্ব সেরে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী জানিয়েছেন, রাত আটটার মধ্যে জেলার সব স্তরের ফল ঘোষণার চেষ্টা চলছে। |