গিলোটিনে ৬৩ দফতরের বাজেট
মন্ত্রী ছাড়াই পেশ স্বাস্থ্য বাজেট, সাফাইয়েও চড়া সুর মুখ্যমন্ত্রীর
বিধানসভার অধিবেশনে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
রাজ্যের ৬৩টি দফতরের বাজেট গিলোটিন-এ পাঠাতে শনিবার এক দিনের জন্য বিধানসভার অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য জুড়ে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে তাদের মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে না দেওয়া, গুরুত্বপূর্ণ সব দফতরের বাজেট গিলোটিনে পাঠানোর প্রতিবাদে বাম-সহ নানা কারণে কংগ্রেস এবং এসইউসি-র বিধায়করা সভা বয়কট করেন। পরে সভায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার থেকে শুরু করে বিরোধীদের তুমুল সমালোচনা করে যে বক্তৃতা করেন, তা শোনার জন্য তাঁর দলের বিধায়ক ছাড়া আর কোনও দলের সদস্যরা ছিলেন না। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র যা নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছেন, “আইনশৃঙ্খলা নিয়েই উনি বললেন। অথচ আমাদের বলার সুযোগ থাকল না।”
ঘোষণা অনুযায়ী অধিবেশন শুরু হয় এ দিন সকাল ৯টায়। কিন্তু সভায় মুখ্যমন্ত্রীর দেখা মেলে তার তিন ঘণ্টা পরে। তিনি যখন আসেন, তার আগেই সব বিরোধী দল সভা বয়কট করে চলে গিয়েছে। গোটা অধিবেশন কক্ষে তখন শুধুই তৃণমূলের বিধায়করা। তাঁদের সামনেই দেরির কারণ ব্যাখ্যা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কোনও দুঃখপ্রকাশ নয়, বরং স্বভাবসিদ্ধ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বিরোধীদের সমালোচনা করে তিনি বলতে থাকেন, “আমি হাউসকে আগেই জানিয়েছিলাম, আমার আসতে সাড়ে ১২টা হবে। আমি জানি, এ সব জানিয়ে রাখতে হয়। আমি অতীতে অনেক বড় বড় জায়গায় দায়িত্ব পালন করে এসেছি। ওরা (বিরোধীরা) জ্ঞান দেয় ছোট জায়গায় বসে। আমাকে অনেক কাজ করতে হয়। রাজ্য চালানোটা ললিপপ নয় যে, হাতে ধরিয়ে দেবে আর চুষে-চুষে খাব।” তার পরেই তিনি চলে যান পঞ্চায়েত নির্বাচন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, কেন্দ্র ও বিরোধীদের সমালোচনা প্রসঙ্গে। বিধানসভায় দাঁড়িয়েই বলেন, “এ সব তৃণমূল নেত্রী হিসেবে বলছি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই ফাঁকা মাঠে আক্রমণ নিয়ে সভার বাইরে সরব হয় বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস। সূর্যবাবু বলেন, “নজিরবিহীন ঘটনা। বিধানসভার ইতিহাসে কখনও হয়নি। সব বাজেট গিলোটিনে পাঠিয়ে শেষ করে দেওয়া হল।” সূর্যবাবুর অভিযোগ, “উনি (মুখ্যমন্ত্রী) যা বললেন, তা নিয়েই আমরা মুলতবি প্রস্তাব এনে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। স্বরাষ্ট্র দফতরের বাজেট পেশ করেও এই কথাগুলো বলতে পারতেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর এড়াতেই আমাদের অনুপস্থিতিতে এ সব কথা বললেন।”
এ দিন অধিবেশনের শুরুতে শোকপ্রস্তাব পাঠের পরেই অশান্ত হয়ে ওঠে বিধানসভা। পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার অভিযোগ তুলে আরএসপি-র সুভাষ নস্কর মুলতবি প্রস্তাব পড়তে শুরু করতেই পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় উঠে দাঁড়িয়ে স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, “এ কী হচ্ছে? মুলতবি প্রস্তাব তোলার কথা তো কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে হয়নি!” এতে স্পিকারও কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে যান। প্রকাশ্যে আসে স্পিকার-পরিষদীয় মন্ত্রীর মতানৈক্য। শুরু হয় চিৎকার চেঁচামেচি। সুভাষবাবু বসে পড়েন।
এ বার আওয়াজ ওঠে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। তাদের বিধায়ক অসিত মিত্র একটি মুলতবি প্রস্তাব পড়তে অনুমতি চান। স্পিকার রাজি না-হওয়ায় হইচই শুরু হয়ে যায়। কংগ্রেস বিধায়করা স্পিকারের কাছে জানতে চান, বামফ্রন্ট যে সুযোগ পাচ্ছে, তাঁদের দল তা পাবে না কেন? তৃণমূল-সিপিএম ঘনিষ্ঠতা নিয়ে টিপ্পনি ছুড়ে দিতে দিতে সারা দিনের জন্য কক্ষত্যাগ করেন কংগ্রেস বিধায়কেরা।
গোলমাল বাড়ে স্বাস্থ্য বাজেট নিয়ে আলোচনার শুরুতেই। কারণ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী তখনও সভায় হাজির হননি! স্বাস্থ্য-বাজেট নিয়ে আলোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর না থাকার তীব্র নিন্দা করে বামেরা অধিবেশন বয়কট করে চলে যান। যাওয়ার আগে সূর্যবাবু বলেন, “স্বাস্থ্যকে নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়েছে বলেই শনিবার সকাল ন’টায় অধিবেশন ডাকা হয়েছে। তা হলে কেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী সভায় উপস্থিত নেই? যে অধিবেশন ও হাউসকে গুরুত্ব দেন না মুখ্যমন্ত্রী, তার তীব্র নিন্দা করে বাজেট নিয়ে সমস্ত আলোচনা বয়কট করছি।” তাঁর মন্তব্য, “এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে স্বাস্থ্যের বদলে রাজ্যের স্বাস্থ্য নিয়ে বেশি চিন্তিত।” পরে বাম-বিধায়কেরা বাইরে এসে সভার কাগজপত্র ছিঁড়ে উড়িয়ে দেন। মুখ্যমন্ত্রী সভায় ঢোকেন এ সবের পরে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.