মমতা-ম্যাজিকে ডজন জেলা জেতার আশায় তৃণমূল
আজ গ্রামবাংলার মন বোঝার পালা
গ্রামবাংলায় মমতা-ম্যাজিক কি অটুট আজ জানাবে ভোট বাক্স।
দক্ষিণবঙ্গ কোথায় দাঁড়িয়ে, কোন দিকেই বা উত্তর জবাব মেলা শুরু আজ সকাল আটটা থেকে।
বাম ভোটব্যাঙ্কে কি আরও ক্ষয়? নাকি পতন রুখে এ বার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা? কংগ্রেস কি মুর্শিদাবাদ উদ্ধার করতে পারবে? মালদহেই বা কী হবে?
গ্রামবাংলার মন বোঝা যাবে আজ, সোমবার সকাল আটটা থেকে, গণনাকেন্দ্রে ভোটবাক্সগুলি খোলার পরে। আর এই মন বোঝার পালাই ঠিক করে দেবে রাজ্য রাজনীতির আগামী রূপরেখা।
শহর ও গ্রামের উজাড় করা জনসমর্থন নিয়েই দু’বছর আগে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন তিনি ছিলেন কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ। সেই জোট ভেঙে যাওয়ার পরে সাম্প্রতিক কালে কয়েকটি উপনির্বাচনে কোথাও কোথাও সামান্য হোঁচট খেলেও তৃণমূলের জয়রথ থামেনি। গত মাসে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান কমেছে ঠিকই, কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় তাদের প্রতাপ অনেকটাই অক্ষুণ্ণ রাখতে পেরেছে শাসক দল। এই প্রেক্ষাপটেই এ বারের পঞ্চায়েত ভোট, যেখানে প্রথম বারের জন্য সামগ্রিক ভোটযুদ্ধে পরীক্ষা হতে চলেছে মমতা-ম্যাজিকের।
গণনা কেন্দ্রে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
গত বার বাক্স খুলে প্রথম গোনা হয়েছিল জেলা পরিষদ। তার পরে পঞ্চায়েত সমিতি। সব শেষে গ্রাম পঞ্চায়েত। রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এ বারে প্রথম গোনা হবে গ্রাম পঞ্চায়েত। তার পরে পঞ্চায়েত সমিতি এবং সব শেষে জেলা পরিষদ। কমিশনের সচিব তাপস রায়ের বক্তব্য, “পঞ্চায়েত আইনে এই প্রক্রিয়াতেই ভোট গণনার বিধান রয়েছে।” তিন দফার ব্যালট গোনার শেষে গ্রামবাংলার রাজনৈতিক ছবি পরিষ্কার হতে স্বভাবতই দু’দিন লেগে যাবে। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব আশাবাদী, গণনা শেষে অন্তত এক ডজন জেলা পরিষদ তাঁদের ঝুলিতে আসবে।
গত পাঁচ বছর ধরে বাংলার ভোটের যে ধারা, তাতে এই মুহূর্তে তৃণমূলের চিন্তিত হওয়ার বিশেষ কারণ নেই বলেই মনে করেন রাজনীতির লোকজন। তবে গত দু’বছরে ক্ষমতায় থাকার সময়ে মমতার নেতৃত্বাধীন সরকার যে ভাবে একের পর এক ঘটনায় সমালোচনার কাঠগড়ায় উঠেছে এবং বিতর্কে জড়িয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই অন্য গুরুত্ব পাচ্ছে এ বারের গ্রামবাংলার ভোট। বিশেষত, এই ভোট হওয়া নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক নির্বাচনটিতে আলাদা মাত্রা জুড়েছে।
তৃণমূল নেতৃত্বের জেলাওয়াড়ি হিসেব-নিকেশ মোটের ওপরে শেষ। তাঁদের ধারণা, খারাপ হলেও তাঁরা অন্তত ১১-১২টি (কেউ কেউ আশা করছেন কম করে ১৩টি) জেলা পরিষদ জিতছেনই। ভাল হলে সংখ্যাটা পৌঁছতে পারে ১৪-১৫’য়। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ির মতো জেলাগুলিকে নিজেদের পক্ষে ধরেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “সরাসরি যেগুলো আমরা জিতব, তার বাইরেও কয়েকটা জেলা পরিষদে আমাদের নির্ণায়ক ভূমিকা থাকবে।” মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ির মতো জেলা পরিষদ শেষ পর্যন্ত ত্রিশঙ্কু হতে পারে বলে শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের ধারণা। এবং সে ক্ষেত্রে মালদহের মতো জেলায় তাঁদের আশা, সিপিএমকে দূরে রেখে কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত তাঁদেরই হাত ধরবে।
বর্ধমানে স্ট্রং রুমের বাইরে কড়া পাহারা। ছবি: উদিত সিংহ।
কংগ্রেস অবশ্য ভোট-পরবর্তী বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। নিজেদের শক্ত ঘাঁটিগুলিতে প্রতাপ ধরে রাখা যাবে বলে তারা আশাবাদী। আবার তৃণমূলকে ঠেকাতে ত্রিশঙ্কু জেলা পরিষদে বামেরা যে তাঁদের সম র্থনের কথা ভাবতে পারে, সেই সম্ভাবনাও মাথায় রাখতে হচ্ছে কংগ্রেস নেতৃত্বকে।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে হাজার পাঁচেক বুথ দখলের অভিযোগ করেছেন বামেরা। বাকি প্রায় ৫৪ হাজার বুথে মানুষ কী রায় দিয়েছেন, তার কিন্তু স্পষ্ট ধারণা করতে পারছেন না তাঁরা। এর বড় কারণ, এ বারে বিপুল ভোটের হার, যা ধন্দে রেখেছে বাম শিবিরকে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “ভয়-ভীতির পরিবেশের মধ্যেও অনেকে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এখনও কি আমাদের উপরে মানুষের রাগ কমেনি? নাকি দু’বছরে রাজ্য সরকারের প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে? বাক্স না খুললে বোঝা যাবে না!”
