রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ৩...
একটা[ভয়]কষ্টলজ্জাঘেন্না
কটা ফিচেল, একটা নিপাট, একটা মিচকে। মুঠো মুঠো আলোর ফুলকি, দু-আড়াই ফুটের একটা একটা আস্ত বিস্ময়। আমাদের আমাশা-জমজমে মনে ঠেসেঠুসে জবরদস্তি সেঁধিয়ে দেয় আনন্দকণা— আজ্ঞে, আমার, আপনার, সবার বাড়ির ‘s’ সাইজের কথা হচ্ছে। এদের দুষ্টুমির পারদ বংশপঞ্জিকা মেনে বা স্ব-নির্মিত হতে পারে, কিন্তু একটা বৈশিষ্ট্য কমন। সত্যবাদিতা। এবং এ হেন সত্যবাদী যুধিষ্ঠির টিম তাদের মা-বাবাকে যে কোনও সময় ‘এ মা গোল খেয়ে গেলুম’ মর্মে রাঙা মুখে স্টেজ ছাড়তে বাধ্য করে।
প্রথম যুধিষ্ঠির আমার এক পরিচিত পরিবারের বিচ্ছু। বেসামাল রকম ইনটেলিজেন্ট। হাতে-পায়ে সে বিশেষ দুরন্ত ছিল না। কিন্তু চোখ-নাক-কান সাংঘাতিক রকম খোলা। রেডার-এ যে কখন কী ধরা পড়ে যেত দেবা ন জানন্তি, কুতঃ তার মা! এক দুপুরবেলা বিচ্ছুটি বারান্দায় বিকল রেডিয়ো খুলে ফেলছিল মন দিয়ে। আর তার মা, কাকিমা, জেঠিমারা এক খুড়িশাশুড়ির সম্পর্কে গুচ্ছের বেফাঁস কথা চালাচালি করছিল। বিকেল নাগাদ সেই কাকিমা স্বয়ং উদয় হলেন। বেল বাজতেই বিচ্ছুটি ভাবলেশহীন মুখে দরজা খুলে ভেতরের দিকে গলা উঁচিয়ে বলল, ‘মা, তোমাদের কুচুটে বুড়ি এসে গেছে। এসো ছোটদিদা।’ ঘর থেকে বেরিয়ে তিন বউ স্থাণু। লেখক বলবেন, গোধূলির রং ধীরে ধীরে তাহাদের মুখেও ফুটিয়া উঠিল।
দ্বিতীয় যুধিষ্ঠির আমারই দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের ছেলে। কিন্ডারগার্টেন তার দাপটে একটাই মন্ত্র জপত— ত্রাহি, ত্রাহি। সে ছোট্টটার মা-বাবা তাকে নিয়ে গেছে মিশনারি স্কুলের অ্যাডমিশনে। কিন্তু উত্তর দেবে কে? ফাদারের মুখের দিকে অমিতাভের অ্যাংরি ইয়াংম্যান লুক দিয়ে সে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। ফাদার বাবা-বাছা করে অনেক ক্ষণ বোঝানোর পর, টফি-লজেন্স দেওয়ার পরও, ছেলের মুখে রা নেই। এমন সময় হঠাৎ দৈববাণীর মতো একটি বাক্য ধ্বনিত হল। ছেলেটি তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমায় চিমটি কাটছ কেন?’ ব্যস, এত ক্ষণ সাড়ে পনেরোয় দুর্ভাগ্য আটকে ছিল, এ বার ষোলো কলা পূর্ণ হল। ফাদার বিষম রেগেমেগে বললেন, আপনারা বাচ্চা মানুষ করতে জানেন না, শিশুটির মনে কত লাগল, সে উত্তর দিচ্ছে না বলে তাকে আপনারা জোর করতে পারেন না, ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনিতে যা খই ফোটে ছেলের মুখে তাতে নিখরচায় খই ফ্যাক্টরি বানিয়ে ফেলতে পারে ফ্যামিলি, কিন্তু সে দিন বিধি বাম টু দ্য পাওয়ার ইনফিনিটি। মিশনারি স্কুলে ছেলের না-পারার জন্য নয়, মায়ের চিমটি কাটার জন্যই নাকি ছেলের অ্যাডমিশন হয়নি। অবশ্য অভাগী মায়ের বক্তব্য— পেছন থেকে ছেলেকে একটু ঠেলেছিলাম, যদি একটা-দুটো উত্তর দেয়।
তিন নম্বরটি একটি নায়িকা। নাচের স্কুলের ফাংশনের রিহার্সাল দেওয়ার পথে মা এক বার পৌলোমী আন্টির বাড়ি ঢুঁ মারতে গিয়েছিল। ‘অ্যাই পৌলোমী, তুই সে দিন বলছিলিস না, মায়ের তৈরি করা ক্রুশের চাদরটা যদি তোকে এক বার দেখাই। এই দ্যাখ, খুঁজে পেয়েছি।’ পৌলোমী আন্টি বলল, ‘ও মা, এত তাড়ার কী ছিল? আর সে তো অনেক দিন আগে বলেছিলাম। আজই কেন? মানে, তোমার মেয়ের রিহার্সাল চলছে না?’ এ বার নায়িকার মা গদগদ হয়ে বলল, ‘তাতে কী হয়েছে রে? তোর ভাল লাগবে বলেই তো আমি খুঁজে নিয়ে এলাম। দ্যাখ সাইডটা কী রকম কঠিন একটা ডিজাইন কী সহজে করেছেন মা...’ ঘড়ির কাঁটা এগোয় আর নায়িকা বলে, ‘ও মা চলো, দেরি হচ্ছে যে!’ পাত্তাই পায় না সে। পৌলোমী আন্টি দু’বার তাড়া দিলেও মায়ের কোনও হেলদোল নেই। সুতরাং যা হওয়ার হল। বোমাটি সশব্দে পড়ল খাটের মাঝখানে। ‘মা, তুমি তো এসেছ পৌলোমী আন্টি হলুদ শাড়িটা কোথা থেকে কিনেছে সেটা জানতে। সেটা জিজ্ঞেস করলেই তো পারো। আমার দেরি হচ্ছে না?’ সাউন্ড অব সাইলেন্স। ‘পৌলোমী, আমি আসি রে।’
আসুন, সেই সন্ধ্যায় মিনি নায়িকার পিঠের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে আমরা পাঁচ মিনিট নীরবতা পালন করি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.