৮০ লক্ষ গাছের জঙ্গল কেটে অরুণাচল, মণিপুরে দু’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির ছাড়পত্র দিল না কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রক। মন্ত্রকের আপত্তিতে থম্কে গেল ৩ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দিবাং এবং দেড় হাজার মেগাওয়াটের টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ।
পরিবেশবিদদের বক্তব্য ছিল, ওই প্রকল্পগুলি ‘সবুজ সংকেত’ পেলে মণিপুর, মিজোরামের ২৪,৩২৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকার জঙ্গলে ৮০-৮৫ লক্ষ গাছ কাটা হবে। এতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে ওই অঞ্চলের পরিবেশে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্টের পাশাপাশি আশঙ্কা থাকবে ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’-এরও। সম্প্রতি কেদারনাথ, বদ্রীনাথের মতো উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে যে ভাবে নির্বিচারে নির্মাণের ‘প্রতিশোধ’ নিয়েছিল প্রকৃতি।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, অরুণাচল, মণিপুরে দু’টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়লে পরিবেশে কী প্রভাব পড়তে পারে, তা দেখতে প্রথমে ‘ফরেস্ট অ্যাকশন কমিটি’ গঠন করা হয়। পরে, সাব-কমিটিও তৈরি করা হয়েছিল। সমীক্ষার পর কমিটি একটি রিপোর্টে জানায়, প্রকল্পগুলি তৈরির জন্য যতটা অরণ্য ধ্বংস করতে হবে, তার ক্ষতিপূরণ কোনওভাবেই সম্ভব নয়। এরপরই দিল্লিতে বৈঠকে বসেন বন ও পরিবেশমন্ত্রকের শীর্ষকর্তারা। সেখানে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানান, পাহাড়-অরণ্য ধ্বংস করে বিরাট বাঁধ গড়লে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ভেঙে পড়বে। মণিপুরে ২২ হাজার ৭৭৮ হেক্টর অরণ্যভূমি কেটে ফেলার পরিকল্পনায় রাজি হতে পারেননি বৈঠকে উপস্থিত সকলেই। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করা যেতে পারে। ওই দু’টি রাজ্যেই বিশালাকার বাঁধের বদলে ছোট, মাঝারি আকারের কয়েকটি বাঁধ তৈরি করে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির কথাও চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে দিবাং উপত্যকায় আদি, গালো, মিসমি সম্প্রদায়ের গ্রামের আশপাশে ৫৮২৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হত। কাটতে হত ৪ লক্ষ গাছ।
অরণ্যভূমি ধ্বংসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান মিসমিরা। আন্দোলন শুরু করেন তাঁরা। সরকারি সূত্রের খবর, ২০০৭ সালে দিবাং প্রকল্প নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের পর আন্দোলনকারীদের জন্য ১৩-১৪ বার গণশুনানির আয়োজন করা হয়। কিন্তু, তাতে লাভ হয়নি। পরিবেশপ্রেমীরাও অরুণাচলে অরণ্য ধ্বংস, বন্যপ্রাণ নিধন এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট রুখতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন।
টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে আপত্তি তুলেছিল বাংলাদেশও। বরাক ও তুইভাই নদীর উপরে ওই প্রকল্পকে ২০০৮ সালে প্রাথমিক ছাড়পত্র দেয় পরিবেশমন্ত্রক। কিন্তু মণিপুর, মিজোরাম এবং বাংলাদেশের সুরমা উপত্যকায় বাঁধ-বিরোধী আন্দোলন কমেনি। মণিপুরের ওই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য প্রায় ৮২ লক্ষ গাছ কাটতে হত।
পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, অরুণাচল এবং মণিপুরের ওই অরণ্যে নানা প্রজাতির গাছ তো রয়েছেই, একইসঙ্গে সে সব জঙ্গল বাঘ, চিতাবাঘ, মেঘলা চিতাবাঘ, উল্লুক, স্লো লরিস, পিগ টেল্ড ম্যাকাক, ভালুক, মালয় ভালুক, প্যাঙ্গোলিন, রক পাইথন, হিমালয়ান মারটেন, ঘড়িয়াল, ধনেশ, কালো চিতাবাঘ-সহ বহু বিপন্ন প্রাণীর বাসস্থান। জঙ্গলের বনজ সম্পদের উপরও আশপাশের জনবসতির বাসিন্দারা নির্ভরশীল। |