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে ব্যালট বাক্সের বাইরেও কম নাটক হয়নি এ বারে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের দীর্ঘ টানাপোড়েন চলে। প্রথমে হাইকোর্ট, তার পরে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে সেই লড়াই। শেষে শীর্ষ আদালত ঠিক করে দেয় পাঁচ দফার ভোটপর্ব। এই পুরো সময়টা ধরে বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, সারদা-কাণ্ড এবং আরও নানা ঘটনায় জনসমর্থন খোয়ানোর ভয়ে ভোটের মুখোমুখি হতে চাইছে না শাসক দল। তৃণমূল পাল্টা বলেছে, পরাজয় অবধারিত জেনেই কমিশনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিরোধীরা ভোট পিছোতে উঠেপড়ে লেগেছে।
সব শেষে অবশ্য কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে, ভোট হয়েছে, আবার রক্তপাতও আটকানো যায়নি। এ বার ফলপ্রকাশের পালা।
গত বার ১৭টি জেলা পরিষদের মধ্যে দু’টি ছিল তৃণমূলের হাতে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে। এ বারে সেখানে তাদের দুর্গরক্ষার লড়াই।

কোথায় কত আসন
গ্রাম পঞ্চায়েত ৪৮৮০০
পঞ্চায়েত সমিতি ৯২৪০
জেলা পরিষদ ৮২৫
গণনাকেন্দ্র ৩২৯
পাহারায় ৪৫ কোম্পানি
গণনা শুরু হবে আজ সকাল ৮টায়• প্রথমে গোনা হবে গ্রাম পঞ্চায়েত। তার পরে পঞ্চায়েত সমিতি। সব শেষে জেলা পরিষদ • গণনাকেন্দ্রের ২০০ মিটার চৌহদ্দি ঘিরে ১৪৪ ধারা • কেন্দ্রের ভিতরে নিষিদ্ধ মোবাইল• থাকবে সিসিটিভি। চলবে ভিডিওগ্রাফি• নিষিদ্ধ বিজয়মিছিল
বিশেষ সতর্কতা: বর্ধমান, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম
কংগ্রেসের হাতে ছিল দু’টি জেলা পরিষদ, উত্তর দিনাজপুর এবং মালদহ। বাকি ১৩টিতেই ক্ষমতাসীন ছিল বামফ্রন্ট। বিধানসভার পরে পঞ্চায়েত ভোটও এ বার সেই অর্থে তৃণমূলের কাছে পরিবর্তনের লড়াই। পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে অবশ্য প্রায় সমান-সমান ক্ষমতা ছিল বাম ও অ-বাম শিবিরের। পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল জয় মানে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের জমি তৈরিতে অনেকটা এগিয়ে যাবেন মমতা। আবার প্রশাসক মমতার কাছে বড় পরীক্ষা হতে চলেছে গণনা-পরবর্তী সময়ে রাজ্যে শান্তি বজায় রাখা। কারণ, অশান্ত মনোনয়ন ও ভোট-পর্বের শেষে ফল ঘোষণার পরে আরও বড় অশান্তির আশঙ্কা করছে বিরোধীরা।
দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির ভোট গণনা নিয়েই কমিশন বিশেষ ভাবে ভাবিত। কমিশনের সচিব জানান, গণনার সময় অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বর্ধমান, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ এবং বীরভূম জেলায়। প্রথম চারটি জেলায় মোতায়েন করা হচ্ছে চার কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বীরভূমে থাকছে তিন কোম্পানি। অন্য জেলাগুলিতে থাকছে দুই কোম্পানি করে। কমিশনের সচিব এ দিন বলেছেন, “পুলিশের অনুমতি ছাড়া কোথাও বিজয় মিছিল করা যাবে না।”
এই পরিস্থিতিতে বামেরা ইতিহাসের দিকে তাকাচ্ছেন। ১৯৭৭ সালে ভোটে জেতার পরের বছরই পঞ্চায়েত ভোটে সব ক’টি জেলা পরিষদ জিতেছিলেন তাঁরা। সেই ধারা বজায় ছিল দীর্ঘদিন। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বাম নেতৃত্ব মনে করছেন, ২০১১-র পরিবর্তনের ঝড়ের দু’বছরের মাথায় যদি তাঁরা তিন-চারটি জেলা পরিষদও জিততে পারেন, সেটা হবে যথেষ্ট ইতিবাচক ঘটনা। বামেদের যাবতীয় ভাবনাচিন্তা চলছে ২০১১ মাথায় রেখেই, ২০০৮-কে ধরে নয়। এই সব অঙ্কেরই জট খুলবে আজ, বাক্স খোলার পরে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.