রাজ্য পুলিশের পুরো বেতনই বহন করে রাজ্য সরকার। কিন্তু রেল পুলিশের বেতনের অর্ধেক দেয় রেল। তা সত্ত্বেও রেল পুলিশে সাড়ে তিন হাজার পদ কেন ফাঁকা পড়ে রয়েছে শ্লীলতাহানির ভয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে এক যুবতীর ঝাঁপের পরে সেই প্রশ্নই তুলছেন রাজ্য প্রশাসনের একাংশ।
তাঁদের বক্তব্য, বাম আমলের শেষের পাঁচ বছরে পুলিশে কোনও নিয়োগ হয়নি। অথচ, প্রতি মাসে গড়ে ১০০-রও বেশি কর্মী অবসর নিয়েছেন। সব চেয়ে ঘাটতি সাব ইনস্পেক্টরের। তাঁদের অভাবে রাজ্যের অধিকাংশ থানা ধুঁকছে। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগী হলেও গত দু’বছরে শুধু কনস্টেবলই নিয়োগ হয়েছে। তাতেও এই পদে ঘাটতি পূরণ করা যায়নি। এক পুলিশকর্তা বলেন, “অর্থের অভাবে যেমন চারটির বেশি কমিশনারেট তৈরি করা যায়নি, একাধিক থানা ভাঙার প্রস্তাব ফাইলবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে, তেমনই পুলিশে নিয়োগ প্রক্রিয়াও কার্যত থমকে রয়েছে।” কিন্তু রেল পুলিশে (জিআরপি) নিয়োগে অর্থ কোনও সমস্যা নয় বলে মনে করেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা।
স্বরাষ্ট্র দফতরও সে কথা অস্বীকার করেনি। ওই দফতরের একাধিক কর্তার বক্তব্য, “জিআরপি-তে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ধরে রেল বাজেটে টাকা বরাদ্দ হয়। কর্মরত পুলিশের মাথা গুনেই তারা বেতনের টাকা দেয়। সারা বছর ধরে ওই টাকা আমরাই মেটাই। বছরের শেষে সেই হিসেব রেলের কাছে পাঠালে তারা বকেয়া মিটিয়ে দেয়। এই ব্যবস্থাই চলে আসছে বছরের পর বছর।” |
কত রেল পুলিশ |
|
|
থাকার কথা |
আছে |
হাওড়া
শিয়ালদহ
খড়্গপুর
শিলিগুড়ি |
১৭৯৫
১৬০১
৯৬৬
১১৪২ |
১৩৩১
১১৮২
৫৭৩
৫৪১ |
|
তা হলে রেল পুলিশের এই হাল কেন? রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার মতে, গলদটা গোড়াতেই। তাঁর বক্তব্য, “রেল পুলিশে পৃথক ভাবে নিয়োগের কোনও সুযোগ নেই। রাজ্য পুলিশ থেকেই কর্মীদের রেল পুলিশে পাঠানো হয়। ফলে রাজ্য পুলিশে যখন হাজার হাজার পদ ফাঁকা পড়ে থাকার আঁচ তো রেল পুলিশে পড়বেই।” রেল পুলিশের এডিজি অমর সরকার অবশ্য বলেছেন, “সম্প্রতি কিছু লোক আমরা পেয়েছি। বাকি পদ পূরণের জন্য সরকারকে চিঠি লেখা হয়েছে।”
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী অবশ্য বিষয়টিকে রাজ্য সরকারের উদাসীনতা বলেই মনে করেন। তাঁর বক্তব্য, “বেতনের হিসেব দিয়ে টাকা পায়নি, এমন কথা রাজ্য বলতে পারবে না। তবু রেল পুলিশে লোক দিচ্ছে না ওরা। সেই সুযোগে অপরাধীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।”
সরকারি সূত্রের খবর,শুধু রেল পুলিশের অর্ধেক বেতন দেওয়াই নয়, ওই বাহিনীতে অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করতেও রেলের অনুমোদন জরুরি। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “রেল পুলিশে নতুন পদ তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট রেল-জোনের জেনারেল ম্যানেজারের মাধ্যমে ওই প্রস্তাব রেল বোর্ডে পাঠাতে হয়। সেখান থেকে ছাড়পত্র মিললে তবেই অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করা যায়।” রেলের জায়গায় জিআরপি থানা করতেও রেল বোর্ডের অনুমতি প্রয়োজন। মহাকরণ সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরবর্তী কালে মুকুল রায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বালুরঘাট ও দিঘায় দু’টি জিআরপি থানা করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু থানা তৈরি তো দূরের কথা, জায়গাই পাওয়া যায়নি।
রাজ্য পুলিশের একাংশের অভিযোগ, জিআরপি-কে শক্তিশালী করে তুলতে রেলের তেমন আগ্রহ নেই। তাই ওই বাহিনীতে অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করার অনুমতি চেয়ে ছ’মাস আগে চিঠি দিয়েও উত্তর মেলেনি। তাঁদের বক্তব্য, আগে রেলরক্ষী বাহিনীর (আরপিএফ) দায়িত্ব ছিল শুধু রেলের সম্পত্তি রক্ষা করা। রেলের সম্পত্তি চুরি করার অভিযোগে কেউ ধরা পড়লে তার বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকারটুকুও ছিল না তাদের। জিআরপিকেই অভিযোগ নথিভুক্ত করতে হত। এক পুলিশকর্তা বলেন, “নীতীশ কুমার রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আইন সংশোধন করে রেলের এলাকায় আইন রক্ষার দায়িত্বও আরপিএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই আইনবলে তারা মামলা দায়ের করতে পারে, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারে, এমনকী পুরোদস্তুর তদন্তও করতে পারে। এর পরেই জিআরপি-র ক্ষমতা অনেকটা লঘু হয়ে গিয়েছে।” রেল অবশ্য এই অভিযোগ মানেনি। |