আক্রান্ত ২ পুলিশ, অভিযুক্ত তৃণমূল
নির্বাচনের দিন সকালে গণ্ডগোলের আঁচ পেয়ে মৃদু লাঠি চালিয়েছিল পুলিশ। শাসক দলের কর্মীদের উপর হাত তোলার ‘আস্পর্ধা’ দেখানোর সেই ‘অপরাধেই’ দুই পুলিশ কর্মীর উপর চড়াও হয়ে তাঁদের হেনস্থা করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস পালের বিরুদ্ধে। তবে এ ক্ষেত্রে পাড়ুই থানার ‘মডেল’ই অনুসরণ করেছেন ওই জেলার পুলিশ কর্তারা। থানায় নিছকই একটি জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করে শুভাশিসবাবু এবং তাঁর অনুগামীদের সরকারি কর্মীদের উপরে হামলা করার দায় থেকে রেহাই দেয় জেলা পুলিশ।

অভিযুক্ত
শুভাশিস পাল
তারই প্রতিবাদে হরিরামপুর থানার পুলিশ কর্মীরা শনিবার সকাল থেকে ডিউটি করতে অস্বীকার করেন। দিনভর দফায় দফায় থানায় এসে নীচু স্তরের পুলিশ কর্মীদের সেই ক্ষোভ প্রশমনে করে এ দিন সন্ধেয় জেলা পুলিশ কর্তারা জানিয়েও দিয়েছেন, ‘ঘটনা তেমন কিছুই নয়।’ তবে ক্ষোভ যে মেটেনি ‘অপমানিত’ পুলিশ কর্মীদের কথাতেই তা স্পষ্ট। থানার ব্যারাকে কর্মীদের অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছে, ‘শান্তিতে ভোট করানোও অপরাধ!’
কী হয়েছিল শুক্রবার?
ওই দিন সন্ধেয় থানার কাছেই বাস স্ট্যান্ডে ওষুধ আনতে গিয়েছিলেন সাব ইন্সপেক্টর শিবপ্রসাদ বসু। তিনি বলেন, “রাত আটটা নাগাদ জিপ নিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ওষুধ কিনে ফিরছিলাম। হাই রোডে তৃণমূল অফিসের সামনে দেখি জটলা। গাড়ি কাছে যেতেই আটকানো হল। শুভাশিস পাল থানার আইসির নামে অকথ্য গালিগালাজ শুরু করেন। দাবি ওঠে গাড়ি ছাড়া হবে না। আইসিকে এসে গাড়ি ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে হবে।” এই সময়ে ওই দুই পুলিশ কর্মীর গায়ে হাত তোলা হয়েছিল বলেও অভিযোগ। ওই পুলিশ অফিসার অবশ্য তা মানেননি। থানায় ফিরে ঘটনাটি জানাতেই পুলিশ কর্মীদের মধ্যেই তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। ক্ষুব্ধ পুলিশ কর্মীরা সিদ্ধান্ত নেন ‘ডিউটি’-তে যোগ দেবেন না কেউ।
শনিবার সকাল থেকে কর্মীরা কেউই কাজে যোগ দেননি। থানায় গিয়ে দেখা গিয়েছে। ডিউটি রুম একা আগলে বসে রয়েছেন এক জন পুলিশ কর্মী। আইসি’র ঘরে বসে ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টাকরে চলেছেন গঙ্গারামপুরের এসডিপিও স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। থানার আইসি দেবাশিস বসুও বলেন, “গণ্ডগোল হলে পুনর্নির্বাচন অবশ্যম্ভাবি ছিল। সেটা চাইনি। তাই সামান্য কড়া হতে হয়েছিল। তাই ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে পুলিশ কর্মীদের।” ক্ষুব্ধ পুলিশ কর্মীদের কাজে যোগ না দেওয়ার পাশাপাশি এ দিন সারা দিন থানার আইসির বুকের ব্যাজও চোখে পড়েনি। প্রতিবাদ? তড়িঘড়ি উত্তর দিচ্ছেন স্বপনবাবু, “ভুলে গিয়েছেন হয়তো।” থানার কর্মীদের ‘ক্ষোভ’ উড়িয়ে দিয়ে জেলা এসপি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করেন, “হরিরামপুরে তেমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। থানায় স্বাভাবিক কাজকর্ম চলছে। কর্মবিরতির অভিযোগ ঠিক নয়।”
কিন্তু পুলিশ কর্মীদের উপরে চড়াও হওয়া সত্ত্বেও নিছক জিডি করা হল কেন? পদস্থ পুলিশ কর্তাদের কারো কাছেই তার কোনও সদুত্তোর মেলেনি। নীচুতলার পুলিশ কর্মীরা অবশ্য অনেকেই জানিয়েছেন, প্রায় জোর করেই এফআইআর না করে ঘটনাটি লঘু করে দেখাতে জিডি করা হয়েছে। সেখানে শুভাশিসবাবুর নামোল্লেখও করা হয়নি। এমনকী থানার কর্মীদের একাংশের অভিযোগ শিবপ্রসাদবাবুকে যে ‘চড়’ মারা হয়েছিল, সেই অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলার জন্যও তাঁর উপরে চাপ তৈরি করা হয়েছিল।
অভিযুক্ত শুভাশিসবাবু অবশ্য পুলিশকে ঘেরাও করার ঘটনাও মানতে চাননি। তাঁর সাফ কথা, “কই এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি তো।” তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। তিনি বলেন, “হরিরামপুরে দলীয় কর্মীরা মার খেয়েছিলেন। তার প্রতিবাদে এলাকার নেতা হিসাবে শুভাশিস বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তা নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে শুক্রবার রাতে পথ অবরোধ চলছিল। সেই সময়ে পুলিশের জিপটি আটকে পড়েছিল মাত্র। কর্মী-সমর্থকেরা সামান্য বিক্ষোভ দেখিয়ে ছিলেন।”
জেলা সিপিএমের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন মন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাস এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, “বিরোধীরাই নয় এ রাজ্যে এখন পুলিশও আক্রান্ত। ওদের দলে এখন সবাই আরাবুল, অনুব্রত মন্ডল!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